'সুর কি নদীয়া' লতাদিদির দেশভক্তির গান শুনে আজও গরম হয় রক্ত
'সুর কি নদীয়া' লতাদিদির দেশভক্তির গান শুনে আজও গরম হয় রক্ত
সালটা ১৯৪১, পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণগণে আঁচে ঝলসেছে ভারত মায়ের দেহও। একদিকে দেশের এক বীর যোদ্ধা ভারতমুক্তির জন্য ইংরেজের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক দেশকে অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছেন সৈন্য গড়ার পথে। অন্যদিকে, 'হয় করো নয় মরো'বলে গর্জে উঠেছেন দেশের অন্য এক সন্তান। আর এরই মাঝে গানের জগতে পদার্পণ হয় আগামী দিনে দেশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের, যার নাম লতা মঙ্গেশকর। তাই দেশভক্তির উৎসাহ ছিল তাঁর প্রতি শিরায় শিরায়। নিজের কণ্ঠ, সুর, লয় দিয়ে জিনি বুঝিয়েছিলেন দেশ তাঁর মনের কত
গভীরে রয়েছে। পৃথিবীর মঞ্চে যিনি বার বার ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। গান গাওয়ার সময় খালি পায়ে সঙ্গীত সাধনা করে বুঝিয়েছেন তাঁর থেকে বড় সাধিকা হয়ত বা এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আর সেই লতা মঙ্গেশকরের গলায় দেশাত্ববোধক গান শুনে চোখের জল ফেলেছেন ভারতের উচ্চতর নাগরিক থেকে গলির সাধারণ মানুষও।
বন্দে মাতরম
ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র রচিত উপন্যাস 'আনন্দমঠ' অবলম্বনে ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় একই নামে নামাঙ্কিত ছবি 'আনন্দমঠ'। ভারত সবে কয়েক বছর আগেই স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ব্রিটিশ রাজের অত্যাচারের দগদগে ক্ষত দেশের দেহে তখনও টাটকা। আর সেই ছবিতেই লতা
গেয়েছিলেন দেশের 'জাতীয় স্তোত্র' 'বন্দে মাতরম' গানটি। আর সেই গানের দীপ্ততায় ঢেকে গিয়েছিল সকল অত্যাচারের কাহিনী। সেই গান শুনে রক্ত গরম হয়েছে কোটি কোটি ভারতবাসীর। তাঁর আওয়াজ, সুর, ছন্দদিয়ে লতা মঙ্গেশকর বুঝিয়েছিলেন দেশপ্রেমে তিনিও কোনও অংশে কম যান না।
জরা ইয়াদ করো কুরবানি
এমন অনেক কম গান বিশ্ব ইতিহাসে আছে যা শত যুগ পরেও শ্রোতাদের মনে একই ভাবে জনপ্রিয় থাকার অধিকার ও খমতা দুটোই অর্জন করতে সক্ষম। লতা মঙ্গেশকরের গলায় 'অ্যায় মেরে ওয়তন কে লোগো জরা আঁখ মে ভর লো পানি' এরকমই একটি উদাহরণ। দেশ মাতৃকার চরণে লাখ লাখ বীর সন্তান জীবনের বলিদান দিয়েছেন। আর সেই সব শহীদদের কুরবানির কথা মাথায় রেখে রচনা করেন কবি প্রদীপ। আর সেই গানে সুর দিয়েছেন সি রামাচন্দ্র। ১৯৬৩ সালের ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে লতাদিদির গলায় এই গান শুনেকান্না চেপে রাখতে পারেননি স্বয়ং পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু।
মিলে সুর মেরা তুমহারা
সুর কি নদীয়া হর দিশা সে ব্যাহেকে সাগর মে মিলে, মিলে সুর মেরা তুমহারা, তো সুর বনে হামারা। এই গানের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে গোটা দেশের সুর, তাল, ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছু। আর এই গানের সঙ্গে দেশের অন্যতম সুযোগ্য সুরসাধীকা হিসেবে চিরদিনের মত অমরত্ব লাভ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে দূরদর্শনের উদ্যোগে নির্মিত হয় এই গান।
মা তুঝে সালাম
যদিও এই গানটিকে অনেকেই এ আর রহমানের মা তুঝে সালাম গানের সঙ্গে এক করে ফেলেন, কিন্তু স্বয়ং ভারতের সুর সম্রাজ্ঞীর গলাতেও দীপ্ততার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে 'মা তুঝে সালাম' বাণী। ১৯৯৮ সালে কিংবদন্তীর গলায় গাওয়া হয়েছিল 'অ্যাহেসাস থোড়া তো জাগায়ে আব তো জাগায়ে আপনে দিলো মে হাম' গোটা দেশের এমন কোনও নাগরিক নেই যার এই গান শুনে গায়ে কাঁটা দেয়নি। এককথায় বলা জায় যে সুর এবং কণ্ঠ দিয়ে জগত জয় করেছেন লতা মঙ্গেশকর, তিনি নিজে কত বড় মাপের এক দেশভক্ত ছিলেন তা প্রমানিত হয় তাঁর গানের প্রতিটি ভাবের মধ্য দিয়ে।