অচেনা 'ভুবনে' পাড়ি দিলেন 'ভুবন সোম'-এর স্রষ্টা মৃণাল সেন, তাঁর জীবনসফর একনজরে
বাংলা চলচ্চিত্র যে ছায়া-শ্রয়ে ধীরে ধীরে 'জাগরণ'এর পথে এগিয়েছ, তাঁর অন্যতম মহীরুহ মৃণাল সেন।
বাংলা চলচ্চিত্র যে ছায়া-শ্রয়ে ধীরে ধীরে 'জাগরণ'এর পথে এগিয়েছ, তাঁর অন্যতম মহীরুহ মৃণাল সেন। সত্যজিৎ থেকে ঋত্বিক ঘরানায় লালিত এই চলচ্চিত্র জগতের যাত্রাপথ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এই কিংবদন্তী স্রষ্টার অবদানে। 'নীল আকাশের নীচে'-র মৃণাল, ভাবনার রঙে বাংলা চলচ্চিত্রে বিকশিত করেছে নিজের শত পাপড়ি.. 'অবশেষে' 'একদিন অচানক' 'কলকাতা ৭১'-এর স্রষ্টা পাড়ি দিলেন অচেনা 'ভুবনে', রেখে গেলেন 'ভুবন সোম', ' পদাতিক', 'বাইশে শ্রাবণ'এর মতো কালজয়ী ছবি, যা শুধু বাংলা চলচ্চিত্রকেই নয় , গোটা দেশের সামগ্রিক চলচ্চিত্র ভাবনাকে সাহসী রসদ যুগিয়েছে। কেমন ছিল এই স্রষ্টার জীবন সফর.. দেখে নেওয়া যাক।
জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে
সাল ১৯২৩ , দিনটা ১৪ ই জুন, বাংলাদেশের ফরিদপুরে সেদিন জন্ম হয় মৃণাল সেনের। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি পাড়ি দেন কলকাতা।স্কটিশ চার্চ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে শুরু হয় পড়াশোনার পালা।
ছাত্রাবস্থা ও রাজনীতি
মার্কসবাদ তাঁকে ছত্রাবস্থা থেকেই আকর্ষণ করেছে। সমাজতন্ত্র নিয়ে তাঁর যাবতীয় ভাবনাতেই কমিউনিজমের প্রভাব দেখে গিয়েছে বহুবার, কারণ সেই ভাবনারই সফল প্রকাশ তাঁর ছবি। সামাজিক বাস্তবকে পরিচালনার তুলিতে এক অনন্য সাধারণ রঙে রাঙিয়েছেন মৃণাল সেন। সেভাবে সিপিএম-এর সদস্য তিনি না হলেও, বাম-ভাবনা যে তাঁর মননে ছিল তা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
'পরিচালক' মৃণাল সেনের জন্ম
১৯৫৫ সালে 'রাতে ভোরে' ছবির মাধ্যমে পথ তলা শুরু করেন পরিচালক মৃণাল সেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে সেই ফিল্ম তাঁকে সেভাবে সাফল্য এনে না দিলেও 'বাইশে শ্রাবণ' তাঁর পরিচালনা দক্ষতা কে ফুটিয়ে তোলে। এরপর ভারতীয় চলচ্চিত্রের নবজাগরণের ধারাকে উস্কে দিয়ে তিনি উপহার দিয়েছেন 'ভুবন সোম'। তাঁর 'মৃগয়া'র হাত ধরে সাবালক হয়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ফিল্মের ভাবধারা।
'কলকাতা' যখন চরিত্র
'কলকাতা' কে আলাদা করে চরিত্র হিসাবে তুলে ধরে তাঁর মূল্যবোধ, মানুষকে নিয়ে মৃণাল সেন উপহার দিয়েছেন 'কলকাতা ৭১'। তাঁর হাত ধরে এসেছে, 'পদাতিক', 'পুনশ্চ', 'মহাপৃথিবী'।
[আরও পডু়ন: মৃণাল সেনের প্রয়াণ! সৌমিত্র থেকে অপর্ণা, শোকাহত চলচ্চিত্র জগত]
সম্মান প্রাপ্তি
'ভুবন সোম', 'মৃগয়া ', 'আকালের সন্ধানে', 'কলকাতা ৭১', 'একদিন প্রতিদিন', 'খান্ধার' এর হাত ধরে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারের সম্মান.। তেলুগু ছবি 'ওকা উরি কথা'-র জন্যও তিনি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। অন্যদিকে 'কোরাস', 'পরশুরাম', 'আকালের সন্ধানে', 'একদিন অচানক' তাঁকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মান। ভেনিস, কাইরো, থেকে কান ফিল্ম ফেস্টিভালে সম্মানিত হয়েছে এই ছবিগুলি। ১৯৮১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়। ২০০৫ সালে তিনি ভূষিত হন দাদা সাহেব ফালকে সম্মানে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তাঁকে অস্কার অ্যাকাডেমির সদস্যপদে সম্মানিত করা হয়।
[আরও পড়ুন:মৃণাল সেনের প্রয়াণ! শোকাহত রাজনৈতিক জগত, টুইটারে শোক মুখ্যমন্ত্রীর]
প্রয়াণ
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল বাংলার মৃণাল পাড়ি দিয়েছেন অন্য এক ভুবনে। বছর শেষে বাংলার চলচ্চিত্র মহল তথা তাঁর গুণমুগ্ধকে শোকস্তব্দ করে তিনি ছেড়ে গিয়েছেন ইহলোক। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এদিন সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ তিনি প্রয়াত হন তাঁর ভবানীপুরের বাসভবনে।
[আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের জীবনাবসান, শেষকৃত্য ছেলে দেশে ফেরার পর]