জয়পুর থেকে মুম্বইয়ে পাড়ি, অভিনয় জীবনের সফর সহজ ছিল না ইরফানের কাছে
জয়পুর থেকে মুম্বইয়ে পাড়ি, অভিনয় জীবনের সফর সহজ ছিল না ইরফানের কাছে
মঙ্গলবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু বুধবারই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বলিউডের অভিনেতা ইরফান খান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে তাঁর বিদেশে চিকিৎসাও চলছিল। ইরফানের শেষ ছবি 'আংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পাওয়ার পর করোনার কবলে কয়েকদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় এই ছবির প্রদর্শন।
জয়পুরে কেটেছে ছোটবেলা
পুরো নাম সাহাবজাদা ইরফান আলি খান। ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি জন্ম নেন। গোটা ছোটবেলাই তাঁর কেটেছে জয়পুর শহরে। ঘুড়ি ওড়ানো থেকে কিশোর বয়সের প্রেম ইরফানের সব ঘটনার সাক্ষী এই জয়পুর। ইরফানরা চার ভাইবোন ছিলেন। বড় বোনের বিয়ে এই রাজস্থানেই হয়েছে। তিনি ছিলেন মেজ। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর টান ছিল মারাত্মক। ১৯৮৪ সালে তিনি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে স্কলারশিপ অর্জন করেন। ইরফানের অভিনয় জীবনের সফর শুরু হয় জয়পুরের রবীন্দ্র মঞ্চ থেকে। প্রথম নাটক তাঁর এই মঞ্চেই।
সব চরিত্রেই অসাধারণ ইরফান
অভিনয়ের টানেই তিনি পাড়ি দেন মুম্বই। নিরাশ করেনি স্বপ্নের এই শহর তাঁকে। চাণক্য, ভারত এক খোঁজ, সারা জাহান হামারা, বনেগি আপনি বাত, চন্দ্রকান্তা, শ্রীকান্তর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন ইরফান। দুরদর্শনে তিনি একটি নাটক ‘লাল ঘাস পর নীলে ঘোড়ে'-তে ইরফান লেনিনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। দীর্ঘদিন থিয়েটার ও টেলিভিশনে অভিনয় করার পর তিনি নজরে আসেন পরিচালক মীরা নায়ারের। ১৯৯৮ সালে তাঁর হাত ধরেই ‘সালাম বম্বে' সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন ইমরান। তবে সিনেমার এডিটিংয়ে তাঁর চরিত্র বাদ পড়লেও ইরফান খান থেমে থাকলেন না। তবে এরপর বেশ কয়েকটা বছর কেটে যায়। ইরফান বলিউডে মুখ্য চরিত্র করার প্রস্তাব পান ২০০৫ সালে। মুক্তি পায় ‘রোগ'। সমালোচকরা ইরফানের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একজন সমালোচক লিখেছিলেন, ‘শব্দের চেয়ে ইরফানের চোখ বেশি কথা বলে এবং সবসময়ই তিনি ফ্রেমে থাকেন। অভিনেতা হিসাবে তিনি তাঁর দক্ষতা দেখিয়েছেন।' এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ইরফানকে। নেগেটিভ চরিত্র হোক বা হিরো সবতেই অসাধারণ ইরফান। ‘হাসিল' সিনেমার জন্য ইরফানকে শ্রেষ্ঠ ভিলেনের পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁর প্রতিটি অভিনয়ই সমালোচকদের মন জয় করতে সফল হয়। দ্য নেমসেক, মেট্রো, চকোলেট, দ্য কিলার, আজা নাচলে, ক্রেজি ৪, বিল্লু, পিকু, মাদারি, ইনফার্নো, দ্য লাঞ্চ বক্স, হিন্দি মিডিয়াম, ব্ল্যাক মেইল, করিব করিব সিঙ্গল, আংরেজি মিডিয়াম সহ বহু ছবিতে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিনীত ‘পান সিং তোমর' সমালোচকদের নজরে শ্রেষ্ঠ অভিনয় বলে অভিগিত হয়েছে ইরফানের। বলিউডের পাশাপাশি তিনি হলিউড ছবিতেও কাজ করেছেন। অভিনয়ের সুবাদেই তাঁর ঝুলিতে জুটেছিল একগুচ্ছ পুরস্কার। বিয়ে করেন বাঙালি মেয়ে সুতপা শিকদারকে, রয়েছে তাঁদের দুই সন্তানও।
ক্যান্সারের গ্রাসে ইরফান
এশিয়ান পেইন্টস হর ঘর কুছ কহতা হ্যয়-এর একটি পর্বে এসেছিলেন ইরফান। সেখানে তিনি সঞ্চালককে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মায়ের পছন্দ ছিল না ইরফান মুম্বইয়ে থাকুক। কারণ এই শহর তাঁর মায়ের ভাইকে কেড়ে নিয়েছিল। হয়ত অভিনেতার মায়ের কথাটাই ঠিক ছিল। ২০১৮ সালে ইরফানের ধরা পড়ে ক্যান্সার। তার মাঝেই শেষ করেছিলেন ‘হিন্দি মিডিয়াম'-এর সিক্যুয়েল ‘আংরেজি মিডিয়াম'-এর শুটিং। তবে টিমের সঙ্গে ছবির প্রচারে থাকতে পারেননি। কারণ সেই সময় মারণরোগের চিকিৎসায় ইরফানকে চলে যেতে হয়েছিল ব্রিটেনে। গত মাসে লকডাউনের দিন দশেক আগে নির্ধারিত সময়েই মুক্তি পায় তাঁর ছবি। বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয় ছবিটি এবং ইরফানের দুর্দান্ত অভিনয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য তাঁকে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকতে হয়েছিল। ফেরেন ২০১৯ সালে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। তারই মাঝে খবর আসে ইরফানের মায়ের মৃত্যুর। কিন্তু মাকে শেষ দেখা দেখতে পারেননি তিনি কারণ লকডাউন চলছিল। ভিডিও কলেই শেষ বিদায় জানান মাকে। এর কিছুদিন পরই মঙ্গলবার অসুস্থ হয়ে তিনি ভর্তি হন মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে। আর বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বলিউড। প্রত্যেকেই টুইট করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
তোমাকে মিস করব, ইরফানের মৃত্যতে যেভাবে শোক প্রকাশ অমিতাভ বচ্চন থেকে সৃজিতের