কর্কশ গলার কিশোর কুমার কীভাবে হয়ে উঠেছিলেন ভারতের সবচেয়ে সুরেলা কণ্ঠ
ভার্সেটাইল কিংবদন্তী গায়ক কিশোর কুমার। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর মতন রঙীন মানুষ খুব কমই পাওয়া গিয়েছিল। একাধারে গায়ক আবার অভিনয়ও করতেন তিনি। তাঁর কন্ঠে সেই যুগের গান আজও চিরস্মরণীয়। গায়কসত্ত্বার পাশাপাশি গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং রেকর্ড প্রযোজক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক কিশোর কুমারের ৯২ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা কিংবদন্তির জীবনের অজানা তথ্য়।

কর্কশ ও মোটা গলার স্বর
আজ যে কিশোর কুমারের সুরেলা কন্ঠের জাদুতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব, তাঁর গলা মোটেও এত সুন্দর ছিল না। কিশোর কুমার তাঁর অনেক সাক্ষাতকারেই জানিয়েছিলেন যে তিনি প্রথাগতভাবে কোনওদিনই গান শেখেননি। কিশোর কুমারের মৃত্যুর পর পুরনো এক সাক্ষাতকারে কিশোর কুমারের ভাই অশোক কুমার জানিয়েছিলেন যে তাঁর গলা ছিল খুবই কর্কশ ও মোটা। অথচ চোখে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন ভরপুর। নিজের স্বপ্নের আইডল কে.এল.সইগলের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু ছোট্ট কিশোরের জীবনে, মিরাকেল ঘটাতে খুব বেশি সময় নিল না তাঁর ভাগ্য।

কান্নাকাটি করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে ছিলেন
অশোক কুমার জানিয়েছেন, হঠাৎই একদিন খেলার সময় পা কেটে গেলে কিশোর তৈরি করেছিলেন এক হুলুস্থুল পরিবেশ। তারস্বরে কান্নায় বাড়ি উঠল মাথায়। মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় থামল ছোট্ট কিশোরের কান্না। কান্না থামার পাশাপাশি আরও একটি জিনিস উধাও হল। সেই কর্কশ স্বর যেন পলকে চলে গেল। পরিবর্তে গলার স্বর পরিণত হয়েছে এক মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে। সেই থেকেই শুরু কিশোর কুমারের সঙ্গীত জগতের দিকে পথ চলা।

জীবনে তিনজন গুরু
কিশোর কুমারের বায়োগ্রাফি থেকে জানা গিয়েছে গুরু বলে মানতেন তিনজনকে। কে এল সায়গল‚ হলিউডি গায়ক-অভিনেতা ড্যানি কে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর বাড়িতে ঝোলানো ছিল এই তিনজনের বড় বড় ছবি। রোজ সকালে উঠে এই তিনজনকে প্রণাম করতেন কিশোর কুমার।

কিশোর কুমার থেকে সাবধান
উদ্ভট কাজ করায় কিশোর কুমারের জুড়ি মেলা ভার ছিল। ওয়ার্ডেন রোডে তাঁর ফ্ল্যাটের বাইরে বোর্ড ঝোলানো থাকত 'কিশোর কুমারের থেকে সাবধান'। আর এই বাণীকে সত্য প্রমাণিত করতে এক প্রযোজকের হাত কামড়ে দিয়েছিলেন। কিশোর কুমার তাঁর জীবনকে রামধনুর রং দিয়ে রঙীন করে তুলেছিলেন। রেকর্ডিং স্টুডিওতেও তাঁর সহ-শিল্পীদের সঙ্গে নানান ধরনের কীর্তি কলাপ করতেন।

আটবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার
ভারতবর্ষে পুরুষ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড আজও রয়েছে কিশোর কুমারের দখলে। মোট আটবার এই পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। তাঁর গাওয়া গানগুলি হল- 'রূপ তেরা মস্তানা (১৯৬৯)'‚ 'দিল অ্যায়সা কিসি নে মেরা তোরা (১৯৭৫)'‚ 'খাইকে পান বনারসওয়ালা (১৯৭৮)'‚ 'হাজার রাহে মুড়কে দেখি(১৯৮০)'‚'পগ ঘুঙরু বাঁধ (১৯৮২)'‚'অগর তুম না হোতে(১৯৮৩)'‚ 'মঞ্জিলে আপনি জগহ (১৯৮৪ )'‚ 'সাগর কিনারে (১৯৮৫)'।

টাকার বিনিময়ে কাজ পছন্দ ছিল গায়কের
তবে পেশাগত জীবনে তিনি টাকাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। একটাকা কম হলে তিনি সেই সিনেমায় বা শোতে গান করতে চাইতেন না। গোটা ইন্ডাস্ট্রি জানত, কিশোর কুমার টাকার বিনিময়ে কাজ করাটাই বেশি পছন্দ করতেন।