চব্বিশে জুলাই: মহানায়ক তো বটেই, উত্তমকুমার ছিলেন বাঙালি সত্ত্বার এক সম্পূর্ণ প্যাকেজ
ফিরে এল ২৪ জুলাই। এই দিনটিকে আজও আপামর বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমী চোখের জলে মনে করেন কারণ দিনটিতেই ইহলোক ত্যাগ করেন অভিনেতা অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় উত্তমকুমার।
ফিরে এল ২৪ জুলাই। এই দিনটিকে আজও আপামর বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমী চোখের জলে মনে করেন কারণ দিনটিতেই ইহলোক ত্যাগ করেন অভিনেতা অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় উত্তমকুমার। 'ওগো বধূ সুন্দরী' ছবির শুটিং-এর সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৪ বছরেই প্রয়াণ ঘটে এই মহানায়কের। বাংলা ছবির ইতিহাসে সে ছিল এক মোড়-ঘোরানো অধ্যায়। কিন্তু আজও উত্তমকুমারকে চলচ্চিত্র-প্রেমীরা ভোলেনি। যদিও এই নস্টালজিয়া কতদিন বেঁচে থাকবে বলা কঠিন কারণ নবপ্রজন্মের মধ্যে উত্তমের কাজকে বাঁচিয়ে রাখার বিশেষ তাগিদ দেখা যায়নি এখনও।
অভিনয়ের সূক্ষ্ণ দিকগুলি ওস্তাদের মতো ফুটিয়ে তুলতে পারতেন উত্তমকুমার
উত্তমকুমারকে কেন মানুষ এখনও ভুলতে পারে না? তাঁর মৃত্যু যখন হয় তখন ছিল একটা অন্য যুগ। আজকের ইন্টারনেট-স্যাটেলাইটের রমরমার সময়েও উত্তমকুমারকে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা ধরে কেন মানুষ? আজও তাঁর সমকক্ষ কাউকে খুঁজে পেল না কেন বাঙালি?
অভিনয় শৈলীর কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। উত্তমের মতো ক্যামেরার সামনে সাবলীল অভিনেতা ভারতে কমই আছে। সুচিত্রা সেন বা ছবি বিশ্বাসের মতো পর্দা-কাঁপানো তারকাদের সঙ্গে তিনি সমানে সমানে টক্কর দিয়ে অভিনয় করতেন। সুচিত্রার সঙ্গে তাঁর পর্দার রসায়ন তো বিশ্ববন্দিত।
সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক আইকন
কিন্তু অভিনয় ছাড়াও আরও যেই গুণটি উত্তমকুমারকে অমরত্ব দিয়েছিল তা হচ্ছে তাঁর সাংস্কৃতিক আইকনের পরিচয়। এই একটি ব্যাপারে উত্তমকুমার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বা সমসাময়িকদের অনেকটাই পিছনে ফেলে দেন, অবশ্যই ব্যতিক্রমী কয়েকজনকে ছাড়া।
উত্তমকুমার ছিলেন বাঙালি সত্তার এক সম্পূর্ণ 'প্যাকেজ'। তার সময়ে তৈরি হওয়া বাংলা ছবিতে তিনি নিজেকে দারুণভাবে মিশিয়ে ফেলতে পারতেন -- তাঁর ব্যক্তিত্ব, হাসি, উচ্চারণ- তাঁর সম্পূর্ণ ভাবমূর্তিই। সাবেকি বাঙালি দর্শকের কাছে বেশি আবেদন রাখত সহজ জীবন দর্শন এবং যাপন, সরল রোম্যান্টিকতা, শ্রুতিমধুর গান এবং দৃষ্টিমধুর অভিব্যক্তি। এই সমস্ত উপাদান পর্দায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি দুর্দান্ত মাধ্যমের আর সেই কাজটিই উত্তমকুমার করতেন সাবলীলভাবে।
বাজার-অর্থনীতির পূর্ববর্তী সময়ের শিল্পী হয়ে আজও অমর
বাজার-অর্থনীতির আগের যুগের শিল্পী হয়েও আজকের বাজার-প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পীদের কাছে জনপ্রিয়তার দৌড়ে হার মানেননি উত্তমকুমার। আজকে চলচ্চিত্র শিল্প উত্তমকুমারের যুগ থেকে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই -- প্রযুক্তি-আবিষ্কার-এর নিরিখেবাজার-অর্থনীতির পূর্ববর্তী সময়কার শিল্পী হয়েও আজকের বাজার-প্রযুক্তিনির্ভর কলাকুশলীদের কাছে জনপ্রিয়তার দৌড়ে হার মানেননি। আজকের চলচ্চিত্র শিল্প উত্তম কুমারের সময় থেকে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই প্রযুক্তি-আবিষ্কার-এর নিরিখে। আরও কয়েক দশক বেঁচে থাকলে উত্তমকুমারও অমিতাভ বচ্চন বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মতো নতুন যুগকে আলিঙ্গন করতে পারতেন; সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলে খুশিও হতেন। আরও নতুন স্তরে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারতেন। তবে সেই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েও তিনি হারিয়ে যাননি অতীতের ধূসর পাতায়। চব্বিশে জুলাই আজও ফিরে আসে তাঁর স্মৃতিকে জীবন্ত করতে।