
কাজ করেনি হার্ট, ফুসফুস, সামনে এল প্রয়াত গায়ক কেকে-এর পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাইতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই তলোত্তমা থেকে ফিরে গিয়েছে নিথর দেহ। গান স্যালুট এবং লাখ লাখ ভক্তের চোখের জল নিয়ে মুম্বই গিয়েছে তাঁর পার্থিব শরীর। ভারতের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র এহেন শেষ পরিনতি যেন কেউই এখনও ঠিকমত মেনে নিতে পারছে না। মুম্বইতে গায়কের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় পরিবারের উপস্থিতিতে। কেকের আপামর গুণমুগ্ধ শ্রোতারা গানে গানেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রিয় গায়ককে। কিন্তু এরই মধ্যে সামনে এসেছে কলকাতার হাসপাতালে করা কেকের পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

ছিল হার্টের সমস্যা
আচমকাই সকলকে 'অলবিদা' জানিয়ে চিরকালের জন্য সুরলোকে চলে গিয়েছেন এই প্রজন্মের অন্যতম প্রিয় গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে। যেহেতু কলকাতার অভিজাত পাঁচতারা হোটেল থেকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই করতব্যরতচিকিতসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলেন, তাই ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সরকারী হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে সঙ্গীত শিল্পীর। কিন্তু অবশেষে দুইদিন পর সামনে এল কেকের 'ফুল অটোপসি রিপোর্ট'। যেখানে উঠে এসেছে হার্টের সমস্যার মত একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রক্ত পাম্প করেনি হৃদযন্ত্র!
এসএসকেএম হাসপাতালে গত বুধবার তিনজন পোস্টমর্টেম এক্সপার্ট চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করেছেন সঙ্গীত শিল্পী কেকে-র। সেখানে সামনে এসেছে পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। আর তে বলা হয়েছে যে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে পারেনি হৃদযন্ত্র। শুধু তাই নয়, ফুসফুস এরফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারেনি শরীরের প্রতিটি কোনায়। 'মায়ো কার্ডিয়াল ইন্টারপশন'এর কথা প্রথমেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা, আর সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। হার্টের রক্ত পাম্প না করতে পারার কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে যে হার্ট আর্টারির গায়ে জমে ছিল হলদেতে সাদা রঙের পরত, আর যার ফলে হার্ট ব্লকেজ হয়েছিল গায়কের। একধিক জায়গায় মিলেছে এই ব্লকগুলি। আর এর ফলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন গায়ক।

হল ম্যানেজে গাফিলতি
তবে কেকে-র মৃত্যুর পর নজরুল মঞ্চ ও অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের গাফিলতির অভিযোগে তোলপাড় স্যোশাল মিডিয়া সহ একাধিক মহল। তারকা গায়কের এই অকাল মৃত্যুর দায় সরাসরি চাপানো হয়েছে হল কর্তৃপক্ষকে। ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে একাধিক বিষয়। প্রথমত, নজরুল মঞ্চের এসি ঠিকমত না চলায় বদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হলে ২০০০ জনের প্রায় তিনগুন বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয়ত, ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ছড়ানো হয়েছিল অগ্নিনির্বাপক গ্যাস। এবং পরিশেষে অনুষ্ঠান চলা কালীনই কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে। একসময় বন্ধ করতে বলেন স্পট লাইট, এমনকি মিনিট ২০ বন্ধও রেখেছিলেন গান। ঘাম মুছছিলেন ও জল খাচ্ছিলেন বারবার। আর এতসবকিছুর পর অন্তিম ফল সঙ্গীত মহলের চূড়ান্ত ক্ষতি করে দেশ হারাল এক অনন্য সম্পদকে।

কেকে-র অন্তিম সময়
নজরুল মঞ্চে কলকাতার গুরুদাস কলেজের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিলেন প্রজন্মের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পী কেকে। সন্ধে ৭.০৫ নাগাদ গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন তিনি। কিন্তু চলাকালীনই খানিক অসুস্থ বোধ করেন তিনি। তবে শারীরিক অস্বস্তি নিয়েই শেষ করেন অনুষ্ঠান। এরপরে গাড়িতে উঠে হোটেলের দিকে রওনা হন। মঝপথে এসিতে ঠান্ডা লাগছে বলে এসি বন্ধ করে নামিয়ে দেন গাড়ির কাঁচ। হোটেলে ফিরে ফ্যানেরা সেলফি চাইলে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে ছবি তুলে বাকিদের বলেন 'আজ আর ভালো লাগছে না, কাল তুলে দেবো।' এরই পর হোটেলের লবি দিয়ে হেঁটে লিফটে উঠেই মাথা রেখে দেন লিফটের হাতলে। রুমে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়েই পড়ে যান গায়ক। এরপর তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই নিভে যায় প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পীর জীবনদীপ।
দেখে নিন সঙ্গীতশিল্পী কেকের সেরা গানের তালিকা