ক্রমশঃ ফিল্ম ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ক্ষমতা কমছে বলিউডের
ক্রমশঃ ফিল্ম ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম
বহু মাস জল্পনা–কল্পনা ও বেশ কিছু মত বিরোধের পর জুন মাসে অবশেষে বলিউডের বিশাল সিনেমার অধিগ্রহণ করা ডিজনি প্লাস হটস্টারের প্যানেলে যোগ দিলেন অভিনেতা অক্ষয় কুমার। জিজনি ইন্ডিয়ার ভিডিও স্টিমিং প্ল্যাটফর্ম হল ডিজনি প্লাস হটস্টার। করোনা পরিস্থিতির মুখে পড়ে আমূল পরিবর্তন হয়েছে মুম্বইয়ের বলিউডেরও।
খুশি নন অক্ষয় কুমার
৫০০ কোটির বিশাল চুক্তি করা হয় বলিউডের সঙ্গে, যা ডিজনির কল্পনাতীত ছিল। সিনেমা বক্সঅফিসের সঙ্গে যুক্ত অক্ষয় কুমার সহ অজয় দেবগণ ও আলিয়া ভাট এই ওটিটির সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হন এবং এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাঁদের সিনেমাগুলি বিক্রি করবে কয়েক হাজার পর্দার আগমনকারী ক্লাউট। অক্ষয় কুমার বলেন, ‘বলিউড সিনেমার জন্মগত অধিকার প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু মহামারির কারণে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমাদের প্রচুর প্রচুর দর্শকদের বিনোদনের জন্য অনেকটা জায়গা করেদিতে হচ্ছে।' যদিও এই ঘোষণা নিয়ে খুব একটা খুশি নন অক্ষয়। তাঁর কমেডি ও ভয়ের ছবি লক্ষ্মী বোম্বও ডিজিটালে মুক্তি পাবে। ওয়াল্ট ডিজনি সংস্থার সভাপতি ও স্টার ও ডিজনি ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান উদয় শঙ্কর কিছুক্ষণের মধ্যেই অক্ষয়কে পাল্টা জবাব দিয়ে জানান যে দর্শক ছাড়া সিনেমার ওপর কারোর জন্মগত অধিকার নেই। উদয় শঙ্কর বলেন, ‘ভারতের সীমিত পরিমাণ স্ক্রিনের গণনা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও তার দর্শকদের মধ্যে একটি সীমারেখা তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সেই সীমাবন্ধতা নেই। দর্শক যখন খুশি তখন সিনেমাটি উপভোগ করতে পারে।' তিনি বলেন, ‘এটি (ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে ছবিগুলির মুক্তি) বাজার বাড়ানো এবং আরও সিনেমা তৈরি এবং মুক্তির সুযোগ। এটি গভীরভাবে কৌশলগত এবং সবার জন্য সঠিক জিনিস।'
তারকাদের টাকা নেওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে
প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ মহামারি ভারতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিটি দিক, সিনেমা হলে মুক্তি, অভিনেতাদের খেসারত, মার্কেটিং ও এমনকী শুটিংয়ের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। যদিও বলিউডের সবাই এই বিষয়টিকে না মানলেও এটা সত্যি যে গত পাঁচমাসে এই ইন্ডাস্ট্রির শক্তিশালী ক্ষমতা একেবারে ধসে পড়েছে। মার্চের মাঝখান থেকে সিনেমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বক্স অফিস এবং এর বৃহত্তম তারকাদের ‘জন আবেদন' কার্যকরভাবে শূন্যে পরিণত হয়েছে। তবে এতো তাড়াতাড়ি এটা বলা খুব কঠিন যে মহামারির দীর্ঘ-মেয়াদি প্রভাব আর তদিন প্রভাব ফেলবে এবং কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে। তবে ইন্ডাস্ট্রির মুখোমুখি এমন কয়েকটি প্রতিক্রিয়া রয়েছে। প্রথমত, স্টুডিওগুলিতে সীমিত নগদ প্রবাহকে পরিচালনা করা এবং সিনেমা হলে দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে যতটা সম্ভব অর্থ বিনিয়োগ করা, এছাড়াও এ-তালিকাভুক্ত তারকারা যাঁরা ছবির প্রযোজনার ৫০-৬০ শতাংশ অর্থ নিতেন, কখনও কখনও তা ৮০ কোটিতে পৌঁছাতো, তা ২৫ শতাংশ কেটে নিতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস ও প্রচারের ওপর কম ব্যয়
ভিয়াকম ১৮ স্টুডিয়োর মুখ্য পরিচালক আধিকারিক অজিত আন্ধারে বলেন, ‘আমার মনে হয় সকলেই এটা নিয়ে অবগত এবং সচেতন বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে এবং সত্য এটাই যে প্রত্যেকটি একক (প্রযোজনার বাজেট) উপাদান প্রশ্নের মুখে।' তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক-একজনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম জারি করতে পারি নাএবং অভিনেতা ও টেকনিশিয়ান সহ প্রত্যেকেরই যেখানে অবদান রয়েছে। তাই প্রযোজনায় বড় বিনিয়োগের অর্থ হল অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ও প্রচারকে সরিয়ে দেওয়া।'
প্রচার–মার্কেটিংয়ের খরচ কমেছে
বলিউডে যে কোনও ছবির প্রচারের পেছনে মোটা অর্থ, ২৫-৩০ কোটি খরচ করা হয়। যার মধ্যে শহরে শহরে ঘোরা, কলেজ, শপিং মল ও খেলাধূলোর জায়গায় যাওয়া, রিয়্যালিটি শোতে অংশ নেওয়া এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন। শারীরিকভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টির বিকল্প হিসাবে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ওপর এখন জোর দেওয়াই মূল কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রচার ও মার্কেটিংয়ের জন্য ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামই এখন একমাত্র মাধ্যম। যার জন্য মার্কেটিংয়ের বাজেট ২০-৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে।
ভবিষ্যতে ওটিটিতে ছবি পাওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার হবে
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সিনেমা হলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুণ বলিউডকে নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে ওটিটির ওপর। অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, জিফাইভ, ডিজনি, নেটফ্লিক্স সহ বিভিন্ন ওটিটিতে ইতিমধ্যেই বলিউডের বেশ কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছে। হ্যাঁ এটা সত্যি যে এই বিষয়টা বলিউড কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তবে কিছু জিনিস যে ভালোর জন্যই হয় সেটা প্রথমে বুঝতে হবে। সিনেমার কাজ শুরু হওয়ার পরেও বলিউডে সিনেমার থিয়েটার এবং ডিজিটাল প্রিমিয়ারের মধ্যে আট সপ্তাহের ব্যবধানে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। বড় পর্দায় কোনও সিনেমার মুক্তির পর তা তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি ফিল্ম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে পাওয়া খুব শীঘ্রই সাধারণ হতে পারে।
কোন কোন ছবি মুক্তি পাবে
গুলাবো সিতাবো, দিল বেচারা, শকুন্তলা দেবী ইতিমধ্যেই ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে। এ বছর দিওয়ালির সময় মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে অক্ষয় কুমারের সূর্যবংশ ও বড়দিনে রণবীর সিংয়ের ক্রিকেটের ওপর তৈরি সিনেমা ৮৩।