গানের মধ্যে চিরনিদ্রায় কেকে, জিঙ্গেল থেকে বলিউড সফর, গায়কের জীবনী একনজরে
বলিউডের সঙ্গীত জগতে ফের নক্ষত্রপতন। কলকাতায় শো করতে এসে আকস্মিকভাবে প্রয়াত হলেন সঙ্গীত শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ওরফে কেকে। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। মঙ্গলবার কলকাতায় নজরুল মঞ্চে এক কলেজের গানের অনুষ্ঠান ছিল তাঁর। মঞ্চে গান গাওয়ার পরে শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে ফিরে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পড়ে যান হঠাৎই। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের প্রথম সারির এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু তাঁর। তবে আকস্মিক এই মৃত্যুর কারণে কে কে–এর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
দিল্লিতে কেটেছে কেকে-র শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা
১৯৬৮ সালের ২৩ অগাস্ট হিন্দু মালায়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা সবকিছুই ছিল রাজধানী দিল্লির মাটিতে। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় কে কে'র। এরপরে স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে দিল্লির কিরোরিমল কলেজ এবং তারপরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি কোর্স পাশ করেন। তবে ছোটবেলা থেকে তাঁর গানের প্রতি ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত ক্রিকেট দলের সমর্থনে 'জোশ অব ইন্ডিয়া' গানে কণ্ঠ দেন। গানটির ভিডিওতে ক্রিকেট দলের সদস্যদের দেখা যায়।
জিঙ্গেল গেয়েছিলেন কেকে
কিন্তু এতকিছুর পরেও বলিউড সফরটা খুব একটা সুখের হয়নি তাঁর। বলিউডে মেইন স্ট্রিম প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করার আগে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জন্য প্রায় ৩,৫০০টি জিঙ্গেল গেয়েছিলেন কে কে। কে কে কোনওদিনও আনুষ্ঠানিকভাবে গানের তালিম না নিলেও তাঁর কন্ঠস্বরের ম্যাজিক সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। তবে গানকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে দিল্লি ইউনিভার্সিটির কিরোরি মাল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর , কে কে একটি মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেছেন ছ'মাস।
গানের জগতে প্রবেশ
১৯৯৯ সালেই 'সোনি মিউজিক' এর তরফ থেকে একটি মিউজিক অ্যালবামের জন্য খোঁজ করা হচ্ছিল নতুন গলার। সেখানেই অডিশন দেন কেকে। এবং নির্বাচিত হন সেরা নিউকামার হিসেবে। আর সেখানেই রেকর্ড করেন জীবনের অন্যতম সেরা গান। আর সেই অ্যালবাম ছিল 'পল'। আর এরই টাইটেল ট্র্যাক হাম রহে ইয়া না রহে কাল আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গান। কে কে একাধারে হিন্দি, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালাম, মারাঠি, বাংলা, অসমীয়া, গুজরাতি ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা শিল্পী হিসাবে পরিগণিত হতেন তিনি। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে 'দিল ইবাদত' (তুম মিলে), আঁখো মে তেরি (ওম শান্তি ওম), তুনে মারি এন্ট্রি ইয়ার (গুণ্ডা), খুদা জানে (বাঁচনা অ্যায় হাসিনো), ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায় (ওয় লম্হে), আই অ্যাম ইন লাভ (ওয়ান্স আপন আ টাইম মুম্বই) সহ প্রচুর জনপ্রিয় গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
সঙ্গীত জগত স্তব্ধ
কে কে -এর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ কুমার, গায়ক অনুপম রায় সহ অনেকে রয়েছেন। কে কে -এর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। দুই সন্তান ও স্ত্রী বুধবার সকালেই কলকাতায় আসছেন। এরপর কে কে-এর দেহ বিমানে করে মুম্বইতে নিয়ে যাওয়া হবে। সব মিলিয়ে ভারতীয় সঙ্গীতের এক যুগের অবসান হল মঙ্গলবার।