আমার কি এটা প্রাপ্য ছিল? মাদক মামলা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন আরিয়ান খান
আমার কি এটা প্রাপ্য ছিল? মাদক মামলা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন আরিয়ান খান
অবশেষে মাদক কাণ্ড প্রসঙ্গে নীরবতা ভাঙলেন আরিয়ান খান। মুম্বইয়ের বিলাসবহুল ক্রুজে মাদক পার্টি করা এবং সেখানে মাদক সেবন করার অভিযোগে গ্রাফতার হওয়ার পর গোটা দেশ জুড়ে এককথায় বিতর্কের সুনামি আছড়ে পড়েছিল একের পর এক ড্রাগ পাচারকারী গ্রেফতার এবং সেইসঙ্গে বলিউডের বাঘা তারকাদের নাম সামনে এসেছে মাদক সেবনের অভিযোগে। আর সেই তালিকায় শাহরুখ-পুত্রের নাম আসায় রীতিমত সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এমনকি শাহরুখ খানের পিতৃত্ব এবং আরিয়ান খানের প্রাপ্য শিক্ষা সম্পর্কেও বহু নেতিবাচক মন্তব্য এবং কড়া সমালোচনা করা হয়। আএ এই ঘটনা থেকে অবশেষে বেড়িয়ে এসে এবার মাদক প্রসঙ্গে মুখ খুললেন আরিয়ান খান।
মাদক মামলা ও আরিয়ান খান
গত বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের ২রা অক্টোবর মুম্বাই বন্দরে বিলাসবহুল কর্ডেলিয়া ক্রুজে অভিযান চালান নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর আধিকারিকরা। আর সেই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এনসিবি-র তৎকালীন মুম্বই প্রধান অফিসার সমীর ওয়াংখেড়ে। সেখানেই মাদক সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আরিয়ান খান সহ তাঁর আরও ৫জন বন্ধুকে। এর পরেই এনসিবি-র মুম্বই জোনাল ডিরেক্টরেট দ্বারা মামলা প্রস্তুত করা হয়। এবং সেখানে আরিয়ান সহ অন্যান্য সকল অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মামলা কোর্টে ওঠে। এনসিবি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ ড্রাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এমনকি আরিয়ানের সম্পর্ক ছিল একটি আন্তর্জাতিক ড্রাগ সিন্ডিকেটের সঙ্গেও, এমনই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও তুলে ধরেছিলেন এনসিবি কর্তারা।
সমীর ওয়াংখেড়ের ভূমিকা
মূলত এই গোটা ঘটনায় সবথেকে উল্লেখযোগ্য নাম হল নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো বা এনসিবি-র জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়ে। তাঁরই নেতৃত্বে মুম্বইয়ের একের পর এক তাবড় মাদক পাচারকারী এবং মাদক সরবরাহকারীরা এনসিবি-র জালে আসে। শুধুমাত্র তাই নয়, মুম্বই তথা বলিউডের তাবড় বড় মাথারাও যে মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন সেই সকল চাঞ্চল্যকর তথ্যও সকলের সামনে আসে। প্রসঙ্গত, এই গোটা ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২০২০ সালে। বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তাঁর গার্লফ্রেন্ড রিয়া চক্রবর্তী ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি মাদক সেবন ও পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। যার তদন্তে নেমেই অনেকটা 'কেঁচো খুঁড়তে কেউটে' বেড়িয়ে যাওয়ার মতই সামনে আসে একাধিক বলিউড তারকার সঙ্গে মাদক যোগ। আর তারই অঙ্গ হিসেবে ক্রুজে অভিযান চালিয়ে আরিয়ন খানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ২০ দিন জেল হেফাজতে ছিলেন আরিয়ান খান। তারপর তাঁকে জামিন দেওয়া হয়।
আরিয়ন মামলায় সিট গঠন
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বলিউডের 'বাদশা' শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খান এবং অন্যান্য ১৯ জনের বিরুদ্ধে মাদকের দখল ও সেবনের অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল বা সিট গঠন করা হয়েছিল। এবং সিটের নেতৃত্ব এনসিবি কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের নেতৃত্বে এই মামলাটি তদন্ত করছিল। কর্ডেলিয়া ক্রুজ ড্রাগ বাস্টে আরিয়ান খান এবং অন্য পাঁচজনের গ্রেপ্তার হওয়ার এক মাস পরে সিট গঠিত হয়। মূলত এই মামলা হওয়ার পর বেশিকিছু অভিযোগ উঠেছিল সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার জন্য আরিয়ানকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে। আর তারপরেই এই মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য গঠিত হয় সিট। আর সিটের তত্বাবধানে তদন্ত করার পর ২০২২ সালের ২৮ মে মাদক মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন আরিয়ান খান।
'এটাই কি প্রাপ্য ছিল?'
মাদক মামলায় বেকসুর খালাস হওয়ার পর প্রথম এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন আরিয়ান খান। সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরিয়ান বলেন, "আমাকে একজন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী হিসাবে চিত্রিত করে অভিযোগ করা হয়েছিল যে মাদক পাচার করে আমি টাকা রোজগার করি। কিন্তু এই অভিযোগগুলি কি অযৌক্তিক নয়? তারা আমার কাছে কোন মাদক খুঁজে পায়নি। সেই দিন এবং তবুও আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।" সেইসঙ্গে আরিয়ান আরও বলেন যে, "তাঁরা আমার সঙ্গে বড় অন্যায় করেছেন এবং আমার সুনাম নষ্ট করেছেন। কেন আমাকে এত সপ্তাহ জেলে কাটাতে হয়েছিল? আমার কি সত্যি এটা প্রাপ্য ছিল?" প্রসঙ্গত, আরিয়নের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস (এনডিপিএস) আইন, ১৯৮৫-এর অধীনে, ছয় মাস থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারতেন। আরিয়ান খানকে চলতি বছর ২৮ মে মাদক মামলায় ক্লিন চিট দেওয়া হয়।