হাওড়ায় সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার নামে তৈরি হচ্ছে আস্ত একটি প্রেক্ষাগৃহ
কথায় আছে মৃত্যুর পর শিল্পীকে সম্মান দিয়ে কোনও লাভ নেই। আর সেই কথাই বাস্তব রূপ নিল সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার ক্ষেত্রে। জনপ্রিয় গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তীকে সম্মান জানাতে তাঁর জীবদ্দশাতেই হাওড়ার আমতলায় তৈরি করা হচ্ছে নচিকেতার নামে প্রেক্ষাগৃহ। সেখানে থাকছে ৮০০ জনের বসার ব্যবস্থা।
নচিকেতার নামে প্রেক্ষাগৃহ
প্রসঙ্গত, ভূপেন হাজারিকা ছাড়া এ ধরনের সম্মান আর কাউকে দেওয়া হয়নি। নচিকেতা এ বিষয়ে জানিয়েছেন যে তিনি এই সম্মান পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত। একদিকে যেমন তিনি খুশি হয়েছেন তেমনি তাঁর বিষয়টি জানার পর থেকেই লজ্জা লাগছে। তবে নচিকেতা বলেছেন, 'আমার অনুষ্ঠান দিয়ে এই প্রেক্ষাগৃহের সফর শুরু হলে আমার আরও ভালো লাগবে।'
'জীবনমুখী' গান দিয়েই নচিকেতা নিজের দীর্ঘ সফর অতিক্রম করেছেন। 'নীলাঞ্জনা', 'বৃদ্ধাশ্রম', 'অনির্বাণ' সহ প্রচুর জনপ্রিয় গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন তিনি। নচিকেতার লাইভ অনুষ্ঠান মানেই সেখানে শ্রোতাদের ভিড়ে পা রাখা দায়। আজও সেই উন্মাদনা রয়েছে শিল্পীকে নিয়ে।
শিল্পীর নামে চায়ের স্টল
তবে এই প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও দু'টি চায়ের স্টল রয়েছে শিল্পীর নামে। পাটুলির অন্যতম ল্যান্ডমার্ক 'চা ও নচিকেতা'। প্রেক্ষাগৃহের ভাবনা চিন্তার আগে নচিকেতার নামে সাতদিন ধরে মেলাও বসেছে হাওড়ায়। জানা গিয়েছে, গত ১৪ অগাস্ট হাওড়ার আমতায় একটি বেসরকারি নার্সিং হোম ও ফার্মাকোলজি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নচিকেতা। সেখানেই কলেজের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন যে সেখানে নচিকেতার নামে পূর্ণাঙ্গ প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হবে। বিশেষ সূত্রের খবর, গোটা প্রেক্ষাগৃহ সাজানো হবে নচিকেতার ছবি ও তাঁর বিভিন্ন গানের লাইন দিয়ে।
নচিকেতা বিপ্লব এনেছিলেন
নচিকেতা আধুনিক বাংলা গানের জীবনমুখী ধারার এক অগ্রগণ্য শিল্পী। ১৯৯০ দশকের প্রথম ভাগে এই বেশ ভাল আছি অ্যালবাম প্রকাশের পর তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নচিকেতার গানের মধ্যে বাস্তবতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তাই সচেতন শ্রোতা মহলে অনেক জনপ্রিয়। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে নচিকেতার গান এক বিপ্লবের সৃষ্টি করেছিল। তাঁর গানে ফুটে উঠত চরম বাস্তবতা। তাঁর গান অনুপ্রাণিত করেছে সবাইকে।
আত্মজীবনী লিখছেন নচিকেতা
নচিকেতার গানের মতোই জনপ্রিয় তাঁর মেজাজটিও। বহু গানের অনুষ্ঠানেই তাঁকে ছোট ছোট বিষয়ে মাথা গরম করতে দেখা গিয়েছে। তবে আজও তিনি খুবই সাদামাটা জীবন যাপন করেন। হাতে নেই স্মার্টফোন, বরং পুরনো ছোট ফোন দিয়েই নিজের সমস্ত কাজ সারেন। নেই কোনও ই-মেল আইডিও। গানের পাশাপাশি নচিকেতা নিজের আত্মজীবনী শুরু করেছেন, যার নাম 'বিপজ্জনক হারমোনিয়াম'। নিজের ৩০ বছরের সঙ্গীত জীবনে ১০ হাজারের কাছাকাছি তিনি স্টেজ শো করেছেন। গানের সংখ্যা প্রায় আটশো। এরকম মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে খুশি কলেজ কর্তৃপক্ষও।