গোয়ায় এক অসামান্য সম্মানে সম্মানিত হলেন অমিতাভ, তাঁর সেরা ১০টি ছবি যা নস্টালজিক করে দেবে
পরিশ্রম আর প্রবল মানসিক ইচ্ছায় আজ ভারতীয় সিনেমায় জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন অমিতাভ। এহেন অমিতাভ-কে ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অবদানের কথা খেয়াল করে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হল।
কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ থেকে বলিউড। এই যাত্রাপথকে রূপকথার মতো লাগতেই পারে। কিন্তু, এই রাস্তা পার হওয়া যে চাট্টিখানি কথা ছিল না তা বারবার বিভিন্ন সময়েই ব্যক্ত করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। খর্বাকৃতির চেহারার সঙ্গে টিঙটিঙে লম্বা লোকটাকে বলিউডে সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ফিল্মিওয়ালাই খুব একটা রাজি ছিল না। কলকাতায় চাকরির ফাঁকে ফাঁকে থিয়েটারে চলত অভিনয়ের প্রশিক্ষণ।
শুধু অমিতাভ নিজে নন সে সময় কলকাতায় তাঁর সঙ্গে চাকরির করা বহু সহকর্মীও সেই প্রচণ্ড পরিশ্রমের গল্প বারবারই সামনে এনেছেন। এই পরিশ্রম আর প্রবল মানসিক ইচ্ছায় আজ ভারতীয় সিনেমায় জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন অমিতাভ। এহেন অমিতাভ-কে ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অবদানের কথা খেয়াল করে গোয়ায়া আটচল্লিশ তম ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শেষদিনে 'ইন্ডিয়ান ফিল্ম পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ারে সম্মানে' ভূষিত করা হল। অমিতাভের এই সম্মান প্রাপ্তির দিনে আপনাদের জন্য থাকল তাঁর অভিনীত ১০টি সেরা সিনেমা। এই ছবির তালিকা বিগ-বি খোদ নিজেই তৈরি করে দিয়েছিলেন।
অগ্নিপথ
১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ছিল বিগ বি-র কেরিয়ারে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সে সময় অমিতাভ আস্তে আস্তে সিনেমাকে বিদায় জানানোর দিকে এগোচ্ছিলেন। ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছিল এক কিশোরের প্রতিশোধ স্পৃহায় গ্যাংস্টার হয়ে ওঠা নিয়ে। এই ছবিতে অমিতাভের সঙ্গে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীও। এই সময় অমিতাভ ও মিঠুন-কে ভক্তদের মধ্যে দ্বৈরথ ছিল চরমে। তাই অমিতাভ ও মিঠুন একসঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন।
দিওয়ার
অমিতাভের কেরিয়ারে একদম প্রথম দিকের ছবি। বলতে গেলে এই ছবির পর ফিল্মি কেরিয়ারে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি অমিতাভকে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি আজও সিনেমাপ্রেমীদের টানে।
ব্ল্যাক
২০০৩ সালে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই ছবিটি করেন অমিতাভ। অন্ধ মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রানি। আর তাঁর শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন অমিতাভ। তিনি-ও ছাত্রী রানির মতো চোখে দেখতে পেতেন না। সঞ্জয়লিলা বনশালী পরিচালিত এই ছবিটি আজও বিগ বি-র কেরিয়ারের অন্য়তম সেরা ছবি।
শরাবি
১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। কোটিপতির ছেলের মদ্যপ পুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। অমিতাভের বিপরীতে ছিলেন জয়াপ্রদা। ছবির গান আজও সমান জনপ্রিয়।
বাগবান
কী ভাবে বৃদ্ধ বাবা-মা-কে অবহেলিত করে ছেলেরা। এই নিয়ে বাগবান-এর গল্প। ছেলেদের কর্তব্যহীনতায় একদিন এই বাবা-মা-কে আলাদা হয়ে যেতে হয়। অথচ, তাঁদের বৃদ্ধ বয়সের আগে পর্যন্ত কোনও দিন একে অপরকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারতেন না। ছেলেদের দেওয়া বিচ্ছেদের শৃঙ্খল কেটে কী ভাবে সেই বাবা-মা ফের মিলিত হলেন এই গল্প পরতে পরতে দানা বেঁধেছে। এই বৃদ্ধ বাবা-মা-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ ও হেমামালিনী। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় ছবিটি।
শোলে
ভারতীয় সিনেমার এক অসামান্য সফল এক্সপেরিমেন্ট। যে জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটা কাল্ট-সিনেমায় পরিণত হয়েছে শোলে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি অমিতাভের ফিল্মি কেরিয়ারকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে যায়। অথচ, এই ছবিটি-র যখন শ্যুটিং শুরু হয়েছিল তখন অমিতাভ সেভাবেই বলিউডে পরিচিত স্টার হিসাবে গণ্য-ই হতেন না।
ডন
১৯৭৮ সালে মুক্তি এই ছবি অমিতাভের কেরিয়ারের আরও এক মাইলস্টোন। 'ডন কো পাকাড়না মুশকিল-ই নাহি না মুনকিন হ্যায়' এই ডায়লগ আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। এই ছবিতে অমিতাভ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। একদিকে ভিলেন, অন্যদিকে নায়ক। একই সঙ্গে দুই চরিত্রকে অভূতপূর্ব অভিনয় দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অমিতাভ।
নমক হালাল
১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ছিল জমজমাট অ্যাকশন আর নাচ ও গানে ভরপুর এক মশালা ছবি। যাকে অসাধারণ দক্ষতায় সামলিয়েছিলেন বিগ বি। অমিতাভের কৌতুক করার দক্ষতা এই সিনেমা সকলের নজর টানে।
অভিমান
১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি যেন ছিল অমিতাভ ও জয়া ভাদুড়ীর বাস্তব জীবনে সংসার শুরু করার কাহিনি। ছবিটির গান এবং অমিতাভ ও জয়া-র অভিনয় বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়।
জঞ্জির
এই সেই ছবি যা অমিতাভ প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল বলিউডে। এর আগে যতগুলি ছবি করেছিলেন সবকটি চূড়ান্তভাবে ফ্লপ হয়েছিল। এই ছবিটি ছিল অমিতাভের ফিল্মি কেরিয়ার বাঁচানোর ডু অর ডাই ম্যাচ। যা-তে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অমিতাভ। তৈরি করেছিলেন তাঁর নিজস্ব এক আইডেন্টিটি 'অ্যাংরি ইয়ংম্য়ান'। ছবিটিতে অমিতাভের বিপরীতে ছিলেন জয়া ভাদুড়ি।