পঞ্চাশে পা: শুধুমাত্র রোমান্টিক হিরো নন শাহরুখ, তার কারণ একাধিক!
জীবনের ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকিয়েই নিলেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান। বয়সের গণ্ডি পঞ্চাশ ছুঁলেও জনপ্রিয়তায় কিন্তু ছিঁটেফোঁটা খামতি নেই। আজও সমানভাবেই বলিউউডের কিং শাহরুখ। কিন্তু এই অসামান্য জনপ্রিয়তার পিছনের আসল রহস্যটা কী? [(ছবি) কোহলি, শাহরুখ, রণবীরদের নিয়ে অজানা তথ্য ফাঁস অনুষ্কার]
দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে থেকে দিল তো পাগল হ্যায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, কভি খুশি কভি গম, কভি আলভিদা না কহনা, বীর জরা, যবতক হ্যায় জান, অধিকাংশ ছবিতেই তাঁকে এক "রোম্যান্টিক লাভার বয়" চরিত্রে দেখা গিয়েছে। কখনও রাজ কখনও রাহুল এই অনস্ক্রিন নাম নিয়েই পর্দায় নিজের ক্যারিশমা ছড়িয়েছেন শাহরুখ, যা আদতে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফকে একধাক্কায় উর্ধ্বগামীও করেছে। [ঐশ্বর্য, কাজল, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কিং খানের অদেখা কিছু ছবি!]
কিন্তু যদিও দর্শকমনে শাহরুখের প্রতিফলন রোমান্টিক হিরো হিসাবেই বেশি পড়ছে তবু, শাহরুখ কিন্তু কখনও নিজের বহুমুখী অভিনয় দক্ষতা প্রমাণে ফেল করেননি। এবং বারবার তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধুমাত্র দুহাত তুলে নায়িকার দিকে প্রেম প্রেম চোখে তাকানো আদর্শ প্রেমিক মার্কা নায়কের চেয়ে অনেক বেশিকিছু। [(ছবি) পাপারাৎজীদের ক্যামেরায় গোপনে তোলা অদেখা শাহরুখ]
আজ, ২ নভেম্বর নিজের ৫০ তম জন্মদিন পালন করছেন শাহরুখ। রোমান্টিক হিরোর বাইরেও নানা ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সবাই জানেন বলিউডে শাহরুখের জনপ্রিয়তার শুরু কিন্তু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করে। সেখান থেকে নিজের ইমেজ এভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়েও জনপ্রিয়তাকে ধরে রেখে একেবারে বলিউডের বেতাজ বাদশাহ হয়ে যাওয়া তা তো আর চারটি খানি কথা নয়। [(ছবি) এই 'বাপ-বেটা' জুটিদের পর্দায় দেখার অপেক্ষায়] বলিউড
আজ শাহরুখ খানের ৫০ তম জন্মদিনে আমরা শাহরুখকের সেই নিয়ম মাফিক চলা মিথকে বারবার চ্যালেঞ্জ করার জন্য সেলাম জানাচ্ছি। রোমান্টিক লাভারের বাইরেও তিনি কী করে দেখিয়েছেন আসুন একঝলকে দেখে নেওয়া যাক। [ (ছবি) বলিউড অভিনেতাদের সেরা ১০ অনস্ক্রিনমহিলা অবতার]
বাজিগর (১৯৯৩)
সবাই জানেন বলিউডে শাহরুখের জনপ্রিয়তার শুরু কিন্তু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করে। তার প্রথম মাইলফলকই হচ্ছে বাজিগর। এই ছবিতে প্রতিহিংসাপরায়ণ এক ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ, যার বাবার খুন ও মায়ের প্রতি অত্যাচারের বদলা নেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য। আর তার জন্য বাবার খুনীর বড়মেয়ের সঙ্গে প্রেমের নাটক, পরে তাকে নৃশংসভাবে খুন করা। তারপর তাঁরই বোনের সঙ্গে ফের প্রেমের নাটক করা। সত্যিটা গোপন রাখতে একের পর এক খুন করা। এতকিছুর পরেও ছবির শেষে সমস্ত দর্শকের সহমর্মিতা পাওয়া, মোটেই চারটিখানি কথা নয়।
ডর (১৯৯৩)
কি..কি..কি..কি..কিরণ....! শাহরুখের মুখের এই সংলাপ তো একেবারে সুপারহিট। আজও লোকের মুখে মুখে ঘোরে। এই ছবিতেও নেগেটিভ চরিত্রেই অভিনয় করেছেন শাহরুখ। কিন্তু তবুও ছবির নায়ক সানি দেওয়লকে একেবারে বাজিমাত দিয়ে দিয়েছেন।
আনজাম (১৯৯৪)
মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে এই ছবিতেও নেগেটিভ চরিত্রেই অভিনয় করেছেন কিং খান। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা খলনায়ক হিসাবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছেন শাহরুখ খান।
অশোকা (২০০১)
এই ছবিটি পুরো দেখে শেষ করার জন্য আপনাকে শাহরুখ খানের ডাই হার্ট ফ্যান হতেই হবে। কিং খানের কেরিয়ারের এছবি কোনও মাইলফলক নয়, বক্সঅফিসেও কোনও ম্যাজিক দেখায়নি, কিন্তু এই ছবিটির উল্লেখ আমরা এখানে করলাম কারণ এই ছবিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত শাহরুখের জন্য অবশ্যই একটা বড় ঝুঁকি ছিল, এবং তিনি সেটা নিয়েওছিলেন। আর কিংবদন্তী রাজা অশোকের চরিত্রে অভিনয় করাটা অবশ্যই তাঁর রোমান্টিক হিরো ইমেজের থেকে অনেকটাই আলাদা তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।
স্বদেশ (২০০৪)
এই ছবিতে অভিনয় করে শাহরুখ নিজের সমালোকদের মুখ বন্ধ করাতে সমর্থ হয়েছিলেন, যাঁরা বলতেন শাহরুখ খান একজন জনপ্রিয়তা তারকা বটে তবে ভাল অভিনেতা কখনওই নয়। এই ছবির শুরুতে একেবারে তথাকথিত শহুরে শিক্ষিত ব্যক্তির চরিত্রে দেখা গিয়েছে শাহরুখকে, যে গ্রামের সম্পর্কে কিছুই জানেও না বোঝেও না। কিন্তু কীভাবে সেই শহুরে মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে মাটির সঙ্গে আঁকড়ে থাকার গর্বে পরিণত হল তা অসাধারণভাবে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন শাহরুখ।
চাক দে ইন্ডিয়া (২০০৭)
স্বদেশ ছবি দেখার পরেও যাঁদের শাহরুখের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে মনের কোনও না কোনও খানে ছোট্ট হলেও কোনও প্রশ্নচিহ্ন রয়েগিয়েছিল, এই ছবির পর তাদের সে প্রশ্নেও দাঁড়ি পড়েছে। এই ছবিতে সেভাবে তারকা চমক, গ্ল্যামার, কিছুই নেই। কিন্তু শুধু ছবির গল্প ও "খান পাওয়ার"এ এই ছবি দৌঁড়েছে।
মাই নেম ইজ খান (২০১০)
এই ছবিটি লাভস্টোরি বটে, তবে তথাকথিত নায়িকার চোখে চোখ রেখে হাত হাত ধরে বনে বাদারে গান গেয়ে বেড়ানো প্রেমের ছবি নয়। এই ছবিতে শাহরুখ অ্যাসপারজের সিন্ড্রোমে আক্রান্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে পৃথিবীকে বাকিদের থেকে অনেক সরল করে দেখে। চেঁচামিচিতে ভয় পেয়ে যায়, কারোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস নেই তাঁর, কিন্তু সত্যিটা বলতে কখনও পিছপা হয় না। এই ছবিতে নিজের অভিনয় দিয়ে শাহরুখ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এমনি এমনি বলিউডের বাদশা হননি।
ডন (২০০৬) এবং ডন ২ (২০১১)
যখন প্রথম শোনা যায়, ১৯৭৮ সালের অমিতাভ বচ্চন অভিনীত সুপারডুপার হিট ছবি ডন-এর রিমেকে অমিতাভের অভিনীত চরিত্রে দেখা যাবে কিং খানকে, তখন তাঁর সামর্থ নিয়ে একাধিক জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছিল। অমিতাভের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছিলেন শাহরুখ। অন্য কেউ হলে শাহেনশার এই শক্ত চ্যালেঞ্জ হাতে নেওয়ার কথাই কেউ ভাবতেন না। কিন্তু শাহরুখ পেরেছন, আর তাই তো তিনি বাদশা, শাহেনশার চেয়ে কোনও অংশে কম নন।
রইস (২০১৬)
এখনও স্পষ্ট না হলেও শোনা যাচ্ছে গুজরাটের আশির দশকের ডন আব্দুল লতিফের অনুকরণেই তৈরি হয়েছে শাহরুখ অভিনীত মিঞাঁভা-র চরিত্রটি। এই চরিত্রটি নেগেটিভ হলেও একাধিক পরত রয়েছে।
ফ্যান (২০১৬)
এই ছবিতে নিজের বাস্তব চরিত্রে অভিনয় করছেন শাহরুখ এবং কার সবচেয়ে বড় ভক্ত বা ফ্যানের চরিত্রেও অভিনয় করছেন শাহরুখই। এই ছবিটি যে অন্যরকম হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অন্যভাবে শাহরুখকে দেখা যাবে তাতেও কোনও দ্বিমত নেই। তাই এখন শুধুই অপেক্ষা।