কংগ্রেস ছাড়া গতি নেই বুঝে গিয়েছেন মমতা? তাই কি তড়িঘড়ি দূত হলেন পাওয়ার
কংগ্রেস ছাড়া গতি নেই বুঝে গিয়েছেন মমতা? তাই কি তড়িঘড়ি দূত হলেন পাওয়ার
ত্রিপুরার পর অনেক আশ নিয়ে গোয়ায় পা রেখেছিল তৃণমূল। অভিষেককে সেনাপতি করে গোয়া দখলের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস ভেঙে ভিত তৈরি করতে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু এত স্বল্প সময়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের ভেঙে বিজেপির প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হতে পারেনি তৃণমূল। তার ফলেই শেষে কংগ্রেস শরণে আসতে চাইছেন মমতা, এমনটাই মনে করছেন রাজৈনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ফের কংগ্রেসমুখী হচ্ছে গোয়া, বুঝেছে তৃণমূলও
গোয়ায় ইতিমধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় ভোট। গোয়ার ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই তৃণমূলের সাফল্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে। বরং কংগ্রেস আবার জেগে উঠছে সৈকত-রাজ্যে। বিজেপিকে হারাতে যে কংগ্রেস ছাড়া গতি নেই, সেই ভাবনা বিরোধীদের মনে বদ্ধমূল হতে শুরু করেছে। তার ফলে ফের কংগ্রেসমুখী হচ্ছে গোয়া।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোটই টিকিয়ে রাখতে পারে তৃণমূলকে!
তৃণমূল যে পথে হাঁটছে, তাতে বিজেপিরই যে সাহায্য হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তা যেমন গোয়ার মানুষ বুঝেছেন, তেমনই বুঝেছে তৃণমূলও। গোয়ায় তারা সাফল্যের দেখা পাবে না। একমাত্র কংগ্রেসের সঙ্গে জোটই তাদের টিকিয়ে রাখতে পারে। নতুবা ২০১১-র মতো তৃণমূল ফুঁকে উড়ে যাবে। আবার গোয়ায় সংগঠন বিস্তারে ধাক্কা খাবে তৃণমূল।
সোনিয়া ও রাহুলের কাছে তৃণমূলের হয়ে দৌত্য পাওয়ারের!
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট সমন্বয় তৈরি করতে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের দৌত্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবনার অবকাশ দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তা খুলতে চাইছেন, তা প্রকট হয়ে উঠেছে। শারদ পাওয়ারের মাধ্যমে তিনি সোনিয়া ও রাহুলের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে চাইছেন।
কংগ্রেসকে ছাড়া জোটের প্রস্তাব খারিজ শিবসেনারও
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে ভেঙে গোয়ার মাটিতে পথ চলা শুরু করেছেন। ভেঙেছেন এনসিপিকেও। তার আগে তিনি শারদ পাওয়ারের কাছে গিয়ে কংগ্রেসকে ছাড়া জোটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাব দিয়েছিলেন শিবসেনাকেও। কিন্তু শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছিলেন মমতার প্রস্তাব।
গোয়ার রাজনীতিতে টিকে থাকতে নয়া পন্থা তৃণমূলের
তবে এখন শারদ পাওয়ারের মাধ্যমে তৃণমূল আবার কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করতে চাইছে। অন্তত শার পাওয়ারের দৌত্যের পর এ কথা ফলাও করে বলতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তৃণমূল ভবিষ্যৎ ভেবেই এই পথ নিতে চাইছে বলে মনে করছেন তাঁরা। কেননা বর্তমান যে আভাস, তাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে তৃণমূল গোয়ার রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে। নতুবা ২০১১-র পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
বিজেপিকে ভোট কাটাকাটির সুবিধা দিতে চায় না বিরোধীরা
গোয়ায় বিজেপির একমাত্র ভরসা বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন। বিরোধীরা এক হলে বিজেপির সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন সংস্থার জনমত সমীক্ষায় আভাস বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে তৃণমূল যদি এককভাবে লড়ে। অর্থায তৃণমূল যদি কংগ্রেসের সঙ্গে না যায়, তবেই বিজেপি ভোট কাটাকাটির সুবিধা নিয়ে ফায়দা লুটে নেবে। অন্যথায় বিজেপির হারের সম্ভাবনা প্রকট।
হাইকম্যান্ড জোটে রাজি থাকলেও গোয়ার নেতৃত্ব কি মানবে
এখন দেখার তৃণমূলের প্রস্তাবে কংগ্রেস সাড়া দেয় কি না। শারদ পাওয়ারকে কাজে লাগিয়ে সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীকে জোটে রাজি করানো যায় কি না। ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের শী্রষ নেতৃত্বকে নিয়ে এই মর্মে একটি বৈঠক করেছেন। ২০২৪-র কথা ভেবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড জোটে রাজি থাকলেও গোয়ার নেতৃত্ব তা মানবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
হালে পানি না পেয়ে কংগ্রেসের শরণাপন্ন হচ্ছে তৃণমূল
রাহুল গান্ধী গোয়ার নেতৃত্বকে দিল্লিতে তলব করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। গোয়ার কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলকে তাদের জোটে নিতে রাজি নয়। কারণ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভেঙে গোয়ায় বড় উঠতে চেয়েছিল। বিজেপির সুবিধা করতে এসেছিল ওরা। কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ার কাজে বিজেপিকে সহায়তা করতেই তৃণমূল এসেছিল। এখন হালে পানি না পেয়ে কংগ্রেসের শরণাপন্ন হচ্ছে তৃণমূল।
শারদ পাওয়ারের দৌত্যের উপর নির্ভর করেছে তৃণমূল
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রথম তোপ দাগতে শুরু করেছিলেন। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই পন্থা অবলম্বন করে কংগ্রেসকে নিশানা করেন। এমনকী তিনি দিল্লি সফরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে আসেন। তখন তাঁরা মনে করেছিলেন বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসকে ভেঙে নিজেদের পথ প্রশস্ত করতে পারবেন। কিন্তু তা না হওয়ায় এখন বিপাকে পড়ে সরাসরি কংগ্রেসের কাছে যেতে পারছেন না। তাই শারদ পাওয়ারের দৌত্যের উপর নির্ভর করেছেন।
মহারাষ্ট্রের মতো গোয়াতেও কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট
মঙ্গলবার শারদ পাওয়ার বলেন আসন্ন গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে চলার জন্য কংগ্রেস ও তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আমাদের পছন্দের আসনের তালিকা দিয়েছি। কয়েকদিনের মদ্যেই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। গোয়ার মানুষ বিজেপির শাসনে অতীষ্ঠ, তারা এবার বদল চায়। সেই বদবল দিতে আমাদের একজোট হয়ে লড়ার দরকার। উল্লেখ্য, শিবসেনা কয়েকদিন আগেই জানিয়ছিল মহারাষ্ট্রের মতো গোয়াতেও তারা কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটে আগ্রহী।
তৃণমূল চাইছে শারদ পাওয়ারের হাত ধরে কংগ্রেসের জোটে ঢুকতে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিজেপির পক্ষে এবার গোয়াতে সরকার গঠন করা খুবই কঠিন। কংগ্রেস জোট সরকার হওয়ার সম্ভাবনা এবার প্রবল। সেই কারণেই তৃণমূলে যাওয়া নেতারা যেমন ঘরে ফিরছেন, বিজেপি ছেড়েও মন্ত্রী-বিধায়করা ফিরছেন কংগ্রেসে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইতিমধ্যেই চার বিজেপি বিধায়ক-মন্ত্রী দল ছেড়েছেন। আরও কয়েকজন বিজেপি ছাড়বেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করারও চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল বা অন্যান্য বিরোধীরা। তৃণমূল চাইছে শারদ পাওয়ারের হাত ধরে কংগ্রেসের জোটে ঢুকতে। এখন দেখার আগামী দিনে কোনদিকে গড়ায় জল।