মমতার জাতীয় রাজনীতিতে উচ্চাশাপূরণ কোন পথে! কার্যকর হচ্ছে কি ‘প্রশান্ত’-পরিকল্পনা
মমতার জাতীয় রাজনীতিতে উচ্চাশাপূরণ কোন পথে! কার্যকর হচ্ছে কি ‘প্রশান্ত’-পরিকল্পনা
একুশের নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে উত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্ত সেই পরিকল্পনা কি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে? ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে দিয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে উত্থানের পরিকল্পনা কষলেও তার বাস্তবায়ন অথৈ সমুদ্রে। কারণ জাতীয় রাজনীতিতে এখনও কোনও জোটসঙ্গীকে খুঁজে পায়নি তৃণমূল।
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব আদায়ে গোয়ায় চোখ মমতার
২০২১-এ বিজেপিকে পর্যুদস্ত করার পর ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদী-বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিনরাজ্যে সংগঠন বিস্তারে নেমে পড়ে তৃণমূল। ত্রিপুরার পর গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে এখন পাখির চোখ করেছে তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব আদায়ে গোয়ার নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
গোয়া নির্বাচন জিততে মাস্টার-প্ল্যানের প্রয়োগ মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় প্রথম নির্বাচনী জনসভা করতে চলেছেন বিগত ১০ বছরে। প্রথমে কংগ্রেস ভেঙে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পর গোয়া নির্বাচন জিততে মাস্টার-প্ল্যানের প্রয়োগ ঘটানো শুরু করেছেন। ঘোষণা করেছেন গৃহলক্ষ্মী প্রকল্প। গোয়ায় তৃণমূল সরকার গড়লে প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা করে পাবেন বাড়ির কর্ত্রীরা। বাংলার ১০ গুণ টাকার টোপ দিয়ে গোয়ায় বাজিমাত করার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল।
গোয়ায় ব্যর্থ হলে জাতীয় রাজনীতিতে ধাক্কা খাবেন মমতা
বাংলার নির্বাচনে জয়ের পর সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল ত্রিপুরাকে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হননি। ত্রিপুরা পুরনির্বাচনে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল। ত্রিপুরায় ধাক্কা খাওয়ার পর মমতা ঝাঁপিয়েছেন গোয়ায়। গোয়ায় একটা ছাপ রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি। তা না হলে জাতীয় রাজনীতিতে ধাক্কা খেতে হবে তাঁকে।
মমতার যাবতীয় পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে গোয়ায় হারলে
গোয়ার আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছে। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো নয়, তিনি তাই কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন না। তিনি নিজের দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে চাইছেন। দাঁড় করাতে চাইছেন ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের জন্য আওয়াজ তোলার জন্য। কিন্তু গোয়ায় ব্যর্থ হলে মমতার যাবতীয় পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মমতার বিকল্পের প্রস্তাব কার্যত খারিজ
কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে শিবসেনা এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপির সঙ্গে দেখা করতে মুম্বই গিয়েছিলেন। সেখানে ভারতের সবথেকে বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সে অর্থে আশার আলো দেখতে পাননি। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিকল্প বিরোধী গড়ে তোলার প্রস্তাব কার্যত খারিজ হয়ে গিয়েছে। শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত তো সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশাহত করে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার জন্য রাহুলের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
মমতার পরিকল্পনার দোসর হবে না শিবসেনা-এনসিপি
শিবসেনা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেসকে অন্তর্ভুক্ত না করে কোনও বহুদলীয় জোট হতে পারে না। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে শিবসেনা মুখপাত্র কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেন। এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার শক্তিশালী বিরোধী জোট গড়ার বার্তা দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনার দোসর হওয়ার কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি।
'এনিওয়ান বাট কংগ্রেস নট'-এর পরিকল্পনা মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'এনিওয়ান বাট কংগ্রেস নট'-এর পরিকল্পনা নিয়েছেন। তাঁর এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা খুব সহজ নয়। কংগ্রেস জাতীয় দল। তাদের প্যান ইন্ডিয়া ট্যাগ রয়েছে। তাদের প্রতি বিশ্বাস অনেক বেশি আঞ্চলিক দলের। কিন্তু একদিনে সেই বিশ্বাস টলানো সম্ভব নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধুরাও একে একে সরে যাচ্ছেন তাঁর পাশ থেকে।
মোদী প্রাদেশিক রাজনীতি থেকে উত্থানের তুলনায় মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার উচ্চাশা পোষণ করেছেন। তিনি চাইছেন নিজেকে নরেন্দ্র মোদীর পর্যায়ে নিয়ে যেতে। মোদী যেমন প্রাদেশিক রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন, তেমনই ঘটাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু মনে রাখতে হবে মোদী ছিলেন বিজেপির মতো সঙ্ঘবদ্ধ একটা দলের প্রতিনিধি।
কংগ্রেসকে অপছন্দ! কিন্তু অন্যরা সেই বিদ্বেষের ভাগ নেবে না
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদতে একজন প্রাদেশিক রাজনীতিবিদ। নিজের রাজ্যে তিনি নিজেকে রানির পর্যায়ে তুলে ধরেছেন। রানির মতো কাজ করছেন, তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে যদি তিনি নিজেকে সর্বোচ্চ নেত্রী ভাবতে থাকেন, তাহলে সেই মান্যতা অন্য আঞ্চলিক দলের কাছে বা জাতীয় রাজনীতিতে পাবেন না। তিনি কংগ্রেসকে অপছন্দ করতে পারেন, কিন্তু অন্যরা তার বিদ্বেষ ভাগ করে নেবে না।
মমতার সারা দেশে নাম বাংলার সফল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে
কংগ্রেসের সঙ্গে দেশব্যাপী ২৫০ আসনে সরাসরি লড়াই বিজেপির। তারপর দেশে বিজেপির পর কংগ্রেসেরই সবথেকে বেশি ভোট রয়েছে। কংগ্রেসের প্যান ইন্ডিয়া ট্যাগের জন্য সারা দেশে রাহুল গান্ধী পরিচিত নাম। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারা দেশে নাম বাংলার সফল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই। জাতীয় নেত্রী হিসেবে তাঁর পরিচিতি পাওয়া এখনও দূরস্ত।
মমতার উচ্চাশা ক্রমেই ব্যর্থতার সরণিতে প্রবেশ করছে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কংগ্রেস বিরোধী হয়ে উঠছেন জাতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে, তখন তলে তলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ আরও সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। মমতার বন্ধুরা আদতে কংগ্রেসের জোটসঙ্গীই। তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকবেন। এখন মমতার কংগ্রেস বিরোধিতা বিজেপি-বিচ্ছিন্নদেরও ইউপিএ-র দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিবসেনা কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট চাইছে বিজেপিকে হারাতে। শামিল হচ্ছে ইউপিএ-তেও। ফলে মমতার উচ্চাশা ক্রমেই ব্যর্থতার সরণিতে প্রবেশ করছে।