বিরোধী ঐক্য গড়তে ছুটেছিলেন সোনিয়া-রাহুলের দ্বারে, তাহলে এখন কেন বেসুরো মমতা
বিরোধী ঐক্য গড়তে ছুটেছিলেন সোনিয়া-রাহুলের দ্বারে, তাহলে এখন কেন বেসুরো মমতা
একুশের নির্বাচন চলাকালীন বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট মিটতেই তিনি সোনিয়া-রাহুলের দ্বারে ছুটেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সোনিয়া-রাহুলরা বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে কালবিলম্ব করেছেন। তাই নিজের পথ নিজেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেসের অভিযোগের এমনই জবাব দিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল কংগ্রসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া বিজেপির!
সম্প্রতি কংগ্রেসের ঐক্যের হাত দূরে সরিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, এই কংগ্রেস বিজেপির মোকাবিলায় ব্যর্থ। তাই তৃণমূলই হয়ে উঠবে বিজেপির বিকল্প। যদিও কংগ্রেস মনে করছে, তৃণমূল কংগ্রসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া হয়েছে বিজেপির। নইলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি-তলবের পরই কেন বদলে গেল তৃণমূল। কেন কংগ্রেস-বিরোধিতা শুরু করে দিল বিরোধী ঐক্য গড়ার পরিকল্পনা করেও। তৃণমূলই বিরোধী ঐক্য ভেঙে কংগ্রেস বিরোধিতায় নেমেছে। আর তা করা হচ্ছে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই।
তৃণমূলের পক্ষে অনন্তকাল অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না!
কংগ্রেসের এই দোষারোপের কড়া জবাব দিয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় নানা যুক্তি খাঁড়া করেছেন। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলা সত্ত্বেও বিরোধী দলগুলিকে জোটবদ্ধ কররা কোনও উদ্যোগ নেননি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তৃণমূলের পক্ষে অনন্তকাল অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। তাই আমরা অন্য রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে জোর দিয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই সমমনোভাবাপন্ন দলের সদস্য হিসেবে কংগ্রেসের ব্যর্থতায় তৃণমূল বাড়ছে। সেখানে কংগ্রেস ভাঙার দায় নেই তৃণমূলের।
তৃণমূল ইউনিট খুলে কংগ্রেসকে দুর্বল করছে, বিজেপির সুবিধা
সুখেন্দুশেখর রায়ের এই যুক্তির পাল্টা দিতে ভুললেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায় ক্ষোভ ও অভিমান দুইই ফুটে ওঠে। অধীর চৌধুরী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে স্নেহ করে গান্ধী পরিবার। তারপরও কংগ্রেসকে যেভাবে ভেঙে বিজেপির হাত শক্ত করা হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যের। কংগ্রেস যেখানে শক্তিশালী সেখানে তৃণমূল ইউনিট খুলে কংগ্রেসকে দুর্বল করছে, তাতে সুবিধা হচ্ছে সেই বিজেপিরই। এই সহজ সত্যটা বুঝতে পারছে না তৃণমূল।
যে রাজ্যে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই, সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী
সম্প্রতি কংগ্রেসের মহিলা সভানেত্রী সুস্মিতা দেব তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। তৃণমূল তাঁকে সাংসদ করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে আবার ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই। তবু তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিচ্ছে। কেন তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে, সেই অভিযোগও করেন তিনি।
গোপন আঁতাতে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে
আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী কড়া বাক্যে তৃণমূলের সমালোচনা করে বলেন, যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে গিয়ে ইউনিট খুলে সংগঠন বিস্তারের নামে কংগ্রেসকে ভাঙা এবং বিজেপির জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়ে বুঝি সঠিক কাজ করছে তৃণমূল। আসলে গোপন আঁতাতে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির সুবিধা করে দিতেই বিভিন্ন রাজ্যে ইউনিট খুলছে।
মুখে বিজেপির বিরোধিতা করছেন, কাজে বিজেপিকে সুবিধা
অধীর চৌধুরী কড়া ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলার নিজেই বলতে পারতেন। তিনি মুখে বিজেপির বিরোধিতা করছেন, কাজে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন। সারা দেশে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট আর তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসেবটা একবার চোখ বুলিয়ে নিন। মাত্র চার শতাংশ ভোট নিয়ে আপনি কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনা টানছেন।
বাংলায় দিদি আর দিল্লিতে মোদী- সমঝোতা তৃণমূল-বিজেপির
অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ সবাই জেনে গিয়েছে। উনি বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁর দলের কর্মপরিকল্পনায়। বাংলায় দিদি আর দিল্লিতে মোদী এই সমঝোতা হয়েছে তৃণমূল আর বিজেপির। যাঁরা বিজেপি বিরোধিতা চান, তাঁদের আর এই গোপন আঁতাত বুঝতে বাকি নেই। এই স্বরূপ প্রকাশ পাওয়ার পর অচিরেই ধাক্কা খাবেন তিনি।
তৃণমূল একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে বিজেপি বিরোধিতায়
তৃণমূল এই বিষয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের অধিকার সমস্ত দলের রয়েছে। গত অগাস্টে দিল্লি সফরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিরোধী সমস্ত দলকে এক ছাতার তলায় আনতে সোনিয়া গান্ধীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নিজের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত থেকেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। তাই তৃণমূল একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে বিজেপি বিরোধিতায়।
মোদীর হাতে পেনড্রাইভ তুলে দিলেন অধীর, সন্তর্পণে কীসের দাবি জানালেন অডিও বার্তায়