মমতাই মোদী-বিরোধী বিকল্প মুখ, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশের ডাকে কি নয়া সমীকরণ ২০২৪-এ
মমতাই মোদী-বিরোধী বিকল্প মুখ, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশের ডাকে কি নয়া সমীকরণ ২০২৪-এ
উত্তরপ্রদেশের ভোটযুদ্ধ কি ফের নতুন সমীকরণের জন্ম দেবে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে। সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব যেভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন প্রত্যাশী হয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা সাদরে গ্রহণ করেছেন, তাতে ২৪-এর নতুন সমীকরণের আভাস মিলতে শুরু করেছে।
বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলারা নির্বাচনে জিতে নিজেকে মোদী বিরোধী বিকল্প মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকেই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তাঁর বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা শুরু। তার বাস্তবিকতা যদিও এখনও মেলেনি। এবং কোনও রাজ্য থেকেই তেমন সাড়া মেলেনি। অর্থাৎ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার ডাকে সাড়া দেয়নি কেউই।
মোদী বিরোধী বিকল্প মুখ হিসেবে অগ্রণী মমতা
কিন্তু উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রাক্কালে সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব কিন্তু দুহাত বাড়িয়ে মমতাকে ডাকলেন। তাঁকে মোদী বিরোধী বিকল্প মুখ হিসেবে উল্লেখ করেই তাঁর সাহচর্যে বিজেপিকে হারানোর যৌথ অভিযান শুরু করার আভাস দিলেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে দূত পাঠিয়ে মমতাক আনুগত্য আদায় করে নিলেন অখিলেশ যাদব।
মোদীর জনপ্রিয়তায় যখন ভাটার টান লক্ষ্যণীয়
এবার উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পালে সে অর্থে হাওয়া নেই। কোনওরকমে বৈতরণী পার করার আশায় রয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাওয়া বুঝেই অনেক আগে থেকে উত্তরপ্রদেশে প্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু মোদীর জনপ্রিয়তাতেও ভাটার টান লক্ষ্যণীয়। এই অবস্থায় তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছেন অখিলেশ। তাঁর সেই দৌড়ে তিনি যেচে সঙ্গী করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পাশে অখিলেশ!
এরপর উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি যদি বিজেপিকে হারিয়ে দেয়, তবে অখিলেশ ও মমতা জোট বেঁধে বিকল্প মুখ হয়ে ওঠার জোরালো দাবি তুলতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত তাঁর সমর্থনে কাউকে পাশে পাবেন। এতদিন সে অর্থে কেউই তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর বন্ধুরা একে একে সরে গিয়েছেন, সেই কংগ্রেসকেই তাঁরা বিরোধী জোটের নেতৃত্বে চেয়েছেন।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াসী
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহারাষ্ট্রে ছুটেছেন। সেখানে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার ও শিবনৃসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের প্রস্তাব দিয়েছেন কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার। কিন্তু শারদ পাওয়ার থেকে শুরু করে সঞ্জয় রাউত- কেউই রাজি হননি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে চলতে। শিবসেনা মুখপাত্র তো সরাসরি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার বার্তা দেন।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে হাঁটাই পছন্দ করবেন অধিকাংশ বিরোধী
এছাড়া ডিএমকর এম কে স্ট্যালিন রাহুল গান্ধী বা কংগ্রেসের নেতৃত্ব ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাঁটবেন না। আবার বিহারের আরজেডির লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে হাঁটাই পছন্দ করবেন। ঝাড়খণ্ডের জেএমএম সুপ্রিমো হেমন্ত সোরেনও তাই। সিপিএম বা বামেরাও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসকেই গুরুত্ব দেবেন। এছাড়া তৃণমূলের ডাক উপেক্ষা করে ১৭ বিজেপি বিরোধী দলকে পাশে পেয়েছেন কংগ্রেস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য থাকবে যাঁদের
এর বাইরে যাঁরা থাকছেন তাঁদের মধ্যে অখিলেশ অন্যতম। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রাক্কালে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভোট পরবর্তী সময়েও তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসবেন না মনে করাই যায়। আর আছেন মায়াবতী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে নেন কি না সংশয় থাকছেই। এছাড়া টিআরএসের কে চন্দ্রশেখর রাও বা অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জগনমোহন রেড্ডি বা ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক বিজেপির সঙ্গে ব্যালান্স করে চলে। আবার চন্দ্রবাবু নাইডুও এখন কোন পথে যাবেন, তার স্থিরতা নেই।
সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের সমর্থনে সভা মমতার
এই পরিস্থিতিতে অখিলেশের ডাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়া দেওয়া এবং তাঁদের যৌথভাবে মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে প্রচার করার পরিকল্পনা ২০২৪-এর আগে নতুন সমীকরণের জন্ম দিতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়েছেন ৮ ফেব্রুয়ারি লখনউ যাবেন এবং উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের সমর্থনে সভা করবেন ভার্চুয়ালি। এই সভা ২০২৪-এর লক্ষ্যে নতুন সমীকরণের প্রতীক হয়ে উঠতেই পারে।
মোদী বিরোধী প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল উত্তরপ্রদেশে লড়াই করছে না। ২০২১-এ যেমন সমাজবাদী পার্টি তৃণমূলকে নিঃশর্ত সমর্থন করেছিল বাংলায়, তেমনই তৃণমূল সমাজবাদী পার্টিকে নিঃশর্ত সমর্থন করবে উত্তরপ্রদেশে। অখিলেশ যাদব নিজে প্রচারে না এলেও কিরণময় নন্দকে পাঠিয়েছিলেন বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে। তেমনই অখিলেশ চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যেন তাঁর প্রচারে আসেন। কেননা তিনিই এই মুহূর্তে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ জাতীয় রাজনীতিতে।