ত্রিপুরা থেকে মেঘালয়েই কি বেশি এগিয়ে তৃণমূল, মুকুলের রাজ্যেই বেশি মন মমতা-অভিষেকের
ত্রিপুরা থেকে মেঘালয়েই কি বেশি এগিয়ে তৃণমূল, মুকুলের রাজ্যেই বেশি মন মমতা-অভিষেকের
বছর ঘুরলেই ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু ত্রিপুরার থেকে হঠাৎ করেই মেঘালয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে তৃণমূল। যেভাবে ত্রিপুরা ছেড়ে গোয়াকে নিয়ে পড়েছিল তৃণমূল, এবারও বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মমতা বন্যো কপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ব্যাটেল গ্রাউন্ড হিসেবে সর্বাগ্রে বেছে নিয়েছে মেঘালয়কেই।
রাতারাতি তৃণমূল মেঘালয়ের প্রধান বিরোধী দল
বাংলায় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরই ভিনরাজ্যে নজর দিয়েই ত্রিপুরাকে সবার প্রথম বেছে নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরায় নতুন ইউনিট তারা গড়তে শুরু করেছিল। তার অনেক পরে মেঘালয়ে নজর পড়ে তৃণমূলের। এখানেও কংগ্রেসে থাবা বসিয়ে তৃণমূল রাজ্য ইউনিট গড়ে তোলে। কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাকে যোগদান করিয়ে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় রাজ্য কমিটি। কংগ্রেসের ১২ জন বিধায়ককে দলে নিয়ে রাতারাতি তৃণমূল বনে যায় মেঘালয়ের প্রধান বিরোধী দল।
তৃণমূলের ভোট শতাংশ কয়েক মাসেই তলানিতে
রাতারাতি তৃণমূল বনে যায় মেঘালয়ের প্রধান বিরোধী দল।মেঘালয়ে বিরোধী দল গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবলভাবে ত্রিপুরার দিকে মনসংযোগ করেছিল। ত্রিপুরায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে শুধু নতুন ইউনিট গড়ে তোলাই নয়, পুরসভা নির্বাচনে ২০ শতাংশ ভোটও নিজেদের দিকে টানতে সফল হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে ত্রিপুরায় শুধু পিছিয়েই পড়েছে তৃণমূল। উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএমকেই প্রধান বিরোধী বলে মনে হয়েছে। তৃণমূলের ভোট শতাংশ কয়েক মাসেই নেমে গিয়েছে ২ শতাংশে।
অভিষেকের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতাও হাজির
ত্রিপুরায় শেষ কয়েকমাসে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে সুদীপ রায় বর্মন ফের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন ত্রিপুরা নিয়ে। অভিষেক বন্দ্য্যোপাধ্যায় ত্রিপুরা সফরে যাচ্ছেন না, কিন্তু এক মাসের মধ্যে দু'বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয় সফর করে গেলেন। এবার অভিষেকের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাজির মেঘালয়ে।
ত্রিপুরা তৃণমূল সাড়ে তিনমাস রাজ্য সভাপতি-হীন
উল্টোদিকে ত্রিপুরার পথ চলা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুস্মিতা দেবের উপরই ছেড়ে দিয়েছে তৃণমূল। নতুন ইউনিট গড়ার পর সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছিল। তাঁর বিজেপি যোগের সম্ভবানা তৈরি হতেই তাঁকে অপসারিত করা হয়। তারপর সাড়ে তিনমাস তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ শূন্য ছিল। অতি সম্প্রতি রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেসি পীযুষকান্তি বিশ্বাসকে।
মুকুল সাংমার নেতৃত্ব মেঘালয়ে কংক্রিট তৃণমূল
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত ছ-মাস ত্রিপুরা সফরে না করলেও একুশের পর প্রথম এক বছর তিনি ত্রিপুরায় ঘরঘাট ফেলে দিয়েছিলেন। পান থেকে চুন খসলেই অভিষেক হাসির হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু উপনির্বাচনে ব্যর্থতার পর অভিষেককে ত্রিপুরায় সেভাবে দেখা যায়নি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ইউনিট গড়ার পর এখনও একবারও ত্রিপুরায় যাননি। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ত্রিপুরার ইউনিট সেভাবে জমাট বাঁধেনি তৃণমূলের, যেটা বেঁধেছে মুকুল সাংমার নেতৃত্ব মেঘালয়ে?
সেভাবে দানা বাঁধেনি ত্রিপুরার তৃণমূল ইউনিট
২০১৬-য় একবার ত্রিপুরায় ইউনিট গড়ার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। সেবার কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মন-সহ ৬ জনের বিধানসভা পরিষদয়ী টিমকে দলবদল করিয়ে রতারাতি প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছিল তৃণমূল। কিন্তু নির্বাচনের আগে পুরো তৃণমূল ইউনিটটাই বিজেপিতে চলে গিয়েছিল। ফলে তৃণমূলের সর্বচেষ্টা জলে চলে গিয়েছিল সেবার। তারপর এবার ত্রিপুরাকেই প্রথম বেছে নিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা ভাবগতি তাতে সেভাবে দানা বাঁধেনি ত্রিপুরার তৃণমূল ইউনিট।
ত্রিপুরার থেকে মেঘালয়কে বেশি গুরুত্ব তৃণমূলের
ত্রিপুরা ছেড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেঘালয়ে। মেঘালয় তৃণমূলকে অনেকটা মাইলেজ দিতে পারে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ, মেঘালয়ে বিজেপি এখনও ততটা শক্তিশালী নয়। মেঘালয়ের ক্ষমতায় রয়েছে আঞ্চলিক দল। আঞ্চলিক দলের সঙ্গে লড়াউ ছিল কংগ্রেসের। কংগ্রেসের সিংহভাগকে ভাঙিয়ে নিয়ে মেঘালয়ে তৃণমূল কর্তৃত্ব ফলাতে চাইছে। আর মুকুল সাংমাদের দলে নিয়ে তৃণমূল এখানে বৃহত্তর পার্টি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তাই ত্রিপুরার থেকে মেঘালয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
মেঘালয়ে তৃণমূলের লড়াই অনেক সহজ হবে
উল্লেখ্য, ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে ভোট হয়েছিল উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্যে। সেই হিসেবে এবার ফেব্রুয়ারিতেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে দুই রাজ্যের। তার মধ্যেই নির্বাচন পরব্ সেরে ফেলতে হব। ফলে তিন দু-মাসের মধ্যে নির্বাচন ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে। ফলে দুই রাজ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মর্মে মেঘালয়কেই বেছে নিয়েছে সর্বাগ্রে। ত্রিপুরায় আগে পা দিয়েও ত্রিপুরা নয়, কারণ মেঘালয়ে তৃণমূলের লড়াই অনেক সহজ হবে।
পাকা বাড়ি থাকলে আবাস যোজনা থেকে নাম বাতিল, বিক্ষোভ সামাল দিতে কড়া নির্দেশ মুখ্যসচিবের