সুকান্ত-অমিতাভদের ‘স্পষ্ট-কথা’ লকেটের! বিজেপির ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ ফাঁস চিন্তন বৈঠকে
বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে একুশের নির্বাচনের পর থেকেই। তাই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব চাইছিল না লকেট চট্টোপাধ্যায় চিন্তন বৈঠকে মুখ খুলুন। কিন্তু সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।
বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে একুশের নির্বাচনের পর থেকেই। তাই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব চাইছিল না লকেট চট্টোপাধ্যায় চিন্তন বৈঠকে মুখ খুলুন। কিন্তু সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। লকেট চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের সামনে সরব হয়েই রাজ্য বিজেপির সমালোচনা করলেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বুলি নয় আত্মসমালোচনার কথায় তির ছুড়লেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দিকে।
চিন্তন বৈঠক রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব নির্বাচনী ব্যর্থতার জন্য তৃণমূলের দিকেই তির ছুঁড়েছিলেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৃণমূলের ভোট-সন্ত্রাসকে দায়ী করেছিলেন বিজেপির ভরাডুবির জন্য। কিন্তু সেই তত্ত্ব খারিজ করে লকেট চট্টোপাধ্যায় ফাঁস করলেন রাজ্য বিজেপির ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ।
যে তত্ত্ব খারিজ করেছিলেন খোদ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সেই তত্ত্ব তুড়ি মেরে উড়িয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাই আসন কারণ ব্যর্থতার। আর দায়ী দলীয় কমিটিতে স্বজনপোষণ। চিন্তন বৈঠকে বিজেপির গোপন কথা ফাঁস করে দিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয় এই অসুখ সারানোর দাওয়াইও দিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। জানালেন, বিজেপির আত্মসমালোচনার দরকার। তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, শাসক দলের সন্ত্রাসকে ঢাল করে বাঁচা যাবে না। এ থেকে উদ্ধার পেতে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। দলের অন্দরে স্বজনপোষণ বন্ধ করতে হবে। তবেই আসবে সাফল্য।
লকেট চট্টোপাধ্যায় বিজেপির চিন্তন বৈঠকে এলেও তাঁকে মঞ্চে স্থান দেওয়া হয়েছিল না প্রথমে। তাঁর মুখ বন্ধ রাখার উপায় খুঁজছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখলেন লকেট। ফাঁস করে দিলেন বিজেপির দুর্বলতা। সাফ জানালেন, যেভাবে কমিটি তৈরি হয়েছে, তা যোগ্যতার মাপকাঠি হয়নি, সমস্যা সেখানেই।
চিন্তন বৈঠকৈ লকেট চট্টোপাধ্যায় ঝড় তুলতে পারেন, এই ভয় আগে থেকেই করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। তাই লকেট যাতে চিন্তন বৈঠকে কোনওরকম অস্বস্তি বাড়াতে না পারেন, সে জন্য দিল্লিতে পর্যন্ত দরবার করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। কিন্তু তার পরো লকেট-অস্বস্তি দূর করতে পারল না বিজেপি, লকেট মঞ্চে উঠে বিজেপির ব্যর্থতার কারণস্বরূপ নিশানা করলেন বর্তমান নেতৃত্বকেই।
লকেট সাফ জানালেন, ভোট-সন্ত্রাসের দোহাই দিয়ে ব্যর্থতাকে আড়াল করলেই শুধু হবে না, বিজেপির সাংগঠনিক ব্যর্থতার ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। নীচুতলার নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে বসে রয়েছে। ফলে বুথে বুথে দলের লোক নেই। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ও তাঁর টিম দলের সাংগঠনিক ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইছেন। দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ভুলভাল রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। তা নিয়েই কার্যত সরব হলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
চিন্তন বৈঠকে লকেট চট্টোপাধ্যায় দলের বিদ্রোহী নেতাদের সুরেই সুর মেলালেন। বিজেপির অনভিজ্ঞ ও তৎকাল নেতাদের নিশানা করলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীদের উদ্দেশ্যে তিনি জানালেন, দলের ব্যর্থতার জন্য আত্মবিশ্লেষণ দরকার। যে হার হয়েছে, তা মাথা পেতে নেওয়া উচিত। বিজেপির সমস্তকর্মী ও আমাদের আত্মবিশ্লেষণ দরকার। ভুল-ত্রুটি শোধরাতে হবে। একে অপরের উপর দোষ বা দায় চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। দেখতে হবে কোথায় খামতি রয়েছে।