পোঙ্গল কী, জানুন এর ইতিহাস থেকে তাৎপর্য সম্পর্কে
পোঙ্গল কী, জানুন এর ইতিহাস থেকে তাৎপর্য সম্পর্কে
পোঙ্গল হল একটি বিশেষ উৎসব, যা প্রতিবছর আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। এই উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। দক্ষিণ ভারতে প্রতিবছরে এই উৎসব পালিত হয়। প্রধানত এই উৎসবটি তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ , তেলেঙ্গানা রাজ্যে পালিত হয়। এই উৎসবটি মকর সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। এই বিশেষ উৎসবটি চার দিনব্যাপী পালিত হয়। এই সময় সূর্য মকর রাশিতেই থাকে। তাই এদিন সূর্য পুজোর এক বিশেষ রীতি রয়েছে। ১৪ তারিখ থেকে এই উৎসব পালিত হবে। যা চলবে চারদিন পর্যন্ত। এই দিন সূর্য দেবতাকে চাল ও দুধ একসঙ্গে দেওয়ার এক বিশেষ রীতি রয়েছে। এই পোঙ্গল উৎসবের চারদিনের চারটি নাম রয়েছে। প্রথম দিনটিকে ভোগী পোঙ্গল, দ্বিতীয় দিনটি সূর্য পোঙ্গল, তৃতীয় দিনটি মাত্তু পোঙ্গল, চতুর্থ দিনটিকে কান্নুম পোঙ্গল।
পোঙ্গলের তাৎপর্য
এই উৎসবটি মূলত দক্ষিণ ভারতের বিশেষ উৎসব বলে মনে করা হয়। এই সময় দক্ষিণ ভারতে ফসল কাটার এক বিশেষ রীতি রয়েছে। সেই ফসল প্রথমটি কেটে দেবতাকে নিবেদন করা হয়। তার সঙ্গে প্রার্থনা করা হয় যেন প্রতিবছর শস্য পুরো ক্ষেতজুড়ে যেন জন্মায়। আরও বেশি ফসল যেন তারা ফলাতে পারে। প্রত্যেকটি ঘরে যেন সমৃদ্ধি সারা বছর জুড়ে থাকে। এই সময় বিশেষত আঁখ, হলুদ ও ধানের মতন ফসল কাটার রীতি রয়েছে। এই মাসে বিবাহ থেকে বাগদান এবং সমস্ত ধার্মিক অনুষ্ঠানের জন্য খুব শুভ বলে মনে করা হয়। এই মাসটি থাই মাস নামে পরিচিত।
পোঙ্গলের ইতিহাস
দক্ষিন ভারতের মানুষ বিশেষ করে তামিলনাড়ুর মানুষ এই উৎসব আজ নয় বহু বছর ধরে পালন করে আসছেন। এই উৎসবের একটি বিশেষ ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, ভগবান শিব তার ষাঁড় নন্দীকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, মর্ত্যে যেন সকলে রোজ খাবার খায় ও মাথায় তেল দিয়ে স্নান করেন সেটা দেখতে। নন্দী দেবতার কথা মেনে প্রতিদিন সকলকে খাবার খাওয়া ও তেল মেখে স্নান করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে শিব ঠাকুর তাঁকে বর দিয়েছিলেন, নন্দী যেন সকলের ফসল ফলাতে সাহায্য করেন। এই দিনটিতে ফসল কাটা এবং নতুন ফসল ফলানোর এক বিশেষ নীতি রয়েছে।
ভোগী পোঙ্গল
পোঙ্গলের প্রথম দিনটি ভোগী মঙ্গল নামে পরিচিত। প্রথম দিন যা প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি পালিত হয়। ভগবান ইন্দ্রকে এই দিনটি নিবেদন করা হয়। কারণ ভগবান ইন্দ্রকে আমরা ভূমির কারক বলেই জানি। তাছাড়া ভগবান ইন্দ্রকে আমরা বৃষ্টির দেবতা হিসেবেও মান্য করি। এই দিনটিকে ভোগী পোঙ্গল নামে পরিচিত। এই বিশেষ দিনে দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা তাদের বাড়ির অবাঞ্ছিত জিনিসগুলিকে কাঠ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন। তার চারিদিকে নৃত্য পরিবেশন করেন ও ঈশ্বরের গান করেন মহিলারা। যেহেতু এই উৎসবটি শীতকালে পালিত হয়, সেহেতু শরীর গরম রাখার জন্য আগুনেও জ্বালানো হয়।
সূর্য পোঙ্গল
এটি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন, যা সূর্য পোঙ্গল নামে পরিচিত। এই দিন তাজা দুধ ফোটানোর বিশেষ রীতি রয়েছে। এই দিনে তামিলনাড়ুর বাসিন্দারা চাল, দুধ ও গুড় দিয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তৈরি করেন এবং সেই মিষ্টিটি দেবতাদের নিবেদন করেন তাঁরা। এই দিন বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলারা একই জায়গায় মিলিত হন। কলা ও নারকেল তারা সূর্য দেবতাকে নৈবেদ্য হিসাবে দিয়ে থাকেন।
মাত্তু পোঙ্গল
পোঙ্গলের তৃতীয় দিন মাত্তু পোঙ্গল নামে পরিচি্ত। এই বিশেষ দিনে দক্ষিণ ভারতের মানুষ গরুকে পুজো করে থাকেন দেবতার রূপে। যেটি প্রতিবছর পরে ১৬ জানুয়ারি পালিত হয়ে থাকে। এই দিন গরু ও ষাঁড়ের সঙ্গেও যে সকল প্রাণী, কৃষিকাজে সাহায্য করে তাদেরকেও পুজো করা হয়। তারপর কৃষকরা তাদের ফসল কাটতে এবং ফসল ফলাতে মাঠে যান। এই দিন খামারে যে গবাদি পশু থাকে তাদের স্নান করাবার রীতি রয়েছে। তাদের স্নান করাবার পর মালা পরানো হয়। তাছাড়া তামিলনাড়ুর মাদুরাই জেলায় ষাঁড়ের খেলা দেখানো খুব বিশেষ বলে মনে করা হয়।
কান্নুম পোঙ্গল
উৎসবের শেষ এবং চতুর্থ দিনটি কান্নুম পোঙ্গল নামে পরিচিত। যা ১৭ জানুয়ারি পালিত হবে। তামিলনাড়ুর এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে এই কান্নুম পাঙ্গল পোঙ্গল কারিনাল নামেও পরিচিত। সেদিন তামিলনাড়ু বাসিন্দারা সূর্য দেবতার এক বিশেষ পুজো করেন এবং সূর্যকে নৈবেদ্য হিসাবে অনেক কিছু নিবেদন করে থাকেন। দেবতাদের উদ্দেশ্যে আঁখ দেওয়ার এক বিশেষ রীতি দেওয়ার রীতি রয়েছে। এই পোঙ্গলের শেষ দিন স্থানীয় লোকেরা নাচ, গান করে আনন্দ করে দিনটিকে উদযাপিত করেন।
সূর্যকে শক্তিশালী করে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে চাইছেন, তাহলে মানুন এগুলি