মহাকাশ থেকে পৃথিবীর কোন কোন স্থান দেখা যায়, জানেন! নাসা দিল সেই বিস্তারিত তথ্য
মহাকাশ থেকে পৃথিবীর কোন কোন স্থান দেখা যায়, জানেন! নাসা দিল সেই বিস্তারিত তথ্য
পৃথিবী থেকে মহাকাশের সীমানার দূরত্ব তো কম নয়। সেই সীমানা থেকে দেখা যায় পৃথিবীর অনেকগুলি স্থান। আমেরিকা, চিন ও আরব আমিরশাহীর পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের কয়েকটি বিশেষ জায়গারও নাম। নাসার বিজ্ঞানীরা সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। সেই ছবিও প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ সীমানা থেকে দৃশ্যমান পৃথিবীর স্থান
মহাকাশের সীমানাকে বলা হয় কারম্যান লাইন। সেই কারম্যান লাইন পৃথিবী থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সেই উচ্চতা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় পৃথিবীর বেশ কিছু স্থানকে। ওই স্থান থেকে স্বপ্নের মতো মনে হয় পৃথিবীর বিশেষ সেই সব স্থানের ছবি। নাসা জানিয়েছে, পৃথিবীতে অন্তত ১১টি এমন স্থান রয়েছে, যা দেখা যায় মহাকাশ থেকে।
কোন কোন দেশের বিশেষ স্থান দেখা যায় মহাকাশে
মহাকাশ থেকে দর্শনীয় পৃথিবীর সেইসব স্থানের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইয়ের একট বিশেষ এলাকা, রয়েছে আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল ও চিনের বিশেষ বিশেষ স্থান। এছাড়া কিছু হাইওয়ে রয়েছে। রয়েছে পর্বতমালা, বাঁধ বা ড্যাম, দ্বীপ। তবে চিনের প্রাচীর দেখা যায় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
মিশরের গ্রেট পিরামিড অফ গিজা
মহাকাশ থেকে দর্শনীয় অবিশ্বাস্য স্থানগুলির মধ্যে একটি হল মিশরের গ্রেট পিরামিড অফ গিজা। মিশরের এই পিরামিডগুলি প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে তৈরি করা হয়ছিল। ২০০১ সালে প্রথম নাসার বিজ্ঞানীরা এই পিরামিডগুলির ছবি তুলেছিলেন। মোট তিনটি পিরামিড দেখা যায়। তার মধ্যে ফারাও খুফুর গ্রেট পিরামিডটি সবথেকে চিত্তাকর্ষক। তা ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাদে নির্মিত হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ৪৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক একমাত্র মহাকাশ থেকে মহাকাশচারীরা একসঙ্গে দেখতে পান। এটি এতটাই বড় যে মহাকাশ থেকে তা দখায় একটি ঘূর্ণায়মান নদীর মতো। এটি বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি এবং এটি বিলিয়ন বছরের পুরনো। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ দর্শনা্রথীদের আকর্ষণ করে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক।
ভারতের উত্তরাংশে হিমালয় পর্বতমালা
মহাকাশ থেকে সম্পূর্ণ দেখা যায় ভারতের উত্তরাংশে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট-সহ এই হিমালয় ১১০টি পর্বত দ্বারা গঠিত। তাই হিমালয় যে মহাকাশ থেকে দেখা যাবে তা স্বাভাবিকই। পৃথিবী বিখ্যাত এই পর্বতশ্রেণি ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে চিন, ভুটান ও নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত। হিমালয়ের তুষারময় চূড়াগুলি মহাকাশ থেকে অতীব সুন্দর দেখায়।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পৃথিবীর সাতটি প্রাকৃতিক আশ্চর্যের আরও একটি স্থান। এই স্থানটিও মহাকাশ থেকে দেখা যায়। এই দর্শনীয় প্রাচীরটি ২৬০০ কিলোমিটারের বেশি প্রসারিত এবং ৯০০টিরও বেশি দ্বীপ এবং ২৫০০টি পৃথক প্রাচীর নিয়ে গঠিত। এখানে কোটি কোটি প্রবাল পলিপ রয়েছে। প্রবাল হল বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক প্রাণী। মহাকাশ থেকেও তা আশ্চর্য দেখায়।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আমাজন নদী
আমাজন নদী হল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। মিশরের নীল নদের পরেই এর স্থান। অনেকে আবার আমাজন নদীকেই দীর্ঘতম আখ্যা দেয়। দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি দেশের মধ্যে দিয়ে ৬৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। মহাকাশ থেকে স্যাটেলাইট চিত্রে এই আমাজনকে দেখা যায় নীল ও সবুজের মধ্যে বালি রঙের সাপের মতো।
আরব আমিরশাহীর দুবাইের পাম আইল্যান্ড
আরব আমিরশাহীর দুবাইের পাম আইল্যান্ডের খ্যাতি চকচকে শহর হিসেবে। একেবারে উপকূলে অবস্থিত এই শহরটি তিনটি কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে গঠিত। পাম জুমেইরাহ, পাম জেবেল আলি ও দেইরা দ্বীপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে শহরটিকে। ২০০১ সালে এটির নির্মাণ শুরু হয়। পাম জুমেরাহ গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাম গাছের মতো আকৃতির এই দ্বীপকে দেখা যায় মহাকাশ থেকে।
গঙ্গানদীর ব-দ্বীপ ও মেলা
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ গঙ্গানদী ও সাগরের সঙ্গমস্থলে। তা মহাকাশ থেকে একটি অত্যাশ্চর্য দৃশ্য তৈরি করে। গঙ্গা নদী ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে ৩৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই নদী যেখানে সাগরে মিশেছে, সেখানেই তৈরি হয়েছে ব-দ্বীপ। তা ধর্মীয় স্থান হয়ে উঠেছে। মহাকাশচারীরা মহাকাশ থেকে মানুষের ভিড়ও দেখতে পান মহাকুম্ভমেলায়।
স্পেনের আলমোরিয়ার গ্রিনহাউস
স্পেনের আলমোরিয়ার গ্রিনহাউসও মহাকাশ থেকে দৃশ্যমান হয়। প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরজুড়ে স্পেনের আলমেরিয়ার গ্রিনহাউসগুলি। প্লাস্টিকের এই গ্রিনহাউসগুলি দিনের বেলা চকচকে সূর্যালোকে সমুদ্রে প্রতিফলিত হয়। এবং তা মহাকাশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। মহাকাশচারীরা জানান, মহাকাশ থেকে স্পেনের আলমেরিয়ার সৌন্দর্য এক অন্য রূপ পায়।
ইংল্যান্ডের টেমস নদী
ইংল্যান্ডের টেমস নদী পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত। মহাকাশ থেকেও তা দেখা যায়। টেমসের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪৬ কিলোমিটার আর এর প্রস্থ প্রায় ২৯ কিলোমিটার। এই নদীতে নৌকাভ্রমণের দৃশ্য যেমন শোভাবর্ধন করে, তেমনই মহাকাশ থেকে দেখা এই নদীও সমান সুন্দর। এই সুবিশাল নদীটি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। মহাকাশ থেকে হোক বা পৃথিবী থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেকট কপার মাইন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেকট কপার মাইন বিশ্বের বৃহত্তম ওপেন পিট খনিগুলির মধ্যে একটি। এটি এত বড় যে মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। চার কিলোমিটারের বেশি চওড়া এবং ১.২ কিলোমিটারের থেকেও উঁচু। একে অপরের স্তূপীকৃত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের থেকেও লম্বা। এখানে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তামা উৎপাদন করা হচ্ছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই কপান মাইনে কাজ চলবে।
রাতের শহর, যেন একটি নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করেছে
মহাকাশ থেকে দর্শনীয় রাতের শহরের ছবিও সম্প্রতি প্রকাশ করেছে নাসা। বিশ্বের যে শহরগুলি রাতে আলোকিত হয়, তা মহাকাশচারীরা রাতের বেলায় শনাক্ত করতে পারেন। বিশাল এলাকা ছবিতে দেখায় ক্রিসমাস ট্রিয়ের মতো। কৃত্রিম আলোয় তা এত উজ্জ্বল দেখায় যে মনে হয় যেন পৃথিবী একটি নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করেছে। সবথেকে দৃশ্যমান বল বেলজিয়ামের হাইওয়ে। যেখানে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ল্যাম্পপোস্টে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার আলো রয়েছে। দেখা যায় লন্ডন, প্যারিস, টোকিও, সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরগুলি।
মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গ্যালাক্সির খোঁজ মিলল, ফের চমক জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের