পিকের কংগ্রেস-সংসর্গ ত্যাগের কারণ কি তৃণমূল আর টিআরএস! ২৪-এর সমীকরণে জল্পনা
পিকের কংগ্রেস-সংসর্গ ত্যাগের কারণ কি তৃণমূল আর টিআরএস! ২৪-এর সমীকরণে জল্পনা
প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগদান স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে কংগ্রেসের তরফে একটা শর্তও দেওয়া হয়েছিল। শেষ সেই শর্তই ভোটা কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে বাধ্য করল কংগ্রেসের সংসর্গ ত্যাগ করতে। তৃণমূল ও সম্প্রতি টিআরএসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁর পক্ষে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সম্ভব হল না এ যাত্রায়।
পিকের কংগ্রেসে যোগ দেওয়া হল না এবারও
আরও একবার কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন প্রশান্ত কিশোর। কয়েকদিন আগেই সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে এসেছেন প্রশান্ত কিশোর। কংগ্রেসের হয়ে তিনি প্রেজেন্টেশান জমা দিয়েছেন। কংগ্রেসের উত্তরণের পথ বাততে দিয়েছেন তাঁর ৬০০ স্লাইডের প্রস্তাবনায়। কিন্তু তারপরও পিকের কংগ্রেসে যোগ দেওয়া হল না।
প্রশান্ত কিশোর কার্যত খারিজ করলেন প্রস্তাব
মঙ্গলবার কংগ্রেসে যোগদানের প্রস্তাব কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি নিজে টুইট করে জানিয়েছেন, কংগ্রেসে যোগদান ও ভোটের দায়িত্বভার নেওয়ার আহ্বান আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। সূত্রের খবর, সোনিয়া গান্ধী সরাসরি তাঁকে কংগ্রেসে যোগদান করতে অনুরোধ করেছিলেন। তারপর ২৪-এর যুদ্ধ জয়ের যে টিম তৈরি করেছেন সোনিয়া গান্ধী, সেখানে রাখতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর সেই প্রস্তাব কার্যত খারিজ করে দিয়েছেন।
পিকে কেন সরে এলেন কংগ্রেসের দিক থেকে
এখন প্রশ্ন হল, তিনি কেন সোনিয়া গান্ধীর প্রস্তাব খারিজ করে দিলেন। প্রশান্ত কিশোর নিজেই তো উদ্যোগী হয়েছিলেন কংগ্রেসের পুনরুত্থান ঘটিয়ে বিজেপি শসানের অবসান ঘটাতে। ভারতের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির কোন পথে আসবে সাফল্য, তাও তিনি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। তারপর তিনি কেন সরে এলেন কংগ্রেসের দিক থেকে। তবে কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও সমীকরণ?
যা ফারাক গড়ে দিল কংগ্রেস ও পিকের মধ্যে?
প্রশান্ত কিশোরের টিম আই প্যাকের সঙ্গে সম্প্রতি তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আর তৃণমূলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের গাঁটছড়া তো সেই ২০১৯ থেকেই বাঁধা রয়েছে। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের শর্ত তিনি মেনে নিতে পারেননি। প্রশান্ত কিশোর প্রথমে নিজেকে আই প্যাক থেকে স্বতন্ত্র বলে দেখাতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন আই প্যাকের সঙ্গে তৃণমূল ও টিআরএসের চুক্তি বজায় রেখে নিজেকে কংগ্রেসি রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে। কিন্তু কংগ্রেস চেয়েছিল প্রশান্ত কিশোর শুধু কংগ্রেসেই থাকুন। এখন সেই মতানৈক্যই কি ফারাক গড়ে দিল কংগ্রেস ও পিকের মধ্যে? প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
অনুঘটকের কাজ করতেই বেশি আগ্রহী পিকে
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, প্রশান্ত কিশোর আসলে কংগ্রেসে যোগ দিতে চাননি। কিনি চেয়েছিলেন পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতে। কারণ তিনি অনুঘটকের কাজ করতেই বেশি আগ্রহী। তিনি কিংমেকার হতে চান, নিজে কিং হতে চান না কখনই। এর ২০২৪-এর নির্বাচনে তাঁর লক্ষ্য ছিল, কংগ্রেসকে গুরুত্বের আসনে বসিয়ে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে এক করা।
কংগ্রেসকে পুনরুত্থানের পথ বাতলে দিয়েছিলেন
প্রশান্ত কিশোর সবসময় চেয়েছেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে। কোন দলে বা কোনও দায়িত্বে বিশেষভাবে আটকে থাকতে চাননি তিনি। তাই এবারও তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনী লড়াইকে একটা রূপরেখা দিতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন। কংগ্রেসকে পুনরুত্থানের পথ বাতলে দিয়েছিলেন।
তৃণমূল ও টিআরএসের সঙ্গে সম্পর্কই বাধা হল
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল ও টিআরএসের সঙ্গে চুক্তি রেখে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সোমবার তাঁর টিম আই প্যাকের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে টিআরএসের। তারপর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিসহ দেশের একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পিকে কংগ্রেসে যোগ দিলে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর এবং আই প্যাকের সমীকরণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভবানা প্রবল। তাই প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ না দিয়ে সেই জটিলতা এড়ানোর চেষ্টা করলেন।
তৃণমূলকে হারানোর 'সাধ্য’ নেই বিজেপির! কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি