দিলীপ কি ‘বিদায়’ জানাবেন বঙ্গ বিজেপিকে, তাৎপর্যপূর্ণ বার্তায় কী বোঝালেন ‘বাংলার সাংসদ’
দিলীপ কি ‘বিদায়’ জানাবেন বঙ্গ বিজেপিকে, তাৎপর্যপূর্ণ বার্তায় কী বোঝালেন ‘বাংলার সাংসদ’
কেন্দ্রীয় বিজেপি তাঁকে ভিনরাজ্যে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। দায়িত্ব দিয়েছে আট রাজ্যের। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ৮ রাজ্যে বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পরই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি বাংলা থেকে তাঁকে সরাতেই এই পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় বিজেপির? দিলীপের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে পাশে দাঁড়ান তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম ও কুণাল ঘোষও। তারপর দিলীপ ঘোষ এক তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিলেন।
বাংলাতে বসেই কৌশলী ভূমিকা দিলীপ ঘোষের
দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় ফতোয়া উড়িয়ে দিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি বাংলাতই থাকছেন। কোথাও যাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় বিজেপি তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা তিনি সর্বান্তকরণে পালন করবেন। তবে তিনি কাজ করবেন ভার্চুয়ালি। ফলে বাংলা ছেড়ে তাঁর ভিনরাজ্যে যাওয়ার প্রয়োজনই নেই। কেননা তাঁর কাজ কৌশল নিরূপণ। তিনি বাংলাতে বসেই সেই কৌশলী ভূমিকা নেবেন।
যখন দিলীপ ঘোষের উপর ৮ রাজ্যের দায়িত্ব
দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রথমে একবার-দুবার যেতে হবে। তারপর এখানে বসেই যা করার করব। সবই ভার্চুয়ালি হবে। যা রিপোর্ট নেওয়ার দরকার তা অ্যাপের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে। দিলীপ ঘোষের উপর ৮ রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়ার পর যে চর্চা শুরু হয়েছিল তিনি আর বাংলাতে থাকার সময় পাবেন না। তাঁকে ৮ রাজ্যে ছুটে ছুটে কাজ করতে হবে, সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দিলেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপকে ভিনরাজ্যের অভিভাবক করা হয়েছে
কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে, বাংলার পরিকল্পনা নিরূপণে তিনি অংশ নিতে পারবেন না। কারণ বাংলায় কোনও দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়নি। এই মুহূর্তে তিনি বাংলার এক সংসদীয় ক্ষেত্রের জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ তিনি বাংলা থেকে নির্বাচিত সাংসদ। এছাড়া বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কোনও দায়িত্ব এই মুহূর্তে তাঁর উপর থাকছে না। বঙ্গ বিজেপির ভার এই মুহূর্তে সুকান্ত আর শুভেন্দুর কাঁধে দিয়ে দিলীপকে ভিনরাজ্যের অভিভাবক করা হয়েছে।
সাংসদ হিসেবে বঙ্গ বিজেপির কাজেও নাক গলাবেন!
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, বাংলার বিজেপি এখন অভিভাবকহীন। তারপর তাঁকে অভিভাবক করে পাঠিয়ে দেওয়া হল বাংলার বাইরে আট রাজ্যে। তাঁকে পূর্ব ভারত ও উত্তর ভারতের আটটি রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে বঙ্গ বিজেপিকে আর তিনি ছড়ি ঘোরাতে পারবেন না বা ছড়ি ঘোরানোর মতো সময় পাবেন না। কিন্তু দিলীপ ঘোষ, তাঁর অবস্থান নিয়ে যে বিবৃতি দিলেন তাকে স্পষ্ট তিনি বঙ্গ বিজেপির অভিভাবকত্ব না পেলেও, দলের এক সাংসদ হিসেবে তিনি বঙ্গ বিজেপির কাজেও নাক গলাবেন।
বিজেপিতে দিলীপ-কাণ্ড নিয়ে চর্চায় তৃণমূল নেতারা
বর্তমানে রাজ্যে নব্য ও তৎকাল বিজেপির ভিড়। তাঁদের কাঁধেই দায়িত্ব। আদিরা এখন ব্যাকফুটে। এই অবস্থায় দিলীপকে বাংলা থেকে সরানোর পিছনে কিছু নব্য ও তৎকাল নেতা রয়েছেন বলে তাঁর অনুগামীদের দাবি। দিলীপকে বাংলা থেকে সরানো আবার খুশি ব্যক্ত করেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি প্রবীণ নেতা তথাগত রায়। তারপর দিলীপের প্রতি বঞ্চনা হচ্ছে বলে সরব হন তৃণমূলের নেতারা। ফলে বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ-কাণ্ড নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতির অপসারণে সমালোচনা
দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বঙ্গ বিজেপির উত্থান, তা অনস্বীকার্য। দু-জন সাংসদ থেকে ১৮ জন সাংসদ প্রাপ্তি, তারপর তিনজন বিধায়ক থেকে ৭৭ জন বিধায়ক নিয়ে বাংলার বিধানসভায় প্রধান ও একমাত্র বিরোধী দল হয়ে ওঠা দিলীপ ঘোষের আমলেই। অমিত শাহ ২০০-র টার্গেট খাঁড়া করতেই পারেন। সেই টার্গেটের নিরিখে বঙ্গ বিজেপি খারাপ ফল করেছে, কিন্তু বিগত নির্বাচনের তুলনায় ভালো ফল করেছে দিলীপ ঘোষেক নেতৃত্বে। তারপর তাঁকে বঙ্গ বিজেপিতে ব্রাত্য ও নিস্ক্রিয় করে দিলে তো সমালোচনা হবেই। সেই সমালোচনা এখন সইতে হবে বর্তমানে বঙ্গ বিজেপির নিয়ন্তা সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীদের।
প্রাক্তনকে নিয়ে বর্তমান সভাপতি সমালোচনা ওড়ালেন
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপদার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি বঙ্গ বিজেপিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এতদিন, এবার ভিনরাজ্যের দায়িত্ব নিয়েও দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন। আর দিলীপদা তো বাংলারই, তাঁকে তো আমরা পাবোই। অযথাই এইসব সমালোচনা চলছে।
আদিরা বঞ্চিতের দলেই, 'তৃণমূলী’-নব্যরাই চালিকা শক্তি! ফাটল-রোধে বিজেপির 'প্ল্যান’