আগস্টে ভারতে পা রেখেছে গ্যালাক্সি নোট ৯, স্যামসাং'য়ের এই ফ্ল্যাগশিপ ফোনে নতুন কী আছে
চলতি বছরের আগস্ট মাসেই স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৯ এসেছে বারতের বাজারে। দেখা যাক স্যামসাংয়ের এই সাম্প্রতিকতম স্মার্টফোনে নতুন কি আছে?
স্যামসাং সংস্থার স্মার্টফোন পরিবারের নবতম সদস্য গ্যালাক্সি নোট ৯। এই মাসেই ভারতের বাজারে পা রেখেছে স্যামসাং-এর এই বছরের সেরা আকর্ষণ। ইউরোপ আমেরিকার বাজারে ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে এই স্মার্টফোন। এতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে দেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৮.১। ৬ অথবা ৮ জিবি র্যাম ও অক্টাকোর প্রসেসরে চলে এই ফোন। দেখা যাক এই ফোনে নতুন কি দিল স্যামসাং।
লুক এবং ফিলের দিক থেকে নোট ৯ কার্যত গ্যালাক্সি নোট ৮ এর থেকে একেবারেই আলাদা নয়। স্যামসাং - এর গ্যালাক্সি সিরিজের ফোনগুলি যেরকম হয়ে থাকে, বডিটি মূলত কাঁচের এবং ধারে আছে অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং। ডুয়াল কার্ভড ওএলইডি ডিসপ্লের উপরে এবং নিচে সরু বেজেল রয়েছে। এই ফোনে ডিজাইনে কোনও পরিবর্তন আনেনি স্যামসাং। এখনকার অপ্পো ফাইন্ড এক্স অথবা ভিভো ভি সিরিজের ফোনগুলির পাশে স্যামসাং-এর হ্যান্ডসেটটিকে বেশ ম্যাড়মেড়ে পুরনো মনে হয়।
ডিজাইন ফিউচারিস্টিক হওয়াটাই অবশ্য শেষকথা নয়। অপ্পো ফাইন্ড এক্স-এর মতো ফোনগুলির ডিজাইন তাক লাগানো হলেও এই ডিজাইন কিন্তু তুলনায় কম টেকসই এবং এগুলিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটার সম্ভাবনাও বেশি। নোট ৯ হাত থেকে এক-দুইবার পড়লেও টিকে যাবে এরকম শক্তপোক্ত ডিজাইন রাখা হয়েছে। তবে নোট ৯-এর কোণগুলি বাজারে চালু অন্যআন্য ফোনুলির তুলনায় ধারালো। তাই হাতের তালুতে হ্যান্ডসেটটি ধরে রাখা কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর। তার উপর ফোনটি বেশ ভারি, ওজন ২০১ গ্রাম।
গ্যালাক্সি নোট ৮ এ খুবই অদ্ভুত জায়গায় দেওয়া হয়েছিল ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার। নোট ৯-এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডারটিকে ক্যামেরার নিচে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অন্যান্য ফোনের চেয়ে এটি ব্যবহার করা কঠিন। প্রথমত সেন্সর এলাকাটি অত্যন্ত ছোট, সেই সঙ্গে সেন্সর এলাকা খাঁজ খুব অগভীর হওয়ায় শুধুমাত্র স্পর্শে রিডারটি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে, এর পাশাপাশি আইরিশ স্ক্যানিং এবং টুডি ফেস স্ক্যানিং-এর বিকল্প দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে সমস্যার বিক্সবি হার্ডওয়্যার বাটন। গত বছর গ্যালাক্সি এস ৮ এর সঙ্গে প্রথম দেওয়া হয়েছিল স্যামসাং-এর ভার্টুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিক্সবি। এস ৮-এ বিকল্পটি ডিসএবল করে রাখার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই হ্যান্ডসেটে সেই বিকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে। নোট ৯-এ অনেকসময়ই ফোন ধরা বা ছাড়ার সময় বিক্সবিতে হাত পড়ে, তা বিরক্তির কারণ হয়ে যেতে পারে।
নোট ৯-এ প্রসেসর দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫। এর ৬.৪-ইঞ্চির ওএলইডি ডিসপ্লেটি এই মুহূর্তের বাজারের সেরা ডিসপ্লে প্যানেল। তবে আইফোন এক্স এবং অপ্পো ফাইন্ড এক্স-এর মতো ফোনগুলিতেও স্যামসাং-এর তৈরি ওএলইডি ডিসপ্লে প্যানেলে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সেরা স্ক্রিনের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয়ের মধ্যে ফারাকটা এখন যথেষ্টই কম।
স্যামসাং-এর নোট সিরিজের কথা ভাবাই যায় না স্টাইলাস বা এস-পেন থাড়া। নোট ৯-এর স্টাইল্সটিতে ঘটেছে বেশ কিছু বড় মাপের পরিবর্তন। এতে ব্লুটুথ ফাংশন দেওয়া হয়েছে। ফলে এসপেনকে ব্যবহার করা যাবে হ্যান্ডসেটের রিমোট কন্ট্রোল হিসাবে। এস-পেন'এর বোতামে সিঙ্গল ক্লিক বা ডাবল ক্লিক-এ মিউজিক প্লেয়ার চালানো-বন্ধ করা যাবে। তবে এটি সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে গ্রুপ ফটো তোলার সময়ে। নোট ৯-কে কোথাও বসিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে এস পেন ব্যবহার করেই ছবি তোলা যাবে। এছাড়া এস পেন দিয়ে আগে যা যা কাজ করা যেত তার সবই করা যাবে।
এই ফেনোর নতুন এআই সম্বৃদ্ধ ক্যামেরা নিয়ে ইউরোপ বা আমেরিকায় বেশ হইচই রয়েছে। হার্ডওয়্যারের দিক থেকে অবশ্য এস ৯+'এর সঙ্গে কোনও তফাত নেই নোট ৯-এর ক্যামেরার। একই ১২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে, যার একটি নর্মাল শুটার, অন্যটিতে রয়েছে টেলিফোটো লেন্স যা ২ গুণ পর্যন্ত জুম করতে পারে।
এবার আসা যাক নতুন এআই অ্যালগোরিদম-এর কথায়। ইউরোপ-আমেরিকায় শোরগোল থাকলেও অনেক বিশেষজ্ঞই স্যামসা-এর এই নতুন ফিচার নিয়ে হতাশ। প্রথমত এর অবজেক্ট/সিন রেকগনিশন প্রসেসটি যতেষ্ট স্লো বলে অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞদের দাবি এনপিইউ সম্বৃদ্ধ হুয়ায়েই-এর হ্যান্ডসেটগুলির এআই অনেক ভাল কাজ করে।
এআইটি সেভাবে কাজ না করলেও স্যামসাং-এর বাকি ফোন ফিচারগুলি কিন্তু অসাধারণ। ভিডিও রেকর্ডিং-এর ক্ষেত্রে নোট ৯-এর স্টেবিলাইজেশন প্রযুক্তির ধারে কাছে কেউ নেই। ৪কে রেজোলিউশনে ৬০ এফপিএস-এ ভিডিও তোলা য়ায়। সুয়োগ আছে ৯৬০ এফপিএস-এ আল্ট্রা স্লো মোশন ভিডিও তোলারও।
স্থিরচিত্রের ক্ষেত্রে দিনের আলোয় কোনও ত্রুটি না থাকলেও রাত্রে লো লাইট কন্ডিশনে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর ক্যামেরায় ভ্যারিয়েবল অ্য়াপারচার রয়েছে। এফ/১.৫ অ্যাপারচারে প্রচুর আলো ধরে এর ক্যামেরা। তা সত্ত্বেও লো লাইট কন্ডিশনে বেশি আলো ধরার জন্য শাটার স্পিড খুব কমিয়ে দেয় স্যামসাং-এর ক্যামেরা সফ্টওয়্যার। তাই সামান্য নড়াচড়াতেই ছবি ব্লার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নতুন এআই প্রযুক্তিও এই ক্ষেত্রে কোনও সহায়ক ভূমিকা নেয় না। ম্যানুয়াল সেটিংস-এ অবশ্য এই অসুবিধা কাটানো যেতে পারে।
নোট ৯ -এর যে বিষয়টি সবচেয়ে প্রশংসিত হয়েছে তা হল এর ব্যাটারি। এতে ৪০০০ এমএএইচ-এর ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে। স্য়ামসাং-এর কোনও ফোনে এই প্রথম এত বেশি ক্ষমতার একটি ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে। নর্মাল ব্যবহারে ফুল চার্জ করার পর একদিন গোটা চলে যায়। তবে যারা চাইনিজ ফোন বা হুয়ায়েই, শাওমির ফোন ব্যবহার করেছেন, তাদের কাছে একে খুব বাড়তি কিছু বলে মনে হবে না। তবে আইফোন বা অন্যান্য় স্যামসাং ফোনের তুলনায় অবশ্যই এর ব্যাটারি লাইফ উন্নত হয়েছে।