এবার কি উর্জিত-কেও খোওয়ালো মোদী সরকার! আরবিআই বনাম সরকারের লড়াই কিন্তু জমে উঠেছে
ক্ষমতা না অর্থ- কার জোর সবচেয়ে বেশি? এখন কিন্তু এই নিয়ে জোর লড়াই শুরু হয়েছে দেশের বুকে। এই এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক বনাম কেন্দ্রীয় সরকার।
ক্ষমতা না অর্থ- কার জোর সবচেয়ে বেশি? এখন কিন্তু এই নিয়ে জোর লড়াই শুরু হয়েছে দেশের বুকে। এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকার। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এটাই সত্যি যে আরবিআই-এর সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্ক সএখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমনকী, আরবিআই-এর হয়ে এই লড়াই-এ নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ গভর্নর উর্জিত প্যাটেল। যদিও, গোটা বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখে রা'ও কাড়ছেন না উর্জিত।
লড়াই যে চরমে যা টের পাওয়া গিয়েছিল দিন কয়েক আগেই। মুম্বই-এ এক সেমিনারে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতিকে যখন তুলোধনা করেছিলেন আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নর বিরল আচারিয়া। আরবিআই-এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে যেভাবে স্বাধীন পেমেন্ট রেগুলেটরি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তাতে এখন বেজায় ক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কর্তা-ব্যক্তিরা। বিরল আচারিয়া পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন সরকারে আসিন থাকারা কাজ করেন ভোটের জন্য আর আরবিআই-কে কাজ করতে হয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিরলের এই প্রকাশ্য বয়ানে উর্জিত-এর অনুমোদন রয়েছে। কারণ, সকলেই জানেন এই বিরলকে একটা সময় উর্জিত-ই আরবিআই-এর বোর্ডে নিয়ে এসেছিলেন।
পরিস্থিতি এই মুহূর্তে এতটাই জটিল যে একটা সময় মোদী সরকারের অন্যতম সৈনিক উর্জিত প্যাটেলকে ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরবিআই গভর্নর পদে রাখা হবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। উর্জিত আরও ক্ষিপ্ত হয়েছেন মোদী সরকারের অন্দরমহলে তাঁর যোগ্যতা এবং কাজ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলায়। নরেন্দ্র মোদীর পছন্দের লোক হয়েও কেন উর্জিত সরকারের কথা শুনবেন না তা নিয়েও বিজেপি-র বহু হেভিওয়েট মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন। এমন কথাও নাকি এখন মোদী সরকারের অন্দরমহলে চালাচালি হচ্ছে যে উর্জিত যেভাবে প্রতি পদক্ষেপে সরকারের নির্দেশ ও পরামর্শকে অগ্রাহ্য করছেন তাতে তাঁর থেকে রঘুরাম রাজন অনেক ভালো ছিলেন।
আরবিআই-এর সঙ্গে সরকারের সংঘাত অনিবার্য ছিল বলেই মনে করছেন বহু অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ। নোট-বাতিল প্রক্রিয়ার সময়ই বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শিল্পমহল, দেশের আম-জনতা সকলেরই ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল আরবিআই-কে। অথচ, উর্জিত প্যাটেলকে কার্যত না জানিয়েই নোট-বাতিল প্রক্রিয়াকে কার্যকর করা হয়েছিল বলেও একটা সময় কথা উঠেছিল। এখানেই শেষ নয় এরপরও একাধিক ইস্যুতে বারবার মোদী সরকারের সঙ্গে আরবিআই-এর নীতির ফারাক ধরে পড়ছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের একাধিক নির্দেশকে আরবিআই আমল দিচ্ছে না তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল।
এই মুহূর্তে অন্তত ছয়টি-রও বেশি ইস্য়ুতে একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে আরবিআই ও মোদী সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সবচেয়ে অখুশি হয় যখন হাজারো পরামর্শের পরও আরবিআই সুদের হার না কমানোর সিদ্ধানম্তেই অনড় থাকে। আরবিআই নাকি বারবার সরকারকে বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশের আর্থিক-নীতি নির্ধারণে তারাই সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। ভোটব্য়াঙ্কের কথা ভেবে সবসময় শঙ্কা ভরা পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করবে না। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আরবিআই যেভাবে অনুৎপাদক সম্পদ বা নন-পারফরমিং অ্যাসেট এবং ঋণ কাঠামোয় জবাব চেয়ে ব্যাঙ্কগুলোর কাছে সার্কুলার পাঠায় তাতে ক্ষোভ ছড়ায় সরকারের অন্দরমহলে। নীরব মোদী-মেহুল চোকসিদের ব্যাঙ্ক প্রতারণায় যে ভাবে মোদী সরকার আরবিআই-এর দিকে আঙুল তুলেছিল তাতে ক্ষুব্ধ হন উর্জিত প্যাটেল। মাস খানেক আগে আইএলঅ্যান্ডএফএস-এর সংকটে নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কোম্পানিস বা এনবিএফসি-র সহায়তায় আরবিআই-কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, আরবিআই এতে মাথা গলাতে রাজি হয়নি। আরবিআই ও কেন্দ্রয় সরকারে মধ্যে দ্বৈরথের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বোর্ড থেকে নাচিকেট মোর-এর অপসারণ-এর ইস্যু। মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ বছর আগেই মোর-কে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মোরকে কিছু জানানো পর্যন্ত হয়নি।
(আরও পড়ুন- আরবিআই-এর ক্ষমতা খর্বে উদ্য়োগী কেন্দ্র, মোদী সরকারকে যুক্তি বাণে নিশানা ডেপুটি গভর্নরের)
এইরকম এক পরিস্থিতিতে সোমবার বৈঠকে বসছে আরবিআই বোর্ড। সন্দেহ নেই এই বৈঠকে রীতিমতো ঝড় উঠতে চলেছে। গত সপ্তাহেই একটি বৈঠক হয়েছে। সেদিক থেকে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এটা দ্বিতীয় বৈঠক। সেই বৈঠকে সম্প্রতি সরকারের মনোনিত ডিরেক্টর এবং এসজেএম অ্য়াক্টিভিস্ট এস গুরুমূর্তির সামনে আরবিআই কর্তারা ক্ষোভ উগরে দেন। গুরুমূর্তি সেই বৈঠকে জানিয়েছিলেন, কীভাবে ক্ষুদ্র শিল্পগুলোকে সাহায্য করা যায় তার রূপরেখা বানাতে। সেইসঙ্গে তিনি জানান, ক্য়াপিটাল নর্মস-কে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড-এ নিয়ে যেতে হবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে অর্থনৈতিক নিয়মের বেড়িগুলোকে আরও শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে।
শনিবার কার্যত আরবিআই-এর নাম না করেই বার্তা দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, সবসময়য়ে রেগুলেটরি অথরিটিগুলোকে আরও বেশি করে ভাবনার বিস্তার ঘটাতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। এতে অনেক অকার্যকর চিরাচরিত ধ্যান-ধারনার অবসান ঘটবে। এখন বহু রেগুলেটরি অথরিটি এই পন্থা নিয়ে সাফল্য়ও পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন জেটলি।