আরবিআই-এর ক্ষমতা খর্বে উদ্য়োগী কেন্দ্র, মোদী সরকারকে যুক্তি বাণে নিশানা ডেপুটি গভর্নরের
যোজনা কমিশন উঠে গিয়েছে। এখন তার স্থানে নীতি আয়োগ। এমনকী দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ছোট-খাটো সংস্থাকে হয় ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
যোজনা কমিশন উঠে গিয়েছে। এখন তার স্থানে নীতি আয়োগ। এমনকী দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ছোট-খাটো সংস্থাকে হয় ভেঙে দেওয়া হয়েছে, নতুবা একসঙ্গে এই সংস্থাগুলোকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এবার আরবিআই-এর বাইরেও একটি সংস্থা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পেমেন্ট রেগুলেটরি বোর্ড বা পিআরবি নামে এই সংস্থা তৈরি হবে। আর এই সংস্থা সম্পূর্ণভাবেই আরবিআই-এর আওতার বাইরে স্বাধীন ও সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে এই ক্ষেত্রে কাজ করবে।
পেমেন্ট রেগুলেটরি বোর্ড বা পিআরবি নামে এই সংস্থার কাজ হবে সমস্ত পেমেন্ট সিস্টেমের উপর নজরদারি চালানো এবং তার সঠিক পরিচালনের তদারকি। কিন্তু, এই খবর প্রকাশ্য়ে আসার পর থেকেই বিরোধিতায় নেমেছে আরবিআই। ইতিমধ্যেই আরবিআই-এর পক্ষ থেকে সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পিআরবি-কে কেন্দ্রীয় ব্য়াঙ্কের অধীনে থেকেই কাজ করতে হবে।
শুক্রবার পিআরবি ইস্যু-কে সামনে রেখেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নর বিরল আচারিয়া। মুম্বই-এ এডি শ্রফ মেমোরিয়াল লেকচার-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি কার্যত মোদী সরকারকে যুক্তি-বাণে বিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, আরবিআই-কে এড়়িয়ে যে ভাবে আলাদা করে পেমেন্ট রেগুলেটারি অথরিটি তৈরির চেষ্টা চলছে তাতে একটা সংঘাতের জায়গা তৈরি হয়েছে।
তাঁর মতে, আরবিআই ক্ষমতা বলে সমস্ত ব্য়াঙ্কের সব-ধরনের কার্যকলাপ-কে নিয়ন্ত্রণের অধিকারি। পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কের সম্পত্তি কেনা-বেচা থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টের পরিবর্তন, লাইসেন্স পুনর্নীবকরণ এবং সবধরনের কার্যলাপ- কোনও সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া থেকে শুরু করে বিক্রি- সব কাজেই আরবিআই-এর অনুমোদন জরুরি।
বলতে গেলে ভারতীয় রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক বা আরবিআই একটা প্রতিষ্ঠান। যার হাতে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোটা নির্ভর করে। প্রসঙ্গক্রমে আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নর বিরল আচারিয়া টেনে আনেন নিরব মোদীকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার সময় গভর্নর উর্জিত প্যাটেল ও অরুণ জেটলির মধ্যে হওয়া বাকযুদ্ধের বিষয়টি। জেটলি সেই সময় বলেছিলেন, এইসব ঘটনায় খুব সহজেই রাজনৈতিক নেতাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়, অথচ ব্য়াঙ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সংস্থার ভূমিকাকে কেউ প্রশ্ন করেন না। আরবিআই-এর ভূমিকায় যে মোদী সরকার খুশি নয় তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মন্তব্যেই প্রকাশ।
বিরল আচারিয়া কঠোরভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন এদিন। কেন্দ্রীয় সরকার অ্য়াসেট কোয়ালিফিকেশন নর্মস-কে ঢিল দেওয়ার চেষ্টা করছে তা ভয়ানক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ব্যাঙ্ক লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম-নীতি মানতে সেগুলোকে ছাড় দিয়ে দেওয়া হলে হয়তো খুব অল্প-সময়ে একটা ভালো অর্থনৈতিক স্থায়ীত্বের দেখা মিলতে পারে কিন্তু, ভবিষ্যতে কোনও না কোনও সময়ে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। মারাত্মক প্রভাব পড়বে গ্রেটার ট্য়াক্সপেয়ার বিল ও প্রোটেনশিয়াল আউটপুটে।
আর্জেন্টিনা সরকারও একইভাবে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নীতি-নির্ধারণ ও ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছিল। যার ফল মারাত্মক হয়েছিলে বলেও মন্তব্য করেন বিরল আচারিয়া। তিনি তাঁর বক্তব্য সাফ জানান, 'সরকারের উপরে নির্বাচনের দায়ভার থাকাতে তারা শর্ট-টার্ম সিদ্ধান্তে বেশি ভরসা রাখেন-অনেকটা টি-২০ ম্য়াচ খেলার মতো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে টেস্ট ম্যাচ খেলতে হয়। প্রতিটি সিজনে যেমন জয়ের উপর নজর রাখতে হয় তেমনি ভবিষ্যতে জয়ের রসদটাও মজুদ রাখতে হয়।'
অর্থনীতির এই জটিলতার জন্যই আরবিআই-কে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন সংস্থার ডেপুটি গভর্নর বিরল আচারিয়া। সম্প্রতি যেভাবে মানিটারি পলিসি কমিটি তৈরি করা হয়েছে এবং এক্সচেঞ্জ রেট ম্য়ানেজমেন্ট ও সুদের হার নির্ধারণে আরবিআই-এর ভূমিকা-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা আরও শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, পিআরবি-র মতো উদ্য়োগ কোনও না কোনওভাবে আরবিআই-এর ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে।