দ্রাবিড়ের মতো ব্যাট করতে হবে, আরবিআই ও সরকারের মধ্যে বিরোধে মুখ খুললেন রাজন
অবশেষে মুখ খুললেন রঘুরাম রাজন। আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর এক টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাফ জানিয়েছেন, আরবিআই-কে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যাট করতে হবে।
অবশেষে মুখ খুললেন রঘুরাম রাজন। আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর এক টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাফ জানিয়েছেন, আরবিআই-কে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যাট করতে হবে। যিনি 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল' বলে পরিচিত ছিলেন। নভজ্যোত সিং সিধু-র মতো ব্যাট করে কোনও লাভ নেই। নভজ্যোত প্রথমে ক্রিকেটার থাকলেও এখন তিনি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর উত্তেজক মন্তব্যের জন্য তিনি বিখ্যাত। এমন মন্তব্যও করেছেন রাজন।
আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নরের মতে, আরবিআই ও কেন্দ্রীয় সরকার দু'জনকেই দু'জনের গুরুত্ব বুঝতে হবে। দু'জনকেই দু'জনের কথা শুনতে হবে। তবে রাজনের কাছে আশ্চর্যের লেগেছে আরবিআই বোর্ডের ভূমিকা। তাঁর মতে আরবিআই-এর বোর্ড যেরকম ভূমিকা দেখাচ্ছে তা সত্যিকারেই আতঙ্কের। আরবিআই বোর্ডে যারা থাকেন তাঁরা কেউই অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ নন বলেই মনে করেন রাজন। তাই তাঁর পরামর্শ এই বোর্ডে যারা থাকেন তাঁদের মূল কাজটা হল পরামর্শন দেওয়া। এর মানে আরবিআই-কে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো খেলার পরামর্শ দেওয়া। অর্থাৎ অনেকটা কোচের ভূমিকার মতো। কিন্তু, বোর্ড যদি নিজেই মাঠে নেমে খেলতে যায় তাহলেই বিপদ। একরোখাভাবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় যাতে তাদের ভূমিকাকে নভজ্যোত সিং সিধু বলে মনে হয়।
রাজন অবশ্য আশাবাদী। তাঁর মতে, আরবিআই বোর্ডে এখনও এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সরকার ও আরবিআই-এর মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্বটাকে মেটাতে পারবে। এই সব মানুষগুলোর কাজই হল আরবিআই-এর সঙ্গে একটি ব্রিজ তৈরি করার রাস্তা খোলা রাখা। রাজন জানিয়েছেন তাঁর সময়েও আরবিআই বোর্ডে বহু গুণসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আশা করা যায় দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে আরবিআই ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।
[আরও পড়ুন:কালীপুজোয় মোদীকে জোর নিশানা রাহুলের, কেন আরবিআই-এর সঙ্গে বিরোধ পর্দা ফাঁসের দাবি ]
এদিন এই সাক্ষাৎকারে ঋণখেলাপিদের নিয়েও মুখ খুলেছেন রাজন। তিনি জানিয়েছেন ব্যাঙ্ক প্রতারক ও ঋণখেলাপিদের মধ্যে একটা সুক্ষ পার্থক্য আছে। এই ঋণখেলাপিরা কোনও অবস্থাতেই ঋণ মেটাতে চায় না। এরা প্রথমেই দেশান্তর হয়ে যাবে এমনটা নয়। কিন্তু, এদের নাম প্রকাশ না করলে ঋণ খেলাপে এদের সাহস দিন দিন বেড়ে যায়। এমনকী, এদের দেখাদেখি অন্যরাও ঋণ খেলাপ করার সাহস পায়। এই সব মানুষের নাম প্রকাশে কী বাধা থাকতে পারে তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন রাজন। তাঁর মতে এই নামের তালিকা প্রকাশ না হওয়ার ফলে এরা তলে তলে দেশান্তর হওয়ারও ছক কষে রাখছে। বেগতিক দেখলেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন:মোদীকে টেক্কায় ২০১৯-এর মাইলেজ পেলেন রাহুল! বিজেপি-গড় খানখান সবুজ ঝড়ে ]
সেইসঙ্গে এদিন এমএসএমই-তে সরকার যেভাবে অতিরিক্ত অর্থ ঋণের মাধ্যমে ঢোকাতে চাইছে তাতেও কিছু মতামত ব্যক্ত করেছেন তিনি। তাঁর মতে, সরকারে এই উদ্য়োগ নিতে চাইছে ভালো। কিন্তু, এমএসএমই-তে পুরোপুরি ঋণের আগলটাকে মুক্ত করাটা ঝুঁকিহীন নয়। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ ঢালতে গেলে সেখানকার শিল্প কাঠামো-কে আগে ঠিক করতে হবে। নচেৎ ঋণখেলাপের পরিমাণ এখানে বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজন। সরকারি ব্যাঙ্ক পরিষেবা ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক পরিষেবা-তেও এখন প্রচুর উন্নতি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর।
[আরও পড়ুন: মুকুল-দিলীপ 'অঙ্ক' মেলানোর চেষ্টায়, রাম ছেড়ে বাম আর মুসলিম-প্রীতিলাভে মরিয়া ]
এদিন অবশ্য আরবিআই বা কেন্দ্রীয় সরকার কারোর হয়েই ব্যাট করেননি রাজন। এমনকী, ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকার হস্তান্তর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব আরবিআই-এর কাছে গিয়েছে বলেও যে খবর চাউড় হয়েছে, তা নিয়েও কোনও মুখ খোলেননি তিনি।