চিনা অ্যাপে স্বল্প ঋণের ফাঁদে সর্বসান্ত সাধারণ মানুষ, ৫০০ কোটি টাকার প্রতারণা, আটক ২২
চিনা অ্যাপে স্বল্প ঋণের ফাঁদে সর্বসান্ত সাধারণ মানুষ, ৫০০ কোটি টাকার প্রতারণা, আটক ২২
দিল্লি পুলিশ দুই মাসের বেশি অভিযান চালিয়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। পাশাপাশি একটি প্রতারণা চক্রের হদিশ পেয়েছে।স্বল্প সুদে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা চক্রটি কাজ করত। তবে এই প্রতরণা চক্রটি চিনের নাগরিকরা পরিচালনা করতেন বলে দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। এরপর অর্থ হাওয়াওলা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে চিনে পাঠানো হতো বলে জানা গিয়েছে।
কীভাবে এই প্রতারণা চক্রটি কাজ করত
দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, স্বল্প সুদে স্বল্প ঋণ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করত অ্যাপগুলো। এই অ্যাপগুলোর নেপথ্যে চিনা নাগরিকরা ছিলেন বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর। ব্যবহারকারীরা প্রথমে স্বল্প ঋণের প্রয়োজনে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে। তারপর অ্যাপটিকে অনুমোদন দেয়। অ্যাপটিকে অনুমোদন দিতে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারীকে শেয়ার করতে হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা চলে আসে। এরপরেই ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু হয় ব্যবহারকারীর ওপর নজরদারি। ভুয়ো ফোন নম্বর থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে। সেখানে ব্যবহারীর মর্ফড নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হবে। হুমকি দেওয়ার পরেই অর্থের জন্য চাপ দিতে শুরু করা হয়। সামাজিক অসম্মান ও ভয়ের কারণে ব্যবহারকারীরা হুমকির কাছে মাথানীচু করে। হুমকির টাকা দিয়ে দেয়। সেগুলো পরে হাওয়াওলা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে চিনে পাঠানো হতো বলে জানা গিয়েছে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ৫০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার প্রয়োজন ছিল এমন ব্যক্তিকে হুমকির মুখে কয়েক লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই প্রতারণা চক্র ব্যাঙ্কের একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। যেখান থেকে প্রতিদিন এক কোটি টাকার বেশি আদান-প্রদান হতো বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে চ্যাট, ছবি সহ মোবাইল থেকে একাধিক ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাক্সেস চাওয়া হতো। ব্যবহারকারীরা স্বল্পঋণের ফাঁদে পা দিয়ে সেই অ্যাক্সেস দিতেন বলে জানা গিয়েছে।
সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতারণা চক্র
এই অ্যাপ্লিকেশনে চড়া সুদে স্বল্প ঋণ দেওয়া হতো। সম্পূর্ণ টাকা আদায়ের পর তাদের মর্ফ করা নগ্ন ছবি ব্যবহার করে ব্যাপক অঙ্কের টাকা আদায়ের শতাধিক অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েছিল। দিল্লি পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশন এই অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখে। তদন্তে নেমে একটি প্রতারণা চক্রের হদিশ পায়। যার সঙ্গে সরাসরি চিনের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে এই নেটওয়ার্কটি দিল্লির পাশাপাশি কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনায় দুই মহিলা সহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর
অভিযানের আগাম আভাস পায় প্রতারণার চক্রের মূল মালিকরা। দেশ জুড়ে অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কল সেন্টারগুলো নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েক জন চিনা নাগরিককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের সন্ধানে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এই প্রতারণা চক্রটি মানুষকে ঠকিয়ে ৫০০ কোটি টাকা চুরি করেছে।