চন্দা কোছারের বিরুদ্ধে 'স্বাধীন এবং বিশ্বাসযোগ্য' তদন্ত করবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভিডিওকন ঋণ সংক্রান্ত মামলায় এমডি চন্দা কোছারের বিরুদ্ধে তারা 'স্বাধীন এবং বিশ্বাসযোগ্য' তদন্ত করবে।
এমডি তথা সিইও চন্দা কোছারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চলেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। বুধবার স্টক এক্সচেঞ্জে পেশ করা এক বিবৃতিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চন্দা কোছারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতেই একজন 'স্বাধীন ও উপযুক্ত' ব্যক্তিকে দিয়ে তদন্ত করানো হবে। তারা আরও বলেছে, তদন্তে কোনও দিকই বাদ দেওয়া হবে না। এখন অবধি এই অভিযোগ সংক্রান্ত যে যে বিষয় উঠে এসেছে, এবং তদন্ত চলাকালীন যা জানা যাবে সবই খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন মতো ফরেনসিক পরীক্ষা বা ইমেইল রিভিউ, প্রাসঙ্গিক কর্মীদের বিবৃতি নথিভুক্ত সব রকম ভাবেই তদন্ত চলবে।
জানা গিয়েছে তদন্তকারী নির্ধারণের ভার দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের অডিট কমিটিকে। তদন্তকারীর নাম চুড়ান্ত করার সঙ্গে এই তদন্তের বিভিন্ন শর্তাবলী ও সময়সীমা নির্ধারণের ভারও তাদের হাতে। এছাড়া তদন্তের কাজে প্রয়োজনীয় স্বাধীন আইনি ও অন্যান্য পেশাগত সহযোগিতা দিয়ে অডিট কমিটি তদন্তকারী দলের প্রধানকে সহায়তাও করবে।
ভিডিওকন গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে গিয়ে চন্দা কোছার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে কানাঘুষো অভিযোগ রটেছিল অনেকদিন ধরেই। এরপর ২০১৬ সালে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এক বিনিয়োগকারী অরবিন্দ গুপ্ত এক এব্যাপারে পত্রাঘাত করেন। তাঁর নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, ২০১২ সালে ভিডিওকনকে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা লোন দেওয়ার সময় স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েচেন চন্দা। ভিডিওকন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বেনুগোপাল ধুত, চন্দা কোছারের স্বামী দীপক কোছারের সঙ্গে মিলিত ভাবে ২০১০ সালে নিউপাওয়ার রিনিউএবেল্স সংস্থা গঠন করেছিলেন। তাতে বেনুগোপাল ৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু, অভিযোগ ২০১২ তে আইসিআইসিআই-এর ঋণ পাওয়ার ছ'মাসের মধ্যে তিনি মাত্র ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিউপাওয়ার রিনিউএবেল্স-এর প্রোপ্রিয়েটরশিপ দিয়ে দেন দীপক কোছারের একটি ট্রাস্টকে। এই নিয়েই স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ দানা বাধে।
কদিন আগেই এই নিয়ে সিকিওরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ও তাদের চন্দা কোছারকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। তাদের অভিযোগ, লিস্টিং অবলিগেশন অ্যান্ড ডিসক্লোজার রিকয়্যারমেন্টস বা এলওডিআর লঙ্ঘন করেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এবং পর্যাপ্ত তথ্যও প্রকাশ করেনি। আগে থেকেই কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং ডিসক্লোজার ল্যাপস নিয়ে ব্যাঙ্কটির বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছিল সেবি।
তবে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এম কে শর্মা বরাবর এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। অবশ্য গত মার্চে তিনি বলেছিলেন, নিউপাওয়ার রিনিউএবেল্স-এর বিনিয়োগকারী ছিলেন বেনুগোপাল ধুত, কিন্তু ভিডিওকন গোষ্ঠীর কোনও বিনিয়োগ ছিল না সংস্থাটিতে। তাই এক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু তাতে সেবির তদন্ত বন্ধ হয়নি। এরপর এরপকম বাধ্য হয়েই তদন্তের এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে ব্যাঙ্কটি। সেবির প্রাক্তন চেয়ারম্যান এম দামোদরণ বলেন, 'বোর্ডের অভিপ্রায়টি ভাল, কিন্তু তদন্তের সময়টা ঠিক নয়। সেবির প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারির সময়ই এই তদন্ত করতে হত। আমার মতে সিইও কয়েক মাসের জন্য পদত্যাগ করতেন এবং তদন্ত শেষ হলে তার ফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হত।'