দু'কামড়ার ফ্ল্যাট থেকে ৮.৩ লক্ষে বর্গফুটের ক্যাম্পাস, জানুন ফ্লিপকার্টের অজানা ইতিহাস
একটি ২ কামড়ার ফ্ল্যাট থেকে অনলাইন বুক বিক্রেতা হিসাবে যাত্রা শুরু করে ফ্লিপকার্ট । গত 11 বছরে এটি ভারতের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স কোম্পানী হয়ে উঠছে।
বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বড় অধিগ্রহন চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে ফ্লিপকার্ট। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আজই মার্কিন রিটেইল জায়ান্ট ওয়ালমার্টের সঙ্গে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি হবে। আজকে যারা এতবড় চুক্তি করতে চলেছে, তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল কোথা থেকে জানেন? একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট। হ্যাঁ একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে অফিস বানিয়েই নিজেদের উদ্যোগ-স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়েছিল আইআইটি-দিল্লির দুই স্নাতক। আর পাঁচজনের মতো চাকরির নিশ্চিন্ত পথে না থেকে নিজেরা কিছু করতে চেয়েছিলেন শচীন বানসাল ও বিনি বানসাল। আজ সেই যাত্রাপথের বড় বাঁকের সামনে দাঁড়িয়ে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত এগারো বছরের পথটা কেমন ছিল।
আজ থেকে ১১ বছর আগে, ২০০৭ সালে ফ্লিপকার্ট সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন শচীন বানসাল ও বিনি বানসাল। দুজনেই চণ্ডীগড়ের আর পদবীও এক। তাই অনেকেরই ধারণা তাঁরা বোধহয় আত্মীয়। কিন্তু ধারণাটি ভুল। দুজনেই পড়াশোনা করেছেন আই আই টি-দিল্লিতে। সেখানে অবশ্য দুজনে আলাদা ব্যাচের ছিলেন। তাঁদের বন্ধুত্ব জমে ওঠে অ্যামাজনে একসঙ্গে কাজ করার সময়।
আগেই বলা হয়েছে সংস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি দু'কামড়ার ফ্ল্যাটবাড়িতে। সাই ফ্ল্যাটটি ছিল বেঙ্গালুরুর কোরামঙ্গলা এলাকায়। শুরুতে অবশ্য ফ্লিপকার্ট ছিল শুধুই একটি অনলাইন বুকস্টোর। এক্ষেত্রে অ্যামাজনের সঙ্গে তাদের বেশ মিল রয়েছে। অ্যামাজন সংস্থাটিও জেফ বেজোস শুরু করেছিলেন একটি অনলাইন বুক স্টোর হিসেবেই। এই সীমিত ক্ষমতা নিয়ে শুরু করেই আজ ফ্লিপকার্ট দেশের বৃহত্তম ই-কমার্স সংস্থা হয়ে উঠেছে।
২০০৮-এ বেঙ্গালুরুতে সংস্থার প্রথম অফিস খোলা হয়। ২০০৯-এর মধ্যে দিল্লি ও মুম্বইতে চালু হয় আরও দুটি অফিস। গত মাসেই ফ্লিপকার্ট তার বেঙ্গালুরুর সবকটি অফিস একটি ক্যাম্পাসের মধ্যে নিয়ে এসেছে। ক্যাম্পাসটির আয়তন জানেন? ৮.৩ লক্ষ বর্গফুট!
ফ্লিপকার্ট কর্তৃপক্ষ বুঝেছিলেন দ্রুত ব্যবসা বৃদ্ধি করতে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ২০১১-য় সিঙ্গাপুরেও পারি দেয় ফ্লিপকার্ট।
ফ্লিপকার্টের অফিসে শচীন বানসাল ও বিনি বানসাল
৯ বছর ধরে একটানা সংস্থার সিইও-র দায়িত্ব সামলেছেন শচীন বানসাল। ২০১২ সালে, বিনি বানসাল ওই পদের দায়িত্ব নেন। শচীন হন এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান।
গত বছর ফ্লিপকার্টের বিনিয়োগকারী টাইগার গ্লোবালের এক্সিকিউটিভ কল্যাণ কৃষ্ণমূর্তি ফ্লিপকার্টের সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। বিনি বানসাল হয়েছেন পুরো গোষ্ঠীর সিইও। ফ্লিপকার্ট বানিজ্য গোষ্ঠীতে আছে ফ্যাশন পোর্টাল মিন্ত্রা-যাবং, পেমেন্ট ইউনিট ফোনপে এবং লজিস্টিক ফার্ম ইকার্ট।
২০১৪ সালে প্রায় 300 মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফ্যাশন রিটেইলার মিন্ত্রা অধিগ্রহন করেছিল ফ্লিপকার্ট। এরপর ২০১৬-য় ৭০ মিলিয়নেরও বেশি ডলারে তারা কিনেছিল আরেক অনলাইন পোশাক বিপনী যাবং-কে। ওই একই বছরে ফ্লিপকার্ট স্টার্টআপ সংস্থা ফোনপে-ও অধিগ্রহন করে ফ্লিপকার্ট। তে। আবার ২০১৭ সালে ইকুইটি স্টেক বিনিময়ের মাধ্যমে ইবে সংস্থা ৫০ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয় এবং তাদের ইবেডটইন ব্যবসাটি ফ্লিপকার্টকে বিক্রি করে দেয়।
বর্তমানে ফ্লিপকার্টের সবচেয়ে বেশি অংশীদারি রয়েছে জাপানের সফটব্যাংক-এর হাতে। তারা ফ্লিপকার্টের ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এর আগে ফ্লিপকার্টে বিনিয়োগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিয়া এবং ইন্টারনেট জায়ান্ট ন্যাসপার্স, তাদের হাতে আছে ১৩ শতাংশ অংশীদারী। অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের টাইগার গ্লোবাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইভেট-ইকুইটি ফার্ম অ্যাক্সেল পার্টনার্স, চিনের টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ইবে ইনকর্পোরেটেড এবং মাইক্রোসফ্ট কর্পোরেশন।