একদিনও চলেনি পতঞ্জলীর 'কিম্ভো' অ্যাপ, কিন্তু তাও 'ভূয়ো' বাছতে প্লে স্টোর উজার
আসল অ্যাপটি সরিয়ে দেওয়া হলেও প্লে স্টোরে এখন ভুয়ো পতঞ্জলী কিম্ভো অ্যাপের ছড়াছড়ি।
একদিনও চলেনি বাবা রামদেবের পতঞ্জলী কমিউনিকেশনস-এর মেসেজিং অ্যাপ 'কিম্ভো'। লঞ্চ করার পরই পতঞ্জলীর অ্যাপটি সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের সম্মুখীন হয়। মোবাইল নিরাপত্তা গবেষকরা জানায় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতি দুর্বল। এর পরপরই অ্যাপটি তুলে নেওয়া হলেও অ্যাপ স্টোরগুলি কিম্ভোর নকলে ছেয়ে গেছে।
গত বুধবার রাতেই চলা শুরু করেছিল কিম্ভো। একটা দিন যেতে না যেতেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন কিম্ভোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব খারাপ। সহজেই অ্যাপটির 'ভেরিভিকেশন প্রসেস' 'বাইপাস' করে চ্যাট বা ব্যবহারকারীদের অন্যান্য ডেটা অ্যাক্সেস করা যাবে।
তথ্য সুরক্ষার লঙ্ঘনের রিপোর্টগুলি আসতে শুরু করার পরেই গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর, দু'জায়গা থেকেই পতঞ্জলী 'কিম্ভো' অ্যাপকে তুলে নেয়। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার সকালেই অ্যাপটি সরিয়ে দেওয়া হয় সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও। অবশ্য সুরক্ষা জনিত গাফিলতি আছে তা মানতে চায়নি পতঞ্জলি কমিউনিকেশনস। তাদের দাবি 'অতি উচ্চ চাহিদা কারণে' অ্যাপটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে!
আসল মজার ঘটনাটা ঘটেছে তারপরেই। কিম্বো অ্যাপের মক-আপ-এ প্লে স্টোর ছেয়ে গেছে। 'কিম্ভো' বা 'কিম্ভো অ্যাপ' বা 'পতঞ্জলী কিম্ভো অ্যাপ' লিখে সার্চ করলে একই নামের অসংখ্য অ্যাপস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন ডেভেলপাররা সেইসব অ্যাপগুলি বানিয়েছেন। দিন দিন কিম্ভো নামের অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে।
বলা বাহুল্য এইসব ভূয়ো অ্যাপ ডাউনলোড করা একেবারেই উচিত নয়। যেসব সিকিওরিটি বিশেষজ্ঞ আসল কিম্ভো অ্যাপটি নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদেরও বিস্ময় জাগিয়েছে এই অ্যাপগুলি। অনেকেই বলছেন, ভারতীয় অ্যানড্রয়েড ডেভেলপাররা এত দ্রুত কাজ করে তা তাদের জানা ছিল না।
এমনকী, পতঞ্জলি সংস্থাও টুইটারে এই জাল অ্যাপগুলির কথা তুলেছে। তারা ব্যবহারকারীদের এই অ্যাপগুলির বিষয়ে সচেতনও করেছে। তারা স্পষ্টই জানিয়েছে কোনও প্ল্যাটফর্মেই আর তাদের অ্যাপটি ডাউনলোড করার সুযোগ নেই। এই নামে অনেক ডুপ্লিকেট অ্যাপ্লিকেশনের কথাও তারা বলেছে। তাদের বক্তব্য ওই অ্যাপগুলি ডাউনলোড করে ব্যবহারকারীদের কোনও ক্ষতি হলে তাদের কোনও দায়িত্ব থাকবে না।
তবে ভূয়ো অ্যাপগুলিতে ধরা খুব মুশকিল। ডেভেলপাররা শুধুমাত্র কিম্ভোর নামই ব্যবহার করেনি, এর লোগোও লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনে। কয়েকটি আবার বিশ্বাসযোগ্য করতে রামদেবের ছবিও লাগিয়েছে। আপাতত অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে তুলে নেওয়া হলেও, পতঞ্জলি এও বলে রেখেছে শীঘ্রই অ্যাপটি ফিরবে।
তবে শুধু কিম্ভোর ক্ষেত্রেই নয়, অনেক নামী অ্যাপেরই যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য চেহারার ভূয়ো সংস্করণ থাকে প্লেস্টোরে বা অ্যাপ স্টোরে। এসব অ্যাপের চক্করে কিন্তু ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যেতে পারে অসত হাতে। জেনে নেওয়া যাক প্লে স্টোরে কীভাবে একটি জাল অ্যাপ্লিকেশন ধরা যায়।
- প্রথম কাজ, অ্যাপটির নাম চেক করা। তবে ভূয়ো অ্যাপগুলিও কাছাকাছি নামই ব্যবহার করে।
- তাই, এরপর দেখতে হবে ডেভেলপারের নাম। আসল অ্যাপটির ডেভেলপারের নাম জানা থাকলে এটা দেখেই আসল অ্যআপটিকে চিনে নেওয়া যাবে।
- নাহলে, চোখ রাখতে হবে অন্যান্য ব্যবহারকারীরা কি বলছেন, অর্থাৎ রিভিউ-এ। ভূয়ো হলে, অনেক ব্যবহারকারীই তা লিখে দেন রিভিউ সেকশনে। তবে অনেক সময় ডেভেলপাররাও বিশ্বাসযোগ্য করতে রিভিউ সেকশনে নিজেরাই ভাল ভাল কথা লিখে দেয়।
- সেক্ষেত্রে দেখতে হবে কত সংখ্যক মানুষ অ্যাপটি ডাউনলোড করেছে। ভূয়ো হলে বেশি মানুষ সেটি ডাউনলোড করবে না।
- তারপরেও ডাউনলোড করার আগে এর বিবরণটা ভাল করে পড়ে নেওয়া উচিত।
- সব শেষে একবার রেটিংটা দেখে নিতে হবে।