বাজেটের আগে ফের কল্পতরু মোদী সরকার, জিএসটি-তে এল আরও ছাড়
পণ্য পরিষেবা করে এবার একগুচ্ছ বদলের কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরণ জেটলি। বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে যে একগুচ্ছ ঘোষণা করা হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প মহল।
পণ্য পরিষেবা করে এবার একগুচ্ছ বদলের কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরণ জেটলি। বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে যে একগুচ্ছ ঘোষণা করা হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প মহল। জিএসটি নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের যে ক্ষোভ ছিল তাতে মলম লাগাতেই লোকসভা নির্বাতনের আগে এই ঘোষণা বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন ঘোষণার ফলে জিএসটি জমার পদ্ধতি সরল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই আশা করা হচ্ছে। এদিন কী কী ঘোষণা হল এবং তার প্রেক্ষিতে কী কী প্রশ্ন উঠে আসছে, একনজরে তা-
দ্বিগুণ হল জিএসটি-র সীমা
বার্ষিক ২০ টাকার ব্যবসা হলেই তাতে জিএসটি নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক ছিল। এবার সেই সীমা বাড়িয়ে ৪০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর মানে ৪০ লক্ষ টাকার নিচে বার্ষিক ব্যবসা হলে জিএসটি নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক নয়। যদিও, ২০ লক্ষ-এর সীমা না ৪০ লক্ষ টাকার সীমা- তা রাজ্য সরকারগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজ্যগুলি যদি ৪০ লক্ষ টাকার জিএসটি সীমা লাগু করতে চান তাহলে তা ৭ দিনের মধ্য়ে কেন্দ্রকে চূড়ান্ত করতে হবে।
পরিষেবা-তে সীমা অপরিবর্তিত থাকছে
পরিষেবা সরবরাহকারী সংস্থাগুলি-র ক্ষেত্রে সীমা ২০ লক্ষ টাকাই থাকছে। তবে উত্তর-পূব্ব ভারতের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এই সীমা ছিল ১০ লক্ষ টাকা। নতুন সিদ্ধান্তে তা ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু, এক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য। তাঁরা ২০ লক্ষ টাকার জিএসটি সীমা লাগু করলে তবেই তা প্রযোজ্য হবে।
জিএসটি কম্পোজিশন প্রকল্পের সুবিধা
বছরে পণ্য ব্যবসার অঙ্ক দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত হলে এই প্রকল্পের আওতায় আসা যাবে। আগে এই সীমা এক কোটি টাকা পর্যন্ত ছিল। এর ফলে জিএসটি-র জটিল পদ্ধতিতে না ঢুকেই শর্তসাপেক্ষে মোট আয়ের ১ শতাংশ কর মেটানো যাবে। এই প্রকল্পে কাঁচামালের জন্য আগে মেটানো কর ফেরত পাওয়া যাবে না যা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট নামে পরিচিত। এক্ষেত্রেও রাজ্যগুলোকে জানাতে হবে তারা কম্পোজিশন প্রকল্প চায় কি না।
পরিষেবা ক্ষেত্রেও কম্পোজিশন প্রকল্পের সুবিধা
৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যদি কোনও পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় বার্ষিক আয় হয় তাহলে তাঁরাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে ৬ শতাংশ কর গুণতে হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য জিএসটি ৩ শতাংশ করে লাগবে। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে এই কর আগে ছিল ৫ শতাংশ।
কর জমার সরলিকরণ
কম্পোজিশন প্রকল্পে কর জমার প্রক্রিয়া সরল হবে এবং প্রতি ত্রৈমাসিক কর দিতে হলেও বছরে একবারই রিটার্ন ভরা যাবে।
কেরলকে বিশেষ অনুমতি
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত কেরলের পুনর্গঠনে প্রচুর অর্থ চাই। সে কারণে ওই রাজ্যের এলাকার মধ্যে হওয়া পণ্য-পরিষেবা সরবরাহে দু'বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১শতাংশ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সেস বসাতে পারবে সেখানকার রাজ্য সরকার।
এপ্রিল থেকে লাগু
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। বিনামূল্যে ছোট করদাতাদের বিনামূল্যে সফটওয়্য়ার দেবে জিএসটিএন। আবাসন শিল্পেও কম্পোজিশন প্রকল্প চালুর প্রস্তাবকে সাত সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হয়েছে। লটারিতে করের হার কেমন হবে তা ঠিক করতে মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছা
'জিএসটি পরিষদ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। এতে ছোট-মাঝারি শিল্প, ব্যবসায়ী এবং পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য সহায়ক হবে। সরল ও আমজনতা-বান্ধব জিএসটি-র জন্য আমরা দায়বদ্ধ।'- এই বার্তা দিয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রয়েছে বিতর্ক
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এমনিতেই জিএসটি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রায় নাগাড়ে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে এই ছাড়ে যে রাজস্ব কমবে তা কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে? রাজকোষের ঘাটতি মেটাতে লক্ষ্যমাত্রাটা তাহলে কেমন হবে?
অরুণ জেটলির দাবি
'ক্ষতি আখেরে কতটা হবে, এখনই তার আঁচ পাওয়া শক্ত। আগেও দেখা গিয়েছে ইনপুট ট্য়াক্স ক্রেডিটের সুবিধা পেতে বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও জিএসটি-তে নথিভুক্ত হয়েছে প্রায় ১-.৯৩ লক্ষ সংস্থা। ফলে এখন কত সংস্থা সেই পথে হাঁটবে আগে তা দেখা জরুরি। ক্ষতি নির্ভর করবে তাতেই।'