ডলারের তুলনায় টাকার দামে সর্বকালীন পতন, ৭৮–এ নেমে এসেছে ভারতীয় মুদ্রা, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
দেশের অর্থনীতির করুণ হাল অব্যাহত। সোমবারও জারি রইল টাকার দামে পতন। ডলারের তুলনায় সর্বকালীন পতন দেখা দিল টাকায়। এই প্রথমবার সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়ে ডলারের তুলনায় টাকার দাম হল ৭৮ টাকা। স্থানীয় মুদ্রা শুক্রবার ৭৭.৮৪-এর খুব কাছে এসেও বিপরীতে সোমবার প্রতি মার্কিন ডলার ৩৬ পয়সা কমে ৭৮.২৯-তে লেনদেন শুরু করে। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি, ডলারকে ক্ষমতায়িত করার চেষ্টা ও স্থানীয় বাজার থেকে বিদেশি তহবিলের ক্রমাগত বহিঃপ্রকাশ গত কয়েক সময় ধরে দেশীয় মুদ্রাকে চাপে ফেলে দিয়েছে।
টাকার সর্বকালের পতন
গত সপ্তাহের তুলনায় টাকা ২১ পয়সা কমে গিয়েছে গ্রীনব্যাকের বিপরীতে। অন্যদিকে, সোমবার ভারতের বেঞ্চমার্ক ১০ বছরের বন্ডের ফলন তিন বছরেরও বেশি সময়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। টাকার এই সর্বকালের পতনের পিছনে বিশেষজ্ঞরা একাধিক কারণকে দায়ি করেছে। পিএমএস হেম সিকিউরিটির প্রধান মোহিত নিগম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'এই খারাপ অবস্থার পিছনের কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত এফআইআই বিক্রি, বন্ডের ক্রমবর্ধমান ফলন, তেলের দাম বৃদ্ধি এবং আগামী ত্রৈমাসিকের জন্য মুদ্রাস্ফীতির চাপ।'
লগ্নিকারীরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন
টাকার দাম পতনে লগ্নিকারীরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দালাল স্ট্রিটে শুরু হয় দোলাচল। বাজার থেকে একাধিকবার গায়েব হয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে ভারতের শেয়ার বাজারেও। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সে ব্যাপারে এখনই তারা কিছু বলতে পারছে না।
মার্চ মাসে টাকার দাম
গত মার্চ মাসের শুরুতে ডলারের পরিবর্তে টাকার দাম পৌঁছায় ৭৭ টাকায়। এরপর মে মাসের শেষে সেই দাম পৌঁছায় ৭৭ টাকা ৭৩ পয়সায়। কিন্তু সোমবার ডলারের তুলনায় টাকার দাম একধাক্কায় ৭৮-এ নেমে আসে। যেভাবে ডলারের তুলনায় টাকার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে তাতে উদ্বিগ্ন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। ফরেক্স ট্রেডার্সদের মতে, এশিয়ার মুদ্রার এই দুর্বল অবস্থার জন্য ঘরোয়া ইক্যুইটি এবং ক্রমাগত বিদেশী পুঁজি বহিঃপ্রবাহ বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের ওপর প্রভাব ফেলছে।
আর্থিক কঠোরকরণের প্রয়োজন
সোমবার ডলার ০.৪ শতাংশের ওপরে উঠেছিল এবং ১৩৫ ইয়েনের ২০ বছরের সর্বোচ্চ শিখরে আঘাত দিয়েছিল। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, এখনই ধস থামবে না। মুদ্রার দাম নেমে যেতে পারে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আইএনজি মার্কেটের গ্লোবাল হেড ক্রিস টার্নার বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বিস্তৃতভাবে মুদ্রাস্ফীতি মোবাকাবিলায় আর জোরদার আর্থিক কঠোরকরণের প্রয়োজন রয়েছে।'
বেড়েছে রেপো রেট
এপ্রিলে রেপো রেট এবং রিভার্স রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরবিআই। তবে গত ৪ মে একটি জরুরি সভায় আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়ে দেন, ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে রেপো রেট পৌঁছোচ্ছে ৪.৪০ শতাংশে। ধারণা করা হচ্ছে, অগাস্টের মধ্যে রেপো রেটে আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট জুড়তে পারে আরবিআই। নইলে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে।