২৪-এর ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে ‘রোড-ম্যাপ’ তৈরি বিজেপির, কী কী করতে হবে সাংসদের
বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ২৪-এর লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়ানো বিরাট চ্যালেঞ্জের। আরএসএস সম্প্রতি যে সমীক্ষা রিপোর্ট সামনে এনেছে, তাতে বিরাট বিপর্যয়ের ইঙ্গিত রয়েছে।
বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ২৪-এর লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়ানো বিরাট চ্যালেঞ্জের। আরএসএস সম্প্রতি যে সমীক্ষা রিপোর্ট সামনে এনেছে, তাতে বিরাট বিপর্যয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। তাই বিজেপি ঘুরে দাঁড়াতে এখন থেকেই অঙ্ক কষতে শুরু করেছে। সাংসদের স্থির করে দিয়েছে গেম-প্ল্যান।
ডায়লগবাজি করলে হবে না, জনসংযোগ করতে হবে
বাংলায় বিজেপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে। বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে বিজেপির। এই অবস্থায় ফের জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে সাংসদদের নির্দেশিকা দিল বিজেপি। সাংসদদের জন্য তৈরি করে দিল রোড-ম্যাপ। সাফ কথা, শুধু ডায়লগবাজি করলে হবে না, জনসংযোগ করতে হবে।
মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে সাংসদদের
দলের পক্ষ থেকে সংসদদের বার্তা দেওয়া হয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মানুষের বিশ্বাস অর্জনই একমাত্র সোপান হতে পারে বিজেপির ফের বাংলায় গুরুত্বের আসনে ফিরে আসার। বিজেপির তরফে সাফ জানানো হয়েছে, শুধু দলীয় কর্মীসভা বা সমাবেশ করে কিছু হবে না। এলাকার মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। তবেই আসতে পারে সাফল্য। নচেৎ নয়।
মানুষের দরবারে যেতে হবে এখন থেকেই
২০২৪-এর নির্বাচনে সাফল্যের সন্ধান পওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে, যদি না বিজেপির সাংসদরা এখন থেকে সচেতন হন। এখনও দেড় বছর বাকি রয়েছে ভোটের। তার আগে মানুষের দরবারে যেতে হবে। বিজেপির বর্তমান অবস্থান যে এ রাজ্যে এই মুহূর্তে সঠিক নেই তা মনে করিয়েই দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে সরাসরি ময়দানে নেমে জনসংযোগের বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আদি নেতাদের সক্রিয় করে এগোতে হবে
কেন্দ্রীয় বিজেপিও এবার বুঝেছে, দলের কেন শোচনীয় হাল। বাংলায় দলের আদি নেতা-কর্মীরা বসে গিয়েছে। তাঁদেরকে ফের সক্রিয় করতে হবে। বর্তমান বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে বলা হয়েছে আদি নেতাদের সামনে আনতে। এ ব্যাপারে সাংসদদের অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিজেপিতে যাতে আদি নেতারা অপমানজনক অবস্থায় না পড়েন, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রাস্তায় নেমে কাজ করতে হবে, মাঠে-ময়দানে ছুটতে হবে
সেইসঙ্গে জানানো হয়েছে- সাংসদরা কী করবেন, কী করবেন না। বাংলার সাংসদদের কড়া বার্তা পাঠিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে কাজ করতে হবে। মাঠে-ময়দানে ছুটতে হবে। আরও বেশি করে আন্দোলন করতে হবে। আর তা করতে হবে মানুষের প্রয়োজনে। মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে। তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সপ্তাহে অন্তত একদিন করে বিধানসভা কেন্দ্রে ভ্রমণ
বিজেপির নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রত্যেক সাংসদকে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ঘুরতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন করে বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য সময় দিতে হবে। সাংসদদের। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জনসংযোগ কর্মসূচিতে জোর দিতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতে যুক্ত করতে হবে নীচুতলার নেতা-কর্মীদের।
সহযোগিতায় কোনও কালবিলম্ব করা যাবে না
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের তৈরি করা রোড-ম্যাপে জানিয়েছে, যে কোনও প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনে অর্থ সাহায্যই হোক বা পরিষেবা পেতে সমস্যা, সহযোগিতায় কোনও কালবিলম্ব করা যাবে না। স্থানীয় মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে, যে কোনও সমস্যায় পাশে আছেন সাংসদ। সঠিকভাবে এই প্র্যাকটিস করতে না পারলে ২০২৪-এ সমূহ বিপদের মুখে পড়তে হবে বিজেপিকে।
২০২৪-এ ফের বাংলায় বিজেপির উত্থান ঘটাতে
২০২১-এ শোচনীয় পরাজয়ের পর বিজেপি চাইছে ২০২৪-এ ঘুরে দাঁড়াতে। ২০১৯-এর সাফল্যকে পাথেয় করে ২০২৪-এ বিজেপি ফের বাংলায় উত্থান ঘটাতে চাইছে। সম্প্রতি আরএসএসের তরফে একটি সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্তমানে বাংলায় বিজেপির হাল খুবই খারাপ। আরএসএসের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪-এর লোকসভায় তেমন কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না বিজেপির জন্য।
জনগোষ্ঠীর ভোটে দুই আসনে এগিয়ে, তাও অনিশ্চিত
সমীক্ষা রিপোর্টে দাবি, ২০১৯ পাওয়া ১৮ আসন বিজেপি ধরে রাখতে পারবে না। ১৮ আসনের মধ্যে বড়জোড় দুটি আসন পেতে পারে বিজেপি, এমনই আভাস দেওয়া হয়েছে সমীক্ষায়। তাও দুটি আসন নিশ্চিত নয় বলে সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বিজেপির জেতা আসানসোল কেন্দ্রের উপনির্বাচনে গোহারা হেরেছে বিজেপি। বাবুল সুপ্রিয় মাইনাস হতেই বিজেপির হার এই আসনে। পাহাড়ের গোর্খা আর সমতলের মতুয়া জনগোষ্ঠীর ভোটের দিকে তাকিয়ে দুটি আসন জয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সমীক্ষা রিপোর্ট।