বিজেপি ছন্নছাড়া বিধানসভায়, নেতৃত্বহীনতাকেই দুষছেন দলের বিধায়কদের একাংশ
বিজেপি ছন্নছাড়া বিধানসভায়, নেতৃত্বহীনতাকেই দুষছেন দলের বিধায়কদের একাংশ
বাংলায় ৭০ জন বিধায়ক নিয়ে ছন্নছাড়া বিজেপি। বিধানসভায় গঠনতান্ত্রিক বিরোধিতা করতে পারছেন না তাঁরা। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? বিরোধী হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও কেন প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনে ব্যর্থ বিজেপি? বিজেপির একাংশ মনে করছে, নেতৃত্বহীনতাই বিজেপির ছন্নছাড়া অবস্থার জন্য দায়ী।
বিজেপি নেতৃত্বহীনতা প্রকট বিধানসভায়
বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বিরোধী দলনেতা হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, কারণ তিনি বিধানসভায় সাসপেন্ড। ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনে তিনি যোগ দিতে পারছেন না। তাঁর এই সাময়িক বহিষ্কার দলকে ফেলে দিয়েছে বিপাকে। বিজেপি নেতৃত্বহীনতার কারণে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
বিজেপি আদালতে, দীর্ঘসূত্রিতা প্রকট
বিজেপি এই সাসপেনশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়েছে। তাঁরা অধ্যক্ষের কাছে আবেদন জানাননি। আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়ায়, তা যে দীর্ঘসূত্রী হবে, তা বলাই যায়। আদালত আবার বলে দিয়েছে, এই বিষয়টি বিধানসভায় মিটিয়ে নিতে। তারপর যদিও বা স্পিকার বা অধ্যক্ষের কাছে তারা আবেদন করে, কিন্তু সেখান কৌশলে সাসপেনশন নিয়ে আদালতে পদক্ষেপ করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
বিজেপি আদালতের মুখাপেক্ষী সাসপেনশনে
বিজেপি স্পষ্ট জাবিয়ে দিয়েছে, আমরা এই সাসপেনশনের বিষয়টি বিধানসভার রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু সাসপেনশন প্রত্যাহারের আবেদন থেকে আদালতের অংশটি বাদ দিতে চান স্পিকার। বিজেপি তার বিরোধিতা করছে। কারণ তারা চায় এই বিষয়টির মীমাংসা হোক আদালতেই। আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আবেদন না করলে আদালতকে অসম্মান করা হত। আমরা চাই আদালতই বলুক, আবেদন সঠিক না বেঠিক।
শুভেন্দুকে থাকতে হচ্ছে বিধানসভার বাইরেই
বিজেপি পুরোপুরি আদালতের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ায় পরিষদীয় দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ সাত বিধায়ককে অধিবেশনের বাইরেই থাকতে হচ্ছে। ফলে শাসকদলের মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ সাত সদস্যকে তাঁরা পাচ্ছেন না। সবথেকে বড় কথা তাঁদের নেতা শুভেন্দুকে থাকতে হচ্ছে বিধানসভার বাইরেই। শুভেন্দু প্রতীকী প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিধানসভায় গঠনতান্ত্রিক বিরোধিতায় ব্যর্থ বিজেপি
শুভেন্দু সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় দলের বিভি্ন কর্মসূচিতে চলে যাচ্ছেন। বিধানসভায় পূর্ণ সময় দিতে তিনি পারছেন না। ফলে দল নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে। কে দলকে নেতৃত্ব দেবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ফলে বিধানসভায় গঠনতান্ত্রিক বিরোধিতা করতে পারছে না বিজেপি। হারাকিরি করে বিধানসভায় সাসপেনশনের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপি বিধায়কদের, তার মাশুল গুণতে হচ্ছে এখন।
বিজেপি বিরোধিতার জায়গায় ব্যর্থ হচ্ছে বিধানসভায়
বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ নানা বিল পাস করিয়ে নিচ্ছে শাসকদল। বিজেপি বিরোধিতার জায়গায় থাকলেও সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছেন না নেতৃত্বহীনতা। মঙ্গলবার ভিজিটরের চেয়ারে শিক্ষামন্ত্রীকে বসাতে বিতর্কিত বিল আান হয়েছিল। সেই বিলের উপর আলোচনায় বিরোধিতা করেও শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি এড়াতে ওয়াক আউট করে বিজেপি। বিনা ভোটাভুটিতে বিল পাস হয়ে যায়।
নেতৃত্বের অনুপস্থিতির কারণেই পরিষদীয় দলে ভুলভ্রান্তি
বিজেপি এখন না পারছে বিরোধিতা করে সরকারকে আটকাতে, না পারছে বিধানসভার বাইরে আন্দোলনকে জোরদার করতে। তাই বিজেপির একাংশ বিধায়ক মনে করছে, নেতৃত্বের অনুপস্থিতির কারণেই পরিষদীয় দলের নানা ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। সংখ্যার কারণে বিল পাস আটকানো যেত না ঠিকই কিন্তু গঠনতান্ত্রিক বিরোধিতা করা যেত। তা করতে পারল না বিজেপি। বিজেপি মনে করছে, শুভেন্দু অধিকারী-সহ সাত বিধায়ককে কৌশলে বাইরে রেখে সহজে কাজ হাসিল করে নিচ্ছে শাসক দল।
আইনি লড়াই শিকেয় তুলে মানুষকে নিয়ে আন্দোলন
বিজেপির একাংশ মনে করছে, পরিষদীয় দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, অভিজ্ঞ নেতৃত্বর অভাবের কারণে তাঁদের ভুগতে হচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা বলছি মুখে। কিন্তু রাজনৈতিক লড়াইকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। প্রাধান্য দিচ্ছি আউনি লড়াইকে। তা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে রাজনীতির আঙিনা থেকে। আমাদের উচিত আইনি লড়াই শিকেয় তুলে মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করা। আগামী দিনে মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করতে না পারলে কঠিন হবে ফিরে আসা।
বিরোধী ভূমিকায় আদালতই, বিজেপি গৌণ
উল্লেখ্য, বিজেপি বাংলা বিধানসভা একমাত্র বিরোধী দল। এবার বিজেপি ৭৭ আসনে জয় পাওয়ায়, তারা শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে রাজ্য বিধানসভায় গঠনতান্ত্রিক ভূমিকা নেবে বলে আশা করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু সমস্ত বিষয়ে আইনি নির্ভরতা বিজেপিকে রাজনৈতিক আন্দোলন ও বিরোধিতা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে যা কিছু সবই চলে যাচ্ছে আইনের দরজায়। বিরোধী ভূমিকায় বেশি করে দেখা যাচ্ছে আদালতকেই, বিজেপি সেখানে গৌণ হয়ে যাচ্ছে।
বিজেপির ১৭ বিধায়ক কোথায় গেল! বিধানসভায় ভোটাভুটির পর জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে