বিজেপি কি আদৌ তৈরি তৃণমূলকে লড়াই দিতে! কলকাতা পুরভোটের আগে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে 'দীনতা'
বিজেপির মুখ কে কলকাতায়! শুধু কর্মীদের ভরসায় কি ফায়দা হবে আসন্ন পুরভোটে
২০২১-এ তৃণমূলের কাছে একপ্রকার পর্যুদস্ত হতে হয়েছে বঙ্গ বিধানসভায়। তারপর উপনির্বাচনেও বিজেপি সাফল্য পায়নি। এই অবস্থায় কলকাতা পুরসভা ভোটে বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়বে এমনটাই মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু বিজেপির এই বিলম্বিত প্রার্থী বাছাই এবং কলকাতা পুরসভা ভোটে আদতে তাঁদের কোনও মুখ না থাকা ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাদের সাফল্যপ্রাপ্তিকে।
কলকাতা পুরসভা ভোটের আগে তেমন উদ্দীপ্ত নয় বিজেপি
২০১৯-এ বিজেপি যে সাফল্য এলেছিল লোকসভা নির্বাচনে তার প্রতিফলন পড়েনি ২০২১-এর বিধানসভায়। বিজেপি বাংলার প্রধান বিরোধী দল হয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু তৃণমূলকে হারিয়ে সরকার গড়ার যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল কার্যত সেই আশার পরিসমাপ্তি হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে। রাজনৈতিক মহলে মনে করেছিল, এবার পুরসভায় নিশ্চয় বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু তেমন কোনও উদ্দীপনা দেখা যায়নি বিজেপির মধ্যে।
বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে সপ্তাহকাল পার
যেখানে তৃণমূলের আগে বামেরা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে সবার আগে, সেখানে বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে সপ্তাহকাল কাটিয়ে দেয়। বহু প্রতীক্ষার পর সোমবার বিজেপি নেতৃত্ব প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এতদিন জল্পনা চলছিল, বিজেপি কি ১৪৪ ওয়ার্ডে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না, তাই এত বিলম্ব প্রার্থী ঘোষণায়। সেই জল্পনার জবাব অবশ্য ১৪৪ ওয়ার্ডেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি।
মরীচিকার পিছনে না ছুটে দলের আদর্শে বিশ্বাস যাঁদের
বিজেপি এবার প্রার্থী তালিকায় গুরুত্ব দিয়েছে নিচুতলার নেতা-কর্মীদের। বিশেষ করে দল-অন্ত প্রাণ, আদি নেতা-কর্মীদের এবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মরীচিকার পিছনে না ছুটে দলের আদর্শের প্রতি যাঁদের বিশ্বাস, তাঁদেরকেই সামনে এনেছে বিজেপি। রাজনীতির পরিসর থেকে সরে তাঁরা চিকিৎসক, আইনজীবী বা সমাজের অন্য ক্ষেত্রের মানুষকে পুর-পরিষদে আনতে চেয়েছেন। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলাদেরও।
পুরভোটে বিজেপিকে বিড়ম্বনায় পড়তে যাতে না হয়
বিজেপি এ ব্যাখ্যা দিয়েছে, কেন তাঁদের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করতে দেরি হল। বিজেপি এবার কোনও বিতর্ক চাইছে না। দলের মধ্যে কোনও অসন্তোষ হোক প্রার্থী নিয়ে, তাও চাইছে না বিজেপি নেতৃত্ব। এবং একইসঙ্গে তাঁরা নিশ্চিত করতে চাইছে, এমন কাউকে প্রার্থী করা হবে না, যিনি জেতার পর দল ছেড়ে অন্য দলে ভিড়ে যাবেন। বিধানসভায় বিজেপিকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে, হচ্ছেও। তাই এবার সতর্ক হয়েই তাঁরা নেমেছে প্রার্থী চয়নে।
পুরসভা ভোটে জুতসই কোনও নাম নেই বিজেপির
সব যুক্তি মানলেও, কলকাতায় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি পুরসভা নির্বাচনে পার্টির মুখ নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী কে, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে নেতৃত্বও। ঠিক যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনে, পুরসভা নির্বাচনেও একই সংকটের মুখ বিজেপি। বিধানসভায় তবু একাধিক নাম ছিল, কিন্তু পুরসভায় জুতসই কোনও নাম নেই বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে।
গেরুয়া রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা ধূলিসাৎ শোভনের
বিজেপি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে নিয়েছিল, কলকাতায় মুখ করতেও চেয়েছিল। কিন্তু বিজেপির সেই পরিকল্পনা বেশিদূর খাটেনি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে নেওয়ার পর সক্রিয় করতেই দেড় বছর প্রায় কেটে যায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যদিওবা তিনি একটু সক্রিয় হন, ভোটের মুখে রণেভঙ্গ দেন। তিনি কার্যত রাজনীতি থেকে দূরে বর্তমানে। তিনি নির্বাচনের আগেই বিজেপির সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ত্যাগ করে গেরুয়া রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনের পরই তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন সব্যসাচী
শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই সুযোগ দেননি শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বিজেপি পুরসভা লড়াইয়ের দিকে চেয়ে তৃণমূল ভাঙিয়ে আরও এক মেয়রকে দলে নিয়েছিল। সেই সব্যসাচী দত্তও বিজেপি ছেড়ে বিধানসভা নির্বাচনের পরই ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। ফলে কলকাতায় সে অর্থে বড় নাম নেই বিজেপির প্রার্থী তালিকায়।
তৃণমূল কোনও ঝুঁকি নিয়ে চায়নি পুরভোটের লড়াইয়ে
বিজেপি এবার কলকাতা নির্বাচনে তৃণমূলকে কতখানি চ্যালেঞ্জ দিতে পারে তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে। কেননা বিধানসভা হেরে মুষড়ে পড়া বিজেপির সেই পুরনো তেজ এখনও দেখা যায়নি। তার উপর কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল এবার নতুনের সঙ্গে পুরনোর মিশেল ঘটিয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছে। সেই কারণেই অভিজ্ঞতাকে একেবারে বাদ দিতে পারেনি তৃণমূল। এক ব্যক্তি এক পদ নীতি নিয়েও বিধায়ক-মন্ত্রীদের তৃণমূল প্রার্থী করেছে। তার কারণ তৃণমূল কোনও ঝুঁকি নিয়ে চায়নি পুরভোটের লড়াইয়ে। তাই বিজেপি তৃণমূলকে আদৌ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়।