এক অনিন্দ্য সুন্দর হিমায়িত বন, প্রকৃতির যে কী অপরূপ শোভা না দেখলে বিশ্বাসই হবে না
এক অনিন্দ্য সুন্দর হিমায়িত বন, প্রকৃতির যে কী অপরূপ শোভা না দেখলে বিশ্বাসই হবে না
হিমায়িত বন। গাছ-গাছালি বরফের চাদরে মোড়া। এই অনিন্দ্য সুন্দর হিমায়িত বন না দেখলে বিশ্বাসই হবে না, যে কী অপরূপ শোভা তার। শীতের মরশুমে ফিনল্যান্ডের ওই হিমায়িত বনে এক স্বর্গীয় অনুভূতি পাবেনই, যদি আপনি প্রকৃতিপ্রেমী হন। ভারী তুষারের সেই ল্যাপল্যান্ড আপনাকে বাস্তব থেকে অনেক দূরে নিয়ে চলে যাবে মূহূর্তে।
হিমায়িত একটি নির্জন সাদা মরুভূমি
ফিনল্যান্ডে এই হিমায়য়িত বনে সমস্ত গাছ, গুল্ম এবং শিলাগুলি ঘন তুষারে আবৃত হয়ে থাকে। মাইনাস ৪০ থেকে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হিমায়িত একটি নির্জন সাদা মরুভূমি। শ্বেত শুভ্র তুষার যেন সবকিছু গ্রাস করে নিয়েছে। এই ছবি দেখতে চোখ ফেরানোই যাবে না। মন টানবে ওই হিমায়িত বন।
যেন একটি তুষারময় প্রাসাদের প্রহরী
ফটোগ্রাফার নিকোলো বনফাদিনি যখন প্রথম উদ্ভট আকৃতির গাছগুলি লক্ষ্য করেছিলেন, তখন তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে সেগুলিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন তারা একটি তুষারময় প্রাসাদের প্রহরী। এইভাবে তিনি তার ছবিগুলির সিরিজ 'আর্কটিকের সেন্টিনেল' শিরোনামে প্রদর্শনী করেছেন। তেমনই কিছু ছবি এখানে প্রদর্শিত হল, যা দেখে আপনিও মনে করবেন এটি এক অন্য জগৎ।
প্রকৃতির স্পন্দন রয়েছে হিমায়িত বনে
২০১৯ সালের শুরুর দিকে জাতিসংঘ ফিনল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। ব্রিটেনের দ্বিগুণ আয়তনের এই দেশটির জনসংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন। অন্যদিকে গ্রেট ব্রিটানে ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করেন। ফলস্বরূপ ফিনল্যান্ডে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষের সরবরাহ কম, তাই দেশটিতে এখনও প্রকৃতির স্পন্দন রয়েছে বহুল পরিমাণে।
ইউরোপের সবচেয়ে বনে ঢাকা দেশ
ফিনল্যান্ডে ১ লক্ষ ৮০ হাজারটিরও বেশি সুরম্য বাড়ি রয়েছে হ্রদের উপর। এছাড়াও ২০ মিলিয়ন হেক্টর শঙ্কুআকৃতির বনভূমি রয়েছে, যা সমগ্র দেশের ৭৫ শতাংশ বিস্তারিত। ইউরোপের সবচেয়ে বনে ঢাকা দেশ এটি! ফিনল্যান্ডের উত্তরে বেশিরভাগ বনাঞ্চল, যা বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক বনাঞ্চল বলে প্রসিদ্ধ। এই বন বছরের প্রায় ছ-মাস হিমায়িত থাকে, তখন এটি একেবারে স্বর্গীয় লাগে।
হেঁটে চলার সময় জঙ্গলটিকে জীবন্ত মনে হয়
এই বনের গাছ আসলে জমে যায় তুষারে। বনভূমিটি একটি বৃহৎ বরফের ভাস্কর্যের মতো দেখতে। বরফের লম্বা লম্বা টুকরো যেন সাদা কম্বলের বিছানা। নিখুঁত নান্দনিকতায় ভরা সব দৃশ্য। আপনি হেঁটে চলার সময় জঙ্গলটিকে জীবন্ত মনে হয়। সমস্ত গুল্ম, শিলা এবং গাছ খাঁটি সাদা রঙে আবৃত হয়ে যায়।
গাছগুলিকে তুষার-মানব মনে হতে পারে
তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে যখন নেমে যায়, তুষারপাতের ফলে বনজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছগুলিকে তুষার-মানব মনে হতে পারে। গাছের উপর তুষার পড়ে তুষার-মানব বা বরফ-ভাস্কর্যের চেহারা নেয়। ফিনল্যান্ডের বনাঞ্চলের এ জন্য অদ্ভুত লাগে। তবে ঝকঝকে সেই দৃশ্যটি অনিন্দ্য-সুন্দর হয়ে ওঠে।
স্থানটি নান্দনিক এবং শীতকালীন দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত
যখন গাছগুলি জমে যায়, তারা বিভিন্ন আকার নেয়। প্রথম সকালেই তা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, সূর্যের আলোয় সেই তুষার ঝলমল করে। এই শীতকালীন সময়ে আশ্চর্যের এই ছবি আপনি দেখতে পাবেন রিসিটুনটুরি ন্যাশনাল পার্কে। এই স্থানটি নান্দনিক এবং শীতকালীন দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। ফিনিশ পার্কেও সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয় এই শীতকালে।
বরফের ভাস্কর্য্য দেখতে গেলে যে ঠিকানায় যেতে হবে
ফিনিশ পার্কে খোলা প্রান্তরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কুঁড়েঘর, যেখানে আপনি নিরাপদে থাকতে পারেন এবং একইসঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। পার্কটি কুসামো বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। এই শীতে আপনি তুষার-মানব বা বরফের ভাস্কর্য্য দেখতে গেলে আপনাকে যেতেই হবে ফিনল্যান্ডে।
কীভাবে গাছ হিমায়িত হয়? একটি ব্যাখ্যা
ফিনল্যান্ডের উত্তরে বরফের ভাস্কর্যের আউটডোর পার্কটি অনন্য। সারা বিশ্বের মানুষ এবং পর্যটকরা এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়। কীভাবে এই প্রাকৃতিক বিস্ময় সংঘটিত হয়? আশ্চর্যজনকভাবে ফিনল্যান্ডের উত্তরে প্রচুর আর্দ্রতা রয়েছে। চারপাশের বাতাস ভেজা এবং ঘন। সব ঋতুতেই ক্রমাগত আর্দ্রতা অনুভব করা যায়।
সমস্ত গাছ বরফে আচ্ছাদিত হয় যে কারণে
বাতাসের ওই আর্দ্রতা বায়ুমণ্ডলে অনেক জলের ফোঁটা তৈরি করে। যখন এই জলের ফোঁটাগুলি মাইনাস তাপমাত্রায় গাছের সংস্পর্শে আসে, তখন তারা বরফে পরিণত হয়। আর এভাবেই গাছগুলো তুষার ও বরফে ঢাকা হয়ে যায়। বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং জলের আর্দ্রতার কারণে, সমস্ত গাছ বরফে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। তাই গাছগুলি বরফের ভাস্কর্যের মতো দেখতে লাগে।