শুভ অনুষ্ঠানে শাঁখ বাজানো ও স্বস্তিক চিহ্ন আঁকার রীতি কেন রয়েছে হিন্দু ধর্মে জানেন কি?
শুভ অনুষ্ঠানে শাঁখ বাজানো ও স্বস্তিক চিহ্ন আঁকার রীতি
যে কোনও শুভ কাজ হোক বা পুজো–পার্বন, হিন্দুদের ঘরে শঙ্খ বাজানোর রীতি বহু যুগ ধরে চলে আসছে। আজও বর্তমান যুগে মহিলারা সন্ধ্যা আরতি সেরে, তুলসি তলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে শাঁখ বাজান। বাড়িতে নতুন বউ বা গৃহপ্রবেশের মতো অনুষ্ঠানেও শাঁখ বাজানো শুভ বলে মনে করা হয়। তেমনি স্বস্তিক চিহ্ন পুজো বা শুভ অনুষ্ঠানে আঁকা ভালো বলে মানে হিন্দুরা।
শঙ্খ আসলে কি
শঙ্খ হল এক ধরনের বড় সামুদ্রিক শামুক। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শঙ্খ বা শাঁখ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। শঙ্খ বাজানোর পেছনে হিন্দুদের ধার্মিক আস্থা রয়েছে।
শাঁখ কেন বাজানো হয়
বিভিন্ন পূজা-পার্বণ এবং শুভ কাজের শুরুতে বিশেষভাবে কাঁটা শঙ্খের বাঁশি বাজানো হয়। হিন্দু ধর্মে শঙ্খের ধ্বনি পবিত্র বলে ধরা হয়। পূজা অর্চনা, পুত্রসন্তানের জন্ম, অন্নপ্রাশন, শ্মশানযাত্রা ইত্যাদি সময়ে শঙ্খধ্বনি করা হয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পঞ্চপান্ডব ও শ্রীকৃষ্ণের ঠোঁটে শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়। দেবী দুর্গার হাতেও শঙ্খ দেখা যায়। বেদ অনুযায়ী শঙ্খধ্বনি যত দূর পর্যন্ত পৌঁছায় সেই পর্যন্ত অশুভ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। মনে করা হয় যে বাড়িতে প্রতি দিন শঙ্খ বাজানো হয় সেই বাড়িতে মা লক্ষ্মীর সদা বসবাস থাকে। প্রতি দিন সকাল এবং সন্ধ্যা বেলা শঙ্খ বাজানো অত্যন্ত মঙ্গলজনক। হিন্দুরা যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প বা বজ্র-বিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টি থামাতে শঙ্খ বাজিয়ে থাকেন। হিন্দুদের যে কোনও শুভ কাজ করার আগে শঙ্খ বাজানো অতি আবশ্যক।
স্বস্তিক চিহ্ন কি
স্বস্তিক একটি সংস্কৃত শব্দ। সাধারণ অর্থে কল্যাণ বা মঙ্গল বোঝায়। এর নির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই। যেহেতু সূর্য নিজেই সৌভাগ্য, সৃষ্টি এবং জীবনের প্রতীক, তাই সূর্যদেবতার সাথে স্বস্তিকার একধরনের সম্পর্ক টানতে চেয়েছেন অনেকেই। তবে সকল দিক এবং মত অনুসারেই স্বস্তিক শুভের চিহ্ন। স্বস্তিক চিহ্ন কেবল হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত নয়। অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও একে প্রবিত্র মনে করে। গণেশ অগ্রপূজ্য দেব। স্বস্তিক চিহ্ন শ্রী গণেশের সাকার বিগ্রহের স্বরূপ। স্বস্তিকের চারটি ভূজা শ্রী বিষ্ণুর ৪ হাত। স্বস্তিক চার দিকে বা চার দিশায় শুভ সঙ্কেত দেয়। স্বস্তিক 'শ্রী'-র লক্ষ্মী প্রতীক।
স্বস্তিক চিহ্নের ব্যবহার
যে কোনও মঙ্গল অনুষ্ঠানে, মন্দিরে এমনকি হিটলারের পতাকাতেও এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছিল। গবেষকদের মতে এই চিহ্ন প্রাক আর্য যুগের। ১১ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এই চিহ্ন। ভারতীয় সংস্কৃতির সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক এই চিহ্ন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রাচীণ এই চিহ্ন দরজায় বা বাড়ির মূল প্রবেশ দ্বারে থাকা শুভ। পরিবারের সৌভাগ্য বজায় রাখতে দরজায় একইসঙ্গে ঠাকুরের স্থানেও এই চিহ্ন আঁকার পরামর্শ দেন বাস্তু বিশেষজ্ঞরা। তবে যেই স্থানে চিহ্ন আঁকবেন, সেই স্থান যেন পরিষ্কার থাকে। যাতায়াতের পথে থেকে উঁচুতেই এই চিহ্ন রাখতে হবে। জ্যোতিষীদের মতে, যাত্রা শুরু করার আগে বা কোনও শুভ কাজে যাওয়ার আগে এই চিহ্ন দেখে বেরনো খুব শুভ।