ময়ূরের পুচ্ছ পালক জ্যোতিষ মতে ঘরে কীভাবে রাখলে কেটে যায় দুর্যোগ, গ্রহ দোষ! পৌরাণিক কাহিনিতে জানুন মাহাত্ম্য
ময়ূরের পুচ্ছ পালক জ্যোতিষ মতে ঘরে কীভাবে রাখলে কেটে যায় দুর্যোগ, গ্রহ দোষ! পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী জানুন মাহাত্ম্য
ময়ূরের পালককে অনেকেই ঘরে রাখেন কীট পতঙ্গ তাড়ানোর জন্য। বাস্তুশাস্ত্রবিদ থেকে জ্যোতিষবিদরা বলছেন, এই পালকের এর চেয়েও বেশি বহু ধরনের গুণ রয়েছে। এমনকি পৌরাণিক নানান কাহিনিতে বর্ণিত রয়েছে ময়ূরের পালকের মাহাত্ম্য। সেই ঘটনা অনুযায়ী, অনেকেই এই মহামূল্য ময়ূরের পালক ঘরে এনে তাকে আলাদা করে পরিপাটি করে রেখে দেন। জ্যোতিষ মতে বলা হয়, ময়ূরের পুচ্ছ পালক ঘরে রাখলে কেটে যায় গ্রহ দোষ, কাটে বহু বিপদ। দেখে নেওয়া যাক, এই ময়ূরের পালকের কিছু জ্যোতিষ মতে তাৎপর্য।
পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে ময়ূর পুচ্ছের মাহাত্ম্য
শোনা যায়, একবার ইন্দ্রদেবের থেকে তাঁর সমস্ত ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মর্ত্যে রাবণ উদ্যত হন। আর সেই কারণেই ইন্দ্র নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য জায়গা খুঁজতে থাকেন। এই সময় তিনি ময়ূরের পুচ্ছের পালক বা পেখমের নিচে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন বলে কথিত রয়েছে। যখন দেবরাজের ক্ষমতা নিয়ে রাবণ নিজে দেবরাজ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, তখনই ইন্দ্রের ত্রাতা হিসাবে ময়ূর আসে বলে জানা যায়। সেই থেকে ইন্দ্রের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হিসাবে ময়ূরের পুচ্ছ পালককে খুবই শুভ মানা হয়। সেই সময় ইন্দ্র বর দিয়ে ময়ূরকে জানান, ভূভারতে কোনও ময়ূর সাপকে ভয় পাবে না, এদের মধ্যে চিরকালই ক্ষত সারানোর ক্ষমতা থাকবে।
শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ময়ূর পুচ্ছের সংযোগ
জানা যায়, একবার শ্রীকৃষ্ণ একবার মনের সুখে গোবর্ধন পর্বতের জঙ্গলে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সেই বাঁশির সুরের মুর্চ্ছ্বনায় দেবকূল মোহিত হয়ে যায়। এদিকে, অরণ্যের সমস্ত পশুপাখী নাচতে থাকে এমন সুরে। এদিকে ময়ূরেরাও নাচতে শুরু করে। এরপর সুরের ছন্দে নেচে ময়ূররাজ নিজে এসে শ্রীকৃষ্ণকে একটি পালক সম্মানার্থে উপহার দেন। রাজার দেওয়া পালক মাথার মুকুটে রাখেন শ্রীকৃষ্ণ। এরপর থেকেই শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে থাকে ময়ূরের পুচ্ছ পালক।
বাস্তুমতে ময়ূরের পুচ্ছপালক কীভাবে কাটায় দোষ?
কোনও বাড়িতে যদি বাস্তু দোষ থেকে থাকে, তাহলে ময়ূরের পুচ্ছপালক সঠিক দিকে রাখতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের ছবির সামনে যেখানে শ্রীকৃষ্ণের পদ যুগল রয়েছে, সেখানে রাখতে হবে ময়ূরের পুচ্ছ পালক। যার মুখ হতে হবে উত্তর পূর্ব দিকে। তাহলেই বহু কষ্ট থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘরের উত্তরে কয়টি পালক রাখতে হবে?
বাস্তু মতে ঘরের উত্তর পূর্ব দিকে রাখতে হবে ৮ টি ময়ূরের পালক। এই ময়ূরের পালকগুলি রাখার সময় শিবের মন্ত্র জপ করলে তার ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে পালকগুলিকে একটি সুতোয় বেঁধে তা রাখতে হবে।
রাতে কি দুঃস্বপ্ন, ভয়ের স্বপ্ন দেখেন?
ময়ূরের পালক রাতে যেমন ঘুম আসতে সাহায্য করে, তেমনই স্বপ্নে আসা বিপদ বা ভয়ের ছবিকেও সরিয়ে দিতে পারে বলে জাবি বহু জ্যোতিষবিদের। বহু জ্যোতিষশাস্ত্রবিদরা বলছেন, শোবার আগে বালিশের নিচে যদি ময়ূরের পালক রাখা যায়, তাহলে রাতে ভালো ঘুম হবে। একই সঙ্গে কোনও খারাপ স্বপ্ন দেখার প্রবণতা থাকলে তা কেটে যাবে। ময়ূরের পালক খারাপ স্বপ্ন কে দূরে সরিয়ে দেয়।
রাহুর দোষ কাটানোর উপায়
ময়ূরের পুচ্ছ পালক রাহুর দোষ কাটাতে সাহায্য করে বলেও বহু জ্যোতিষবিদের মত। লম্বা ময়ূরের পালক এক গুচ্ছ নিয়ে তা রেখে দিয়ে তার সামনে সুপুরি অর্পণ করে ও গঙ্গা জল ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বহু বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। সঙ্গে 'ওম ধুম রাম রাহাভে নমহ' মন্ত্রটি ২১ বার জপ করার কথাও বলছেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা।
শনির প্রভাব কাটানোর উপায়
তিনটি লম্বা ময়ূরের পালক নিয়ে 'ওম নমহঃস্বরায়' মন্ত্রটি ২১ বার জপ করলে এবং তার সঙ্গে সুপুরি ও গঙ্গাজল দিয়ে শনির প্রভাব কাটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বহু শাস্ত্রজ্ঞ। তবে তা কোনও জ্যোতিষের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই করা উচিত বলে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ঘরে সুস্বাস্থ্যের জন্য কী কী করণীয়?
যাতে ঘরে সুস্বাস্থ্য় বিরাজ করে তার জন্য ময়ূরের পালক দক্ষিণ পূর্ব দিকে রাখা উচিত। এতে যদি ঘরে কেউ অসুস্থ থাকেন তাঁর চিকিৎসা, সুশ্রুষার সঙ্গে সঙ্গে এটিও কার্যকরী হয় বলে দাবি করছেন অনেকে। এছাড়াও দক্ষিণের দিকে ময়ূরের পালক রাখলে তা ঘরের অর্থ সম্পত্তি বাড়িয়ে দেয় বলে দাবি বহু জ্য়োতিষবিদের।