কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেন দেবী কালী, আজ যা বাঙালির রীতি
দেবী দুর্গার মহাষ্টমী পুজো শেষে আবার কখনও মহানবমীতেও অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো। প্রধানত বয়ঃসন্ধিতে না পৌঁছনো কিশোরীদের দেবী রূপে পুজো করা হয় দুই বাংলায়।
দেবী দুর্গার মহাষ্টমী পুজো শেষে আবার কখনও মহানবমীতেও অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো। প্রধানত বয়ঃসন্ধিতে না পৌঁছনো কিশোরীদের দেবী রূপে পুজো করা হয় দুই বাংলায়। আজ এর প্রচলন কমে গেলেও, হাওড়ার বেলুড়, বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পুজোর চল রয়েছে। সে পুজোয় পুণ্যার্থীদের ভিড় হয় দেখার মতো।
পুরাণ মতে
পুরাণে বর্ণিত আছে যে এক সময় স্বর্গ-মর্ত্যে অধিকার কায়েম করে কোলাসুর। তার অত্যাচারে বিপন্ন হয় দেবতা-কুল। উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মহাকালীর শরণাপন্ন হন দেবগণ। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী কালী কুমারী রূপে পুনর্জন্ম নেন। এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর ওই কুমারীর হাতে কোলাসুরের নিধন হয়। এরপর থেকে মর্ত্যে কুমারী পুজোর প্রচলন হয় বলে পুরাণে বর্ণিত।
দর্শন
নারী মুক্তি, স্বাধীনতা তথা নারীতে পরমার্থ অর্জন কুমারী পুজোর অন্যতম উদ্দেশ্য বলে দাবি দার্শনিকদের। তাঁদের বিশ্বাস, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের (ত্রিশক্তি) ক্রিয়া কুমারীতে নিহিত আছে। কুমারী নারীর প্রতীক ও বীজাবস্থা। শুদ্ধতার প্রতীক কুমারীকে দেবী রূপে পুজো করা হিন্দুদের প্রাচীন ভাবনা ও রীতি বলে দাবি দার্শনিকদের।
পুজোর বর্ণনা
যোগিনীতন্য, কুলার্ণবতন্য, দেবীপুরাণ, কবচ সহ হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে কুমারী পুজোর পদ্ধতি ও মাহাত্ম্যের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। দেবীজ্ঞানে যেকোনও কুমারীই (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদে) পূজনীয় বলে জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পুজোই অধিক প্রচলিত। বয়সের ক্রম অনুযায়ী কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিতও করা হয়। এক বছরের কন্যা 'সন্ধ্যা' থেকে সাত বছরের কন্যা 'মালিনী', বারো বছরের কন্যা 'ভৈরবী' থেকে ষোলে বছরের কন্যা 'অম্বিকা' কুমারীদের নানা পর্যায়। তবে বাংলাদেশে ৭ থেকে ৯ বছরের বালিকাকে দেবী সাজিয়ে পুজোর চল অধিক প্রচলিত।
উপাচার
বাংলাদেশে দুর্গা পুজোর অঙ্গ হিসেবেই কুমারীর আরাধনা করে হয়। কখনও আবার কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা পুজো ও কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে। সাধক কুমারীকে নতুন বস্ত্র, ফুলের মালা ও মুকুটে সাজানো হয়। পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের তিলকও দেওয়া হয়। ১৯০১ সালে বেলুড় মঠে কুমারী পুজোর প্রচলন করেন স্বামী বিবেকানন্দ। বাংলার বাইরে মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী দেবী মন্দির ও কন্যাকুমারীতেও মহা সমারোহে কুমারী পুজো আয়োজিত হয়।
[ দুর্গাপুজোয় 'রেনকোট-ছাতা' সঙ্গে রাখতে হবে কী! আবহাওয়া দফতর কোন বার্তা দিচ্ছে]