
পুরীর জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণ কেন অসমাপ্ত রাখেন বিশ্বকর্মা ! রাজা ইন্দ্রদ্যুন্মের কাহিনি একনজরে
পুরীর জগন্নাথ (lord Jagannath) দেবের মন্দির ঘিরে বহুকাল থেকেই একাধিক ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা (Rathyatra)যেমন এই শহরের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় উৎসব, তেমনই পুরীর মন্দির ঘিরে নানান রহস্যময় ঘটনাও বহু কৌতূহল ধরে রেখেছে। এমনই একটি কাহিনি হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ঘটনা। তেমনই আবার জগন্নাথ দেবের মূর্তির আদল ঘিরেও রয়েছে বহু কৌতূহল। এই সম্পর্কীয় বিভিন্ন ধরনের কাহিনি পৌরাণিক মতে প্রচলিত রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক এমনই একটি কাহিনি।


রাজার বিষ্ণুমন্দির গড়ার ইচ্ছা নিয়ে শুরু হয় উদ্যোগ
শোনা যায় সত্যযুগে এক রাজা ছিলেন, যাঁর নাম ইন্দ্রদ্যুন্ম। পুরীর মন্দির তৈরির সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর ইচ্ছা ছিল যে তিনি বিষ্ণুধাম (বর্তমান পুরী) তে একটি বিষ্ণু মন্দির গড়বেন। তবে ধারণা ছিল না যে সেই মন্দির কেমন হবে। কেমনইবা হবে সেই মন্দিরে রাখা মূর্তির আদল। এ জন্য তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন।

ব্রহ্মার কাছ থেকে কী জানতে পারলেন?
ধ্যানমগ্ন হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছ থেকে ইন্দ্রদ্যুন্ম জানতে পারেন যে ওই এলাকার বাঁকেমুখ নামের এক জায়গা থেকে তিনি মূর্তি তৈরির কাঠ পেয়ে যাবেন। একমাত্র সেই নিমকাঠেই তৈরি হতে হবে এই বিষ্ণু মন্দিরে বিষ্ণুর মূর্তি। এছাড়াও মূর্তি নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে স্থির করা হল।

অনন্ত মহারাণার ছদ্মবেশে বিশ্বকর্মা এসেই কোন শর্ত দিলেন?
এরপর ব্রহ্মার উপদেশ মতো বিশ্বকর্মা এলেন ইন্দ্রদ্যুন্মের কাছে। তবে তিনি জানান দিলেন না নিজের আসল পরিচয়।
মূর্তির কারিগর হিসাবে অনন্ত মহারাণার ছদ্মবেশে তিনি প্রবেশ করলেন রাজসভায়। বিশ্বকর্মা শর্ত দিলেন, তিনি মূর্তি নিখুঁত গড়ে দেবেন, তবে নিজেকে এক ঘরে বন্ধ রেখে কাজ করবেন। মূর্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই ঘর কেউ খুলতে পারবেন না। শর্তে রাজি হলেন রাজা।

ঘটল কোন অঘটন?
এরপরবর্তীকালে মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিলেন বিশ্বকর্মা। এদিকে, মূর্তি কেমন হয়েছে ,তা দোর জন্য উৎসপখ রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম। এমন অবস্থায় তিনি ধৈর্য ধরে না রাখতে পেরে খুলে দিলেন মূর্তি নির্মাণের ঘর। দরজা খুলতেই দেখেন নির্মাণ ঘরে সমস্ত আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেল। সেখানে নেই কেউ। একজন কারিগরও সেখানে নেই। এরপরই রাজা দেখলেন জগন্নাথ দেবের মূর্তি অর্ধ সমাপ্ত। মূর্তির হাত ও পায়ের অসমাপ্ত অংশ দেখে মুষড়ে পড়লেন রাজা।

কেন সমাপ্ত হয়নি মূর্তি গড়া?
কথিত আছে, বিশ্বকর্মার শর্ত রাজা না মানায় রুষ্ট
হয়ে মূর্তি মাঝপথে রেখে চলে যান বিশ্বকর্মা। তবে বিষ্ণুর জগন্নাথ দেব অবতারকে পরবর্তীকালে ব্রহ্মা পুজো করার পরামর্শ দেন রাজাকে। জানান, বিষ্ণু স্বয়ং খুশি এই মূর্তির আদলে। তারপর থেকে জগন্নাথ দেবের সেই রূপকেই পুজো করা হয় পুরীতে।