পুরান মতে মা কালী 'অষ্টধা', বিস্তারিত জেনে নিন একনজরে
মা কালীর রূপভেদ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তন্ত্র পুরানে দেবী কালীর রূপ একাধিক। তোড়লতন্ত্র অনুসারে মা কালী আট প্রকার।
মা কালীর রূপভেদ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তন্ত্র পুরানে দেবী কালীর একাধিক রূপ রয়েছে। তোড়লতন্ত্র অনুসারে মা কালী আট প্রকার। মহাকাল সংহিতায় নয় প্রকার কালীর উল্লেখ পাওয়া গেলেও অভিনব গুপ্তের তন্ত্রালোক ও তন্ত্রসার গ্রন্থে দেবীর ১৩ রূপের উল্লেখ রয়েছে। প্রধানত এই বঙ্গে তথা ভারতে কালীর অষ্টধা (আট প্রকার) রূপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
দক্ষিণাকালী
দক্ষিণাকালী দেবীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ তথা জনপ্রিয় মূর্তি। প্রচলিত বিশ্বাসে দেবী শ্যামাকালী হিসেবে বঙ্গে অধিক পূজিত হন। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা ও মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাঁর বাম হাতে নরমুণ্ড, খড়্গ ও ডান হাতে বর ও অভয় মুদ্রা। পুরাণ মতে, দক্ষিণের অধিপতি যম যে কালীর ভয়ে পালিয়েছিলেন, তিনিই দক্ষিণাকালী।
সিদ্ধকালী
দেবীর এক অখ্যাত রূপ হল সিদ্ধকালী। মূলত সিদ্ধ সাধকদের আরাধ্য দেবীকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে কালীতন্ত্রে। কারও কাছে তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী।
গুহ্যকালী
মা কালীর এই রূপ গৃহস্থের থেকে দূরে রাখা হয়। কারণ তাঁর রূপ ভয়ঙ্কর। দ্বিভূজা এই কালীর গায়ের রং হয় মেঘের মতো কালে। দ্বিভূজা এই দেবীর গলায় থাকে পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা, কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র, মাথায় জটা ও অর্ধচন্দ্র।
মহাকালী
পুরাণ মতে মহাকালীর দশ হাত ও দশ নয়ন। দেবী খড়্গ, চক্র, গদা, ধনুক, বাণ, পরিঘ, শূল, ভূসুণ্ডি, নরমুণ্ড ও শঙ্খ ধারণ করে থাকেন। ভৈরবী হলেও গুহ্যকালীর সঙ্গে এই দেবীর পার্থক্য বিস্তর। কারণ, ইনি ভীতি প্রদর্শনের পর ভক্তকে রূপ, সৌভাগ্যস কান্ত ও শ্রী প্রদান করেন বলে পুরাণে কথিত আছে।
ভদ্রকালী
পুরাণ মতে যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গল বা কল্যাণ বিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। কালীকাপুরাণ ও তন্ত্রমতে এই কালীর রূপভেদ আলাদা। কোটরক্ষী, ক্ষুধিতাস মুক্তকেশী দেবী জগৎকে গ্রাস করেছেন বলে তন্ত্রমতে প্রচারিত।
চামুণ্ডাকালী
দেবী ভাগবত পুরাণ ও মার্কেণ্ডেয় পুরাণ মতে চামুণ্ডাকালী বা চামুণ্ডা, চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার ললাট থেকে জন্ম দেন। দেবীর গায়ের রং নীল পদ্মের মতো। তাঁর হাতে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাশ। দুর্গাপুজোর মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে বঙ্গে দেবী চামুণ্ডার পুজো হয়ে থাকে। যাকে বলে সন্ধি পুজো।
শ্মশানকালী
প্রধানত শ্মশানে এই কালীর পুজো হয়ে থাকে। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের তন্ত্রসার অনুযায়ী দেবীর গায়ের রং কাজল-কালো। চোখ দুটি রক্তপিঙ্গল। চুল আলুলায়িত, দেহ শুকনো ও ভয়ঙ্কর। অন্য মতে, শ্মশানকালীর বাঁ পা থাকে মহাদেবের বুকে ও ডান হাতে ধরা থাকে খর্গ। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্ত্রী সারদা দেবী দক্ষিণেশ্বরে শ্মশানকালীর পুজো করেছিলেন বলে কথিত আছে।
শ্রীকালী
পুরাণ মতে এই রূপে দারুক নামে অসুরকে বদ করেন মা কালী। ইনি মহাদেবের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হয়েছিলেন বলে কথিত আছে। শ্রীকালী শিবের মতোই ত্রিশূলধারিনী ও সপর্বেষ্টিতা।