লক্ষ্মীপুজোর পর মঙ্গলকামনার উৎসব ধনতেরাস, এই দিনে ১৩ প্রদীপ জ্বালানো কেন ভালো, জানুন
এবছর ধনতেরাস উৎসব ৫ নভেম্বর। এই দিন রাত ১১.৪৮ টা পর্যন্ত থাকবে ধনতেরাস-এর ত্রায়োদশী তিথি। এই তিথি-তে ১৩ প্রদীপ জ্বালাতে হয়। পৌরাণিক মতে এই দিনে ১৩ প্রদীপ জ্বালানো সংসারের পক্ষে মঙ্গলের
এবছর ধনতেরাস উৎসব ৫ নভেম্বর। এই দিন রাত ১১.৪৮ টা পর্যন্ত থাকবে ধনতেরাস-এর ত্রায়োদশী তিথি। এই তিথি-তে ১৩ প্রদীপ জ্বালাতে হয়। পৌরাণিক মতে এই দিনে ১৩ প্রদীপ জ্বালানো সংসারের পক্ষে মঙ্গলের। এর ফলে অনেক বাধা-বিপত্তি কেটে যায়। সংসার জীবনে বিরাজ করে সুখ ও সমৃদ্ধি। কথিত আছে এই সুখ ও সমৃদ্ধিতে চোখ ধাঁধিয়য়ে যায় সমস্ত অশুভ শক্তির। যার ফলে তাদের অভিশপ্ত ছায়া সংসারের উপর গেড়ে বসতে পারে না।
ধনতেরাস-এর দিনে ১৩ প্রদীপ জ্বালাতে হয়। কিন্তু, এই ১৩ প্রদীপ জ্বালানোর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, রাজা হংস এক ঘোর প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিকারে বের হয়েছিলেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাজা হংস তাঁর সৈন্য দলের থেকে আলাদা হয়ে যান। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দিশেহারা হয়ে রাজা হিমা-র রাজ্যের সীমানায় ঢুকে পড়েন হংস।
রাজা হিমার সৈন্যদল রাজা হংস-কে দেখতে পান। তাঁর পরিচয় জানতে পেরে তাঁকে রাজা হিমার রাজপ্রাসাদে নিয়ে যান। রাজা হিমা এই কথা জানতে পেরে রাজা হংস-কে রাজকীয় সম্মানে অভর্থ্য়না জানিয়ে আপ্যায়ন করেন। রাজা হংস যে রাতে রাজা হিমার প্রাসাদে অতিথি হয়েছিলেন সেই দিন সেই রাজপ্রাসাদে রাজকুমারের জন্ম হয়। পুত্র সন্তানের জন্মের খবরে প্রবলই আহ্লাদিত রাজা হিমা। কিন্তু, রাজজ্যোতিষীর সাবধানবাণী রাজা হিমার হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে দেয়।
রাজজ্য়োতিষী জানিয়েছিলেন, রাজপুত্র বিয়ের চার রাতের মাথায় মারা যাবেন। এই খবরে রাজা হিমা রাজপুত্রকে যমুনার তীরে নিয়ে যান। সেখানে রাজপুত্রকে ব্রক্ষ্মচারীতে দিক্ষীত করেন। রাজপুত্র যাতে কোনও মহিলার সংস্পর্শে না আসেন তার জন্য তাঁর চারিদিকে নারীদের প্রবেশকে নিষিদ্ধ করেন রাজা হিমা। রাজপুত্রের উপর নজর রাখা ও তাঁর সুরক্ষার জন্য সেনাবাহিনীও মোতায়েন করেন।
এই পরিস্থিতিতেই একদিন যমুনার তীরে রাজা হংসের অপরূপ কন্যার সামনে পড়ে যান রাজপুত্র। প্রথম দেখাতেই রাজা হংসের মেয়ের পড়েন রাজা হিমার ছেলে। বাবার কাছে দেওয়া ব্রক্ষ্মচর্য পালনের ব্রত ভুলে গিয়ে তিনি রাজা হংসের মেয়েকে গান্ধর্ব মতে বিয়ে করেন।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাজা হিমা। তিনি রাজা হংসের মেয়ে-কে রাজকুমারের জীবনের অভিঘাত-এর কথা খুলে বলেন। রাজজ্যোতিষী-র গণনার কথাও খুলে বলেন। স্বামীর প্রাণঘাতের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রাজা হংসের মেয়ে। এই ঘটনার চারদিন পরেই ছিল ধনতেরাস। এই দিনে কুবেরের সাধনা করলে সমস্ত বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়- এই ধরনাটি ছিল রাজা হংসের মেয়ের।
এরপরই কুবের আরাধনা শুরু করেন রাজা হংসের মেয়ে। সমস্ত অলঙ্কার, মণি-মাণিক্য সাজিয়ে কুবেরের পুজো শুরু করেন তিনি। কুবেরের উদ্দেশে ১৩টি প্রদীপও জ্বালান রাজা হংসের মেয়ে। গুনগুন করে তিনি কুবেরের উদ্দেশে মন্ত্র জপ করতে থাকেন।
এদিকে, বিষধর সাপের বেশ ধরে যমরাজ রাজপুত্রকে দংশন করতে আসেন। কিন্তু, কুবেরের উদ্দেশে নিবেদন করা অলঙ্কার, মণি-মাণিক্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায় সাপের বেশে থাকা যমরাজের। তাঁর মন থেকে সব স্মৃতি মুছে যেতে থাকে। তিনি রাজা হংসের মেয়ের গাওয়া গানে মোহিত হয়ে যান।
যমরাজ ভুলেই যান যে রাত কেটে সকাল হয়ে গিয়েছে। যমরাজ বুঝতে পারেন তিনি চরম ভুল করেছেন। এই পরিস্থিতিতেই তিনি সাপের বেশে ঘুমন্ত রাজপুত্রকে দংশন করতে উদ্যত হন। কিন্তু তাঁকে বাধা দেন রাজা হংসের কন্যা। বিধি অনুযায়ী যমরাজকে রাতের মধ্যে রাজপুত্রের প্রাণ নিতে হত। সুতরাং সেটা যখন হয়নি তখন তিনি বিধি ভাঙতে পারনে না। যমরাজ বুদ্ধিমতী রাজকন্যার কথা বুঝতে পারেন। রাজকন্যার প্রশংসাও করেন তিনি। রাজকন্যাকে তিনি বলেন, ধনতেরাসের দিনে যে বাড়িতে এায়োদশী তিথিতে ১৩ প্রদীপ জ্বালানো হবে সেখানে কোনও অকালমূত্যু প্রবেশ করবে না ও সেই সংসারে অর্থ কষ্ঠও থাকবে। সেই থেকেই এই কাহিনিকে সামনে রেখে ধনতেরাসের দিনে ১৩ প্রদীপ দেওয়ার চল শুরু।
[আরও পড়ুন:২৩০০ বছর ধরে সাঁচী স্তূপে চিত্রিত গজলক্ষ্মী দেবী একই রূপে পূজিতা হন ওড়িশায়]