দেবীপক্ষে কুমারী পুজো হওয়ার ইতিহাস ও নিয়ম জানেন কি
শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীপক্ষ। যা চলবে দশদিন ধরে। দেশজুড়ে মহা সমারোহে এই উৎসব পালিত হয়। এই বছর মহামারি প্রকোপের কারণে পুজোর জৌলুসে সব জায়গায় ভাটা পড়ে গিয়েছে। বাঙালির দুর্গাপুজোর প্রধান রীতি কুমারী পুজো, যা হয়ত এ বছর নাও হতে পারে। কিন্তু এই সময় কুমারী পুজোর মাহাত্ম্য অন্যরকমের।

মহাভারতে কুমারী পুজোর উল্লেখ
মহাভারতে অর্জুনের ভদ্রকালীর বন্দনার কথা যেমন আছে, তেমনই উল্লেখ রয়েছে অর্জুনের কুমারী পুজোর কথা। সুতরাং কুমারী পুজোর প্রচলন মহাভারতীয় যুগ থেকে শুরু করে আজও ভারতের নানা প্রান্তের মঠমন্দিরে, এমনকি কামাখ্যা ও নেপালেও এই পুজো হয়ে আসছে মহাসমারোহে। এদেশে মন্দির নির্মাণ করে দেবী পার্বতীকে কুমারী মূর্তিতে পুজোর প্রচলন সম্ভবত দক্ষিণ ভারতে কন্যাকুমারীতে।

কিভাবে এবং কেমন করে এর শুরু?
শাস্ত্রানুযায়ী কুমারী পুজোর উৎপত্তি হয় কোলাসুর-কে বধ করার মধ্যে দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে কোলাসুর এক সময় স্বর্গ ও মর্ত্য-এর অধিকার নেওয়ার ফলে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী পুর্নজন্ম-এ কুমারীরূপে কোলাসুর-কে বধ করেন, এর ফলে মর্ত্যে কুমারীপুজোর প্রচলন শুরু হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে কুমারীপুজোর পদ্ধতি। বর্ণনানুযায়ী কুমারী পুজোতে কোনও জাতি, ধর্মভেদ নেই। তবে সাধারণত ব্রাক্ষন কন্যাকেই পুজো করা হয়।

পুজোর বিধি
১ থেকে ১৬ বছরের কন্যাকে কুমারীরূপে পুজো হয়। বয়স অনুযায়ী কুমারীদের বিভিন্ন নামে পুজো করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পুজো করেছিলেন। বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গা পুজোর সময়ে বিবেকানন্দ একসঙ্গে অনেক কুমারীর পুজো করেছিলেন। এখন সেখানে একজন কুমারীকেই পুজো করা হয়।

পুজোর নিয়ম
কুমারী পুজো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে তন্ত্রশাস্ত্রে। দুর্গার রূপ ধরে নিয়েই পুজো করা হয় কুমারীকে। কুমারীকে স্নান করিয়ে পরানো হয় নতুন বস্ত্র, নানা আভরণ। সাজানো হয় ফুলের মালা ও মুকুট দিয়ে। পায়ে আলতা পরিয়ে কপালে দেয়া হয় কুমকুমের টিপ। কুমারীকে রাখা হয় অভুক্ত অবস্থায়। আসনে এমনভাবে বসানো হয় যাতে তার কোনও কষ্ট না হয়ে আনন্দলাভ করে। এবার অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সামনে বসিয়ে কুমারীকে পুজো করা হয় দেবীজ্ঞানে। এ পুজো হয় নিজ অধিকার ও সামর্থ্য অনুসারে বিধি ও রীতি মেনে। অন্তরে ভরপুর বিশ্বাস ও ভক্তিই হল কুমারী পুজোর প্রধান ও একমাত্র উপকরণ। নানান উপকরণ দিয়ে পুজোর পর ভোজন করানো হয় কুমারীকে। পরে দক্ষিণা দেয়া হয় তিনবার প্রদক্ষিণ করে। নিবেদিত উপকরণ প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা সকলের মধ্যে। তন্ত্রের কথা, সারা বিশ্বভুবনকে খাওয়ানো হয় একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ালে।

২৫০ বছরের ঐতিহ্য, করোনা আবহে নিয়মরক্ষার্থের পুজো হবে মহিষাদল রাজবাড়িতে