দুর্গাপুজো ২০২১: মহাষষ্ঠীতে বোধনের আচার থেকে নেপথ্যের পৌরানিক কাহিনি একনজরে
দুর্গাপুজো ২০২১: মহাষষ্ঠীতে বোধনের আচার থেকে নেপথ্যের পৌরানিক কাহিনি একনজরে
বিশ্বকর্মা পুজো পেরিয়ে যাওয়া মানেই দুর্গাপুজো ঘিরে ফাইনাল কাউন্টডাউন শুরু হওয়া। তবে তার মাঝেই থাকে দেবীপক্ষের আবাহনে মহালয়া। এই মহালয়ার কালে পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষের। এই দেবীপক্ষেই ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গাকে বোধন করে তাঁর পুজো সম্পন্ন করেন শ্রীরামচন্দ্র। পৌরানিক এক কাহিনি রয়েছে মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন ঘিরে। ত্রেতা যুগে শুরু হওয়া এই পুজোর রীতি আজ পর্যন্ত পালিত হয় দুর্গাপুজোতে। ষষ্ঠী থেকে শুরু কের দশমী পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের আচার বিধি পালন করে এই সমারোহে মাকে বরণ করে নেয় বাঙালি। একনজরে দেখে নেওয়া যাক মহাষষ্ঠী ঘিরে কী কী পদক্ষেপ পালন করা হয়।
মহাষষ্ঠীর বোধন
'বোধন' শব্দের অর্থ হল জাগ্রত করা। অর্থাৎ মর্ত্যে মায়ের আবাহনের জন্যই এই বোধনের রীতি পালিত হয়। মহাষষ্ঠীর দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় মায়ের বোধন। ষষ্ঠীর সকালেই শুরু হয় এই প্রক্রিয়া। এরপর পুজোর রীতি অনুযায়ী, মায়ের কাছে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পূজা পর্বে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে। তারপর ঘট ও জলে পূর্ণ করা একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। সেখানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়।
পুজোর আচার
এরপর
শুরু
হয়,
দেবীর
পুজোর
বোধন।
ততক্ষণে
দিকে
দিকে
ঢাকের
বাদ্যিতে
পুজোর
মেজাজ
কার্যত
তুঙ্গে
চড়তে
থাকে।
ষষ্ঠী
থেকেই
প্যান্ডেলে
প্যান্ডেলে
ভিড়
জমে
মায়ের
আগমনে
বার্তার
সঙ্গে
সঙ্গে।
এদিকে,
কুমোরটুলি
ততক্ষমে
শেষ
প্রস্তুতিতে
চরম
ব্যস্ত।
এদিকে,
মহাষষ্ঠীতে
শুরু
হয়ে
যায়,
অধিবাস,
আমন্ত্রণ
পর্ব।
বোধনের
পর
বেল
পাতার
ডাল
দিয়ে,
দেবীকে
আবাহন
করা
হয়।
রীতি
হল
শুভ
শুক্তিকে
দূর
করে
ঘটের
চারিদিকে
তীরকাঠি
দিয়ে
বেষ্টন
করে
আমন্ত্রণ
প্রক্রিয়া।
এইভাবেই
শেষ
হয়
মহাষষ্ঠীর
আচার।
পৌরানিক কাহিনি
ত্রেতা যুগে রামচন্দ্রের হাত ধরে শুরু হয়েছিল মায়ের বোধন। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের কালে রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর বোধন করেন। সেই সঙ্গে তিনি দেবীর আরাধনা করে শক্তি, সৌভাগ্যের প্রার্থনা করেন। এই বোধনকে অকাল বোধন বলা হয়। পূরাণ মতে, সূ্র্যের উত্তরায়ণের সময় দেবতাদের দিন শুরু হয়। আর এই সময়কাল ৬ মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। আর দেবতারা দিনেই জেগে থাকেন। সেই সময়ই তাই তাঁদের পুজো করা হয়। আর রাতে পুজো করার বিধি নেই। ফলে দেবতাদের রাত বা দক্ষিণানয়ণের সময় তাঁদের পুজো কররা বিধি নেই। এদিকে, রামচন্দ্র রাবণকে হারাতে দক্ষিণায়নের সময়ই পুজো করেন দুর্গার। সেই জন্য এই পুজোকে অকালবোধন বলা হয়। বোধন অর্থাৎ মাকে জাগিয়ে তোলা। ফলে রাতের বেলায় দেবীকে জাগিয়ে তাঁর পুজো করার ঘটনা থেকেই রামচবন্দ্রের এই পুজো অকাল বোধন নামে পরিচিত।
রাম-রাবণের যুদ্ধ ও দুর্গাপুজো
এদিকে রামচন্দ্র যখন দেবী দুর্গার শরণ নিচ্ছেন,তখন রাবণ দেবাদিদেব শিবের ভক্ত হয়ে তাঁর পুজো করতে শুরু করেন। তবে শিবের একনিষ্ঠ সাধক হয়েও রামের হাতে লঙ্কাপতির মৃত্যু হয়। কারণ এটি ছিল ভবিতব্য এটি ছিল দৈববাণী। যখন রাম রাবণের যুদ্ধ হয়, তখন দেবাতারা উদ্বেগে পড়েন। তখন দেবী দুর্গা জানা, যদি বোধনের হাত ধরে শ্রীরাম তাঁর পুজো করেন, তাহলেই তিনি রামকে এই যুদ্ধে জয়ের বর দান করবেন। এরপর সেটাই ঘটে এদিকে, রাম রাবণের যুদ্ধের বহু আগে, চৈত্র মাসে আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রথম পুজো হয়। সেই সময় সত্য যুগে মা দুর্গার পুজো করেছিলেন রাজর্ষি সুরথ। সেই বোধনই একমাত্র সঠিক কালে বোধন বলে পরিগণিত হয়। সেই পুজো কাল বর্তমানে বাসন্তী পুজো। আর শরৎকালে মায়ের অকাল বোধন দুর্গা পুজোর একটি অঙ্গাঅঙ্গি রূপ হিসাবে পরিচিত হয়।