বৈশাখ শুক্লার তৃতীয়াকে কেন বলা হয় ‘অক্ষয়’? জেনে নিন এর পিছনে থাকা প্রকৃত কারণ
বৈশাখ শুক্লা তৃতীয়ায় অর্থাৎ ৩ মে ২০২২সালে সারা ভারতে অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসব উদযাপিত হবে। এই উৎসব বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুর উৎসব। এই উৎসবের গুরুত্ব অসীম। ভবিষ্য পুরাণ অনুসারে, এই দিনে সম্পাদিত সমস্ত কর্মের ফল অক্ষয় হয়, তাই নাম 'অক্ষয়’। ভবিষ্য পুরাণ ছাড়াও বিষ্ণু ধর্মসূত্র, মৎস্য পুরাণ, নারদীয় পুরাণ এবং ভবিষ্য পুরাণেও এই উৎসবের বিশদ উল্লেখ রয়েছে এবং এই ব্রতের অনেক কাহিনী রয়েছে। অক্ষয় তৃতীয়ায়, একজন ব্যক্তি স্নান, দান, জপ, তপস্যা, যজ্ঞ প্রভৃতি কর্মের শুভ ও চিরন্তন ফল লাভ করে।
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন করুন দান

'স্নাত্ত্বা হুত্বা চ দত্ত্বা চ জপত্ওয়ানন্তফলম্ লভেত্।'
শাস্ত্র মতে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন জলে ভর্তি কলসি, পাখা, খড়ম, জুতো, ছাতা, গরু, স্বর্ণ পাত্র সহ অনেক কিছুর দান পুণ্যকারী বলে মানা হয়েছে। এই দানের পিছনে লোকবিশ্বাস হল যে এই দিনে দান করা সমস্ত জিনিস গরমকালে স্বর্গে প্রাপ্ত হবে। এই ব্রতে কলস, মাটির সড়া, মাটির পাত্র ইত্যাদি রেখে পূজা করা হয়।

এখানে কুমারি কন্যারা গান গেয়ে পালন করেন
বুন্দেলখণ্ডে এই ব্রত অক্ষয় তৃতীয়া থেকে সুরু করে পূর্ণিমা পর্যন্ত খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়। কুমারি কন্যারা নিজেদের ভাই, বাবা, তথা গ্রামের বাড়ি ও কুটুম্বের সদস্যদের মধ্যে শুভ জিনিস বিতরণ করেন ও গান গেয়ে যায়। যেখানে মনের মানুষের বাড়ি যেতে না পারার বেদনা ব্যক্ত হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন রাজস্থানে বর্ষা আসার জন্য পুজো-অর্চনা করা হয় আর বর্ষা আসার প্রার্থনা করা হয়। এছাড়াও মেয়েরা ঝাঁকি বানিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পবিত্র গান গায়। ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ায়। সাত ধরনের শষ্য দিয়ে পুজো করা হয়। মালওয়াতে নতুন বাড়ির ওপর খরবুজা ও আমের পাতা রেখে পুজোর চল রয়েছে।

কৃষকদের জন্য নববর্ষের শুরু
কৃষকদের জন্য, এটি নতুন বছরের শুরুর জন্য একটি শুভ দিন হিসাবে বিবেচিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে কৃষি কাজ শুরু করা শুভ ও তা সমৃদ্ধি নিয়ে আনবে। এই তিথিতে চাঁদ অস্ত যাওয়ার সময় রোহিণী এগিয়ে থাকলে ফসলের ভালো হবে আর পিছিয়ে থাকলে ফলন ভালো হবে না বলে কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে।

এঁদের জন্মবার্ষিকী পালিত হয়
এই দিনে নর-নারায়ণ, শ্রী পরশুরাম এবং হায়গ্রীব অবতার হয়েছিলেন, তাই তাঁদের বার্ষিকীও অক্ষয় তৃতীয়ায় পালিত হয়। শ্রী পরশুরামজি প্রদোষের সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই যদি দ্বিতীয়ার মধ্যাহ্নের আগে তৃতীয়া আসে, তবে সেই দিনে অক্ষয় তৃতীয়া, নর-নারায়ণ জয়ন্তী, হায়গ্রীব জয়ন্তীও করা হয়। তাই একে পরশুরাম তীজও বলা হয়। স্কন্দ পুরাণ এবং ভবিষ্য পুরাণে উল্লেখ আছে যে বৈশাখ শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে রেণুকার গর্ভ থেকে ভগবান বিষ্ণু পরশুরাম রূপে জন্ম গ্রহণ করেন।

গয়না ও জমিও কেনা হয় এইদিন
এই তিথিতে সুখ-সমৃদ্ধি ও শপলতার কামনা নিয়ে ব্রতোৎসবের সঙ্গে বস্ত্র, গয়না, অস্ত্র-শস্ত্র তৈরি, কেনা ও রাখা হয়। নতুন জমি কেনা, বাড়ি, সংস্থার প্রবেশ এই তিথিতে করা শুভ বলে মনে করা হয়। এদিন গৌরীর পুজো হয়। সধবা স্ত্রী ও কন্যারা গৌরী পুজো করে মিষ্টি, ফল ও ভেজা ছোলা বিতরণ করেন, গৌরী-পার্বতীর পুজো করে ধাতু বা মাটির কলসিতে জল, ফল, ফুল, তিল, অন্ন ভরে দান করা উচিত।
(এই সকল তথ্য সম্পূর্ণ জ্যোতিষ শাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল)
খুশির উৎসব ইদ–উল–ফিতর, এক নজরে জেনে নিন এই উৎসবের তারিখ, তাৎপর্য ও ইতিহাস