প্রসঙ্গ বিজেপি জিতলে দায় কার, কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের জোট-প্রস্তাব কতটা সমীচিন
প্রসঙ্গ বিজেপি জিতলে দায় কার, কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের জোট-প্রস্তাব কতটা সমীচিন
উত্তরপ্রদেশে ভোটে রয়েছে, ভোট রয়েছে পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড-সহ মণিপুরেও। তবু ভারতের সৈকত-রাজ্য গোয়া নিয়ে এবার বেশি মাতামাতি। গোয়ার রাজনৈতিক সমীকরণ যেন গোটা ভারতের সমীকরণকেই ইঙ্গিত করতে শুরু করেছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশ ছাপিয়ে গোয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে।
বিরোধী ঐক্যের যায় যায় অবস্থা
আসলে গোয়ায় এবার বিজেপি বনাম কংগ্রেসের যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়েছে তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টি। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল গোয়ায় ঢুকে কংগ্রেসকে ভাঙন ধরানোর পরই এই রাজ্যকে নিয়ে আন্দোলিত হচ্ছে পুরো ভারতের রাজনীতি। তৃণমূল ভিন রাজ্যে পা রাখতে গিয়ে গোয়ায় কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে আঘাত করতেই বিরোধী ঐক্যের যায় যায় অবস্থা হয়ে গিয়েছে। তাতেই বেধেছে গোল।
জোট খারিজ কংগ্রেসের, গাত্রদাহ তৃণমূলের
গোয়ার নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে গিয়েছে। মাস ফুরোলেই গোয়ায় ভোট। তার আগে তৃণমূল গোয়ায় পা দিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে সংগঠন গড়ে তুলেছে। ভোটের মুখে এসে তারা আবার কংগ্রেসকে জোট প্রস্তাব দিয়েছে। স্বভাবতই সেই জোট প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে কংগ্রেস। তাতেই আবার গাত্রদাহ শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের তরুণ-তুর্কি নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
গোয়ায় জোট নিয়ে কংগ্রেসকে তির অভিষেকের
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের মুখে গোয়ায় গিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, কংগ্রেস জোট প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। এবার যদি গোয়ায় বিজেপি জেতে, তার দায় কে নেবে? গোয়া কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক পি চিদম্বরমের কাছে জোট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব তিনি খারিজ করে দেন।
বিজেপি গোয়ায় জিতলে দায় কার, প্রশ্ন অভিষেকের
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়া সফরে গিয়ে এবার এক হাত নেন কংগ্রেসকে। তিনি সরাসরি পি চিদম্বরমকে দায়ী করেন কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট না হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বিজেপি গোয়ায় জিতলে দায় নিতে হবে চিদম্বরজিকেই। দায় বর্তাবে কংগ্রেসের উপরেই। তারা বিজেপিকে হারাতেই গোয়ায় এসেছেন। সে জন্যই গোয়ায় পা রেখে সংগঠন গড়ে কংগ্রেসকে জোট প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস তা মানল না।
কংগ্রেস আর তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতায় রাজি নয়!
উল্লেখ্য, তৃণমূল একুশের নির্বাচন জেতার পর বিরোধী ঐক্য নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিলেও হঠাৎ ভোলবদলে কংগ্রেসের সমালোচনা শুরু করে তৃণমূল। কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্বকেও ভাঙাতে শুরু করে। ত্রিপুরা-গোয়াকে পাখির চোখ করে এগোতে গিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে বিরোধী শক্তির মধ্যেই বিভাজন ঘটিয়ে দেয় তৃণমূল। এই সমীকরণের আদতে লাভ হবে বিজেপির, তা বুঝবে অজ্ঞানও। সেইমতোই কংগ্রেস আর তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতায় রাজি হয়নি।
গোয়ার প্রাদেশিক নেতৃত্বের বাধায় জোট-ভঙ্গ
গোয়া নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে জোট প্রস্তাব এলে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ও গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাই হয়। কিন্তু শেষে গোয়ার প্রাদেশিক নেতৃত্ব বাধার সৃষ্টি করে জোট গড়ার উদ্যোগে। আসলে তাদের যুক্তিও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
তৃণমূলের সঙ্গে নয়, কংগ্রেস নিজের মতোই চলবে গোয়ায়
গোয়া প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল এ রাজ্যে পা দিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে বিজেপির সুবিধা করে দিতে চেয়েছে। এখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রস্তাব দিয়ে নামেই বিজেপি বিরোধিতা করতে চাইছে। আসলে বিজেপিকে জেতানোই তাদের উদ্দেশ্য। যে দল গোয়ায় পা দিয়ে কংগ্রেসকে ভাঙল তাদের সঙ্গে পথ চলা মানে বাকি কংগ্রেস নেতৃত্বকে অপমান করা। তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোট নয়, কংগ্রেস তাদের মতোই চলবে গোয়ায়।
তৃণমূল এসেছে বিজেপিকে জেতাতে, বুঝেছে গোয়া
কংগ্রেসের বিশ্বাস, তারা একাই গোয়ায় বিজেপিকে হারাতে পারবে। কারণ গোয়ার মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা গোয়ায় বিজেপির পতন চাইছে। বিজেপির শাসনে গোয়ার মানুষ তিতিবিরক্ত। তারা চায় পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন প্রত্যাশী গোয়াবাসী কংগ্রেসকেই বেছে নেবে বিকল্প হিসেবে। তাঁরা ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন, তৃণমূল এসেছে গোয়ায় বিজেপিকে জেতাতে। আম আদমি পার্টিও তাই। কিন্তু গোয়ার মানুষ এবার আর ভুল করবে না।
বিজেপি কংগ্রেসের সঙ্গে সেটিং করেছে, অভিযোগ অভিষেকের
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকেই ভোট দেওয়া। গত নির্বাচনেই দখা গিয়েছে গোয়ার মানুষ কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তারা সরকার গড়ার কোনও চেষ্টাই করেনি। গোয়ায় বিজেপিকে সরকার চালাতে দিয়েছে পাঁচ বছর। এবারও বিজেপি কংগ্রেসের সঙ্গে সেটিং করেছে। তাই তৃণমূল এসেছে গোয়াকে বিজেপির হাত থেকে রক্ষা করতে। এখন গোয়ায় যদি বিজেপি জেতে তবে দায় কংগ্রেসের।