একাকীত্ব ও হতাশা থেকে মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত রাগ, দাবি রিপোর্টের
একাকীত্ব ও হতাশা থেকে মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত রাগ, দাবি রিপোর্টের
অল্প বিস্তর সকলের রাগ হয়। রাগ হয় না এমন মানুষ দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনারা কি জানেন অতিরিক্ত শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত রাগের জেরে শারীরবৃত্তীয় ও জৈবিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন হয়। মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। যার ফলে মনঃসংযোগ কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাগ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দুটো কারণেই হয়। বাহ্যিক কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা উদাহরণ দিয়েছেন যদি নির্দিষ্ট কোনও কারণে রাগ হয়, তাকে বাহ্যিক কারণ বলা যেতে পারে। আবার যদি কোনও পরিস্থিতি বা পরিবেশের কারণে রাগ হয়, সেযানে নির্দিষ্ট কোনও কারণ থাকে না, তাক আভ্যন্তরীণ কারণ বলা যেতে পারে।
রাগ নেতিবাচক আবেগ
সফদরজং হাসপাতালের চিকিৎসক যুগল কিশোর বলেছেন, রাগ হল একটি নেতিবাচক আবেগ। যা নিজের পাশাপাশি অন্যকেও ক্ষতি করে। জীবনে প্রবল চাপ, অসন্তুষ্টি থেকে মনের মধ্যে রাগ হতে থাকে। সেই রাগ থেকে মানুষ অনেক সময় আক্রমণাত্মক ব্যবহার করে। তিনি জানিয়েছেন, আধুনিক জীবনযাত্রার মান দ্রুত পাল্টাচ্ছে। সেখানে অনেকটা জায়গা করে নিচ্ছে বিচ্ছিন্নতা, প্রতিযোগিতা। পরিবারিক বন্ধনেও আজকাল ফাঁক দেখা যাচ্ছে। মানুষ সামজিকভাবে যোগাযোগ অনেক সময় কাজের চাপে বা পরিস্থিতির চাপে কমিয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব সাধারণ মানুষের মনের ওপর পড়ছে। যার জেরে সাধারণ মানুষের রাগের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে বলে তিনি মনে করছেন।
দেশের তরুণ সমাজ আক্রমণাত্মক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে
চিকিৎসক যুগল কিশোর জানিয়েছেন, নিজের সম্পর্কে অসচেতনা অনেক সময় রাগবৃদ্ধির কারণ। অনেক ক্ষেত্রে যুবকরা প্রশিক্ষণতার অভাব নিয়েই কর্মজগতে ঢুকে যায়। কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে রাগ বাড়তে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন সিনেমায় রাগ, আক্রমণাত্মক ব্যবহারকে ইতি বাচক হিসেবে দেখানো হয়। যার জেরে যুব সম্প্রদায়ের একাংশ আক্রমণাত্মক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
শিক্ষা রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
চিকিৎসক যুগল জানিয়েছেন, একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েদের আক্রমণাত্মক ব্যবহার অনেকটা কম। অন্যদিকে, কো-এড স্কুল অর্থাৎ যেখানে ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেন, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে আক্রমণাত্মক ব্যবহার অনেকটা বেশি। আবার শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে বলেও চিকিৎসক যুগল জানিয়েছেন।
নিয়ন্ত্রিত রাগের ইতিবাচক ভূমিকা
ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন পরিচালক চিকিৎসক নিমেশ দেশাই বলেছেন, যতক্ষণ রাগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, ততক্ষণ রাগ কোনও নেতিবাচক আবেগ নয়। সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে, এটি অত্যন্ত কার্যকর আবেগ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। রাগ বৃদ্ধি অনেকটা হতাশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। হতাশা নানা কারণে মানুষের জীবনে আসতে পারে। দ্রুত বিশ্ব পাল্টাচ্ছে। যার ফলে বিশ্বে সাধারণ মানুষের চাহিদা পাল্টাচ্ছে। অপূর্ণ চাহিদা থেকে হতাশা জন্ম নিচ্ছে। উচ্চাকাঙ্খা অনেক সময় হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।
হতাশা থেকে রাগ
চিকিৎসক নিমেশ দেশাই বলেন, বর্তমানে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। যার জেরে হতাশা প্রকাশের কোনও জায়গা নেই। মানুষ একাকীত্ব অনুভব করে। আর হতাশা মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সেখান থেকেই অনেক সময় রাগ আসতে পারে। তিনি মনে করেন, যদি হতাশা প্রকাশের একটা জায়গা থাকে, সেক্ষেত্রে হতাশাকে কম করা সম্ভব হয়। যার জেরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
কিশোর কিশোরীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা
এইমসের তরফে দিল্লিতে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে দক্ষিণ পূর্ব দিল্লির কিশোর-কিশোরীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে ১৫-১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হতাশার হার সব থেকে বেশি। মোট ৪৯১ জন কিশোর-কিশোরী এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। দিল্লিতে সেই সমীক্ষায় উদ্বেগজনক ফলাফল পেয়েছিলেন এইমসের বিশেজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা আর উদ্বেগ বাড়ছে।