এবারও অধরা এপার-ওপার বাংলার মিলন, কিন্তু ইছামতির বুকে মিলল মানুষের আবেগ
ইছামতী নদীতে ভাসান অনুষ্ঠানের সময়, কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মধ্যেই দুই বাংলা কাছাকাছি এল।
এবছরের মতো শেষ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। মা ফিরছেন কৈলাসে৷ রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চলবে ভাসানপর্ব। তবে এদিন শুক্রবার রাজ্যের বেশিরভাগ জায়গাতেই সাড়ম্বরে পালিত হল মায়ের বিদায় পালা। মা যেতে যেতে এক করে দিয়ে যায় সমগ্র জাতি, ধর্ম, বর্ণকে। বিসর্জনের দিন এক করে দিয়ে যায় দু'টি দেশকেও। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই বিসর্জনকে ভিত্তি করে ইছামতির বুকে মিটছে না সীমান্তের রেখা। এবারও বিসর্জনে আলাদা-আলাদা ভাবেই দুই বাংলার বিসর্জন হল। তবু, এই বিসর্জনকে ঘিরে আটকে রাখা গেল না দুই বাংলার মানুষের আবেগ। ইছামতির বুকে বিসর্জন দেখতে দুই বাংলার নদীর পারেই উপচে পড়ল জনস্রোত। গোটা পরিস্থিতির উপরে কড়া নজরদারি রেখেছিল দুই বাংলারপুলিশ।
সাধারণত দুর্গাপুজোয় দশমীতে উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে ইছামতির বুকে দুই বাংলার ঠাকুর একসঙ্গেই বিসর্জন দেওয়া হত। কিন্তু, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের অভিযোগে আট বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুই বাংলার মিলন। আগ দুই বাংলার প্রতিমা নৌকায় চাপিয়ে একে অপরের জলসীমায় ঢুকে পড়ে বিসর্জন দিত। কিন্তু, এখন স্থল ও জলসীমানা অতিক্রম করতে পারে না কোনও দেশই। যার জন্য এখন-ওপার বাংলার পুজো কমিটিগুলি নৌকায় নিজেদের দেশের জনসীমানার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়। মাঝে থাকে বিএসএফ, বিজিবি আর পুলিশের কড়া নজরদারি।
২০১১ পর্যন্ত এই এই বিসর্জনের দিনে কোনও পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়াই মিলেমিশে এক হয়ে যেত দুই বাংলা। কিন্তু ২০১১তে প্রশাসনের শিথিলতায় প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটে ভারত সীমান্তে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই বছরই ইছামতীর ভাসান দেখতে এসে নদীতে নৌকা উল্টে মৃত্যু হয় যাদবপুরের সুজয় দাস নামে এক গবেষকের।
ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়াও অনুপ্রবেশের জেরেই চুরি ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে বলেও ছিল অভিযোগ ওঠে। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিসর্জনের দিন দুই বাংলার মিলন। দু দেশের প্রশাসন ঠিক করে নেয় ইছামতীর বুকে বিসর্জন হবে, তবে কেউ কারও সীমানা লঙ্ঘন করতে পারবে না। সেই থেকে ইতিহাসে হয়ে যায় দীর্ঘ ২৫০- ৩০০ বছরের ঐতিহ্য।