পৃথিবীর এমন কিছু বিপদসঙ্কুল রেলপথ যা দেখলে চমকে যাবেন
ভারত সহ পৃথিবীর এমন কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে কিছু জায়গায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্গম। বিপদসঙ্কুল সেই সমস্ত জায়গা কোথায় কোথায় রয়েছে তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। গণ পরিবহণ হোক অথবা পণ্য পরিবহণ, রেলের জুড়ি মেলা ভার। রেলপথ আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এসেছে সন্দেহ নেই। ভারতের মতো দেশে বিশেষ করে এখনও সংখ্যাধিক্য মানুষ রেলেই ছোট থেকে দূরপাল্লার সফর করেন। ভারত সহ পৃথিবীর এমন কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে কিছু জায়গায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্গম। বিপদসঙ্কুল সেই সমস্ত জায়গা কোথায় কোথায় রয়েছে তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
মায়েকলং রেলওয়ে মার্কেট, থাইল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রেললাইনের মধ্যে অন্যতম থাইল্যান্ডের মায়েরলং রেলওয়ে মার্কেট। বাজার এলাকার একেবারে বুক চিরে রেললাইন চলে গিয়েছে। থাইল্যান্ডের অন্যতম বড় ও তাজা সি-ফুড বাজার এটি। যখনই এই লাইনে ট্রেন আসার সময় হয়, তখন বাজার লাইন থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। ট্রেন চলে গেলে ফের লাইনে বাজার বসে পড়ে।
বার্মা রেলওয়ে, থাইল্যান্ড
বার্মা রেলওয়ে মৃত্যুফাঁদ বলেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের সম্রাটরা এই রেলওয়ে তৈরি করেন। ২৫৮ মাইল লম্বা এই রেলওয়ে তৈরি করতে গিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল।
ভারতীয় রেল
ভারতের সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। নানা এলাকায় দুর্গম রেলপথ রয়েছে এদেশে। এছাড়া প্রতিবছর ২৫ হাজার মানুষ ভারতে রেলের কারণে মারা যান।
নেপাল রেলওয়ে
পাহাড়ি দেশ নেপালে খুব ছোট হলেও রেলপথ রয়েছে। এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রেল যাতায়াত অত্যন্ত ভয়ের সন্দেহ নেই। নেপালে মোট ৩৭ মাইল রাস্তায় রেলপথ রয়েছে। এবং দিনে ২টি করে ট্রিপ হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে
এশিয়ার দেশগুলিতে ট্রেনের ছাদে চেপে সফর করা খুব কমন ব্যাপার। ট্রেন কম ও এত বেশি যাত্রী পরিবহণ করতে হয় যে এমন যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি হলেও সরকারের তরফে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সেভাবে নেওয়া হয় না। বাংলাদেশে বহুমানুষ এভাবে যাতায়াত করেন এবং অনেকে মারাও যান।
ইকুয়েডর রেলওয়ে
দ্য নারিজ দেল দায়াবলো রেলপথ ইকুয়েডরে রয়েছে। এই রেলপথ অত্যন্ত দুর্গম। তা তৈরি করা শুরু হয় ১৮৯৯ সালে। রেলপথ তৈরি করতে গিয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারান। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১১৮৪১ ফুট। ভয়ঙ্করতম রেলপথের মধ্যে এটি অন্যতম।
পাম্বান সেতু, ভারত
রামেশ্বরমে পাম্বান সেতু ৬৭৭৬ ফুট দীর্ঘ। সমুদ্রের উপরে তৈরি এই সেতু দিয়ে ভারতীয় রেল যাত্রা করে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এই এলাকায় প্রচণ্ড জোরে বাতাস বয়। যার ফলে রেল চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
য়ুকোন রুট, আলাস্কা
আলাস্কার ভয়ঙ্কর হোয়াইট পাস ও য়ুকুন রুটে রেল যাত্রাও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তিন হাজার ফুট উঁচুতে ১৮.৬ মাইলের একটি স্টিলের ব্রিজ রয়েছে। এটি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম কান্টিলিভার ব্রিজ ছিল। লন্ডিকে গোল্ড রাশ থেকে গোল্ডফিল্ডস পর্যন্ত রাস্তা যেতে ১৮৯৮ সালে তা তৈরি শুরু হয়, কাজ শেষ হয় ১৯০৬ সালে।
পিলাটাস রেলওয়ে, সুইজারল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে সরু কগহুইল রেলওয়ে রয়েছে সুইজারল্যান্ডে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় এই রেলপথে যাত্রা করলে প্রাণ হাতে নিয়ে থাকতে হবে সন্দেহ নেই।
কুরান্দা রেলওয়ে, অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম রেলপথের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়ার এই কুরান্দা রেলওয়ে। ১৮৮২ সালে খনির কাজে সুবিধায় জন্য এর নির্মাণ শুরু হয়। বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে নির্মাণকাজের সময়ে।
গোকটেইক ভায়াডাক্ট, মায়ানমার
এই ব্রিজটি ১৯০০ সালে নির্মাণ শেষ হয়। ভয়ঙ্কর ব্রিজটির মোট দৈর্ঘ্য ২২৬০ ফুট।
বারনিনা ও অ্যালবুলা রেলওয়ে, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের বারনিনা ও অ্যালবুলা রেলওয়ে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে।
জেলমারবান ফুনিকুলার, সুইজারল্যান্ড
ফিতের মতো রেলপথ অত্যন্ত দুর্গম। বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে সরু রেলপথ এটি। এই পথে রেল চড়লে মনে হবে রোলার-কোস্টার রাইড চড়ানো হচ্ছে।
টোকেন বিনিময়
এখনও অনেক এশীয় দেশে রেল যোগাযোগ ভালো করে গড়ে ওঠেনি। সিগন্যালিং ব্যবস্থা ভালো নয়। ইলেকট্রনিক সিগন্যাল না থাকায় এখনও টোকেন দিয়ে রেল যাতায়াত চালানো হয়।
ত্রেন আ লাস নুবস, আর্জেন্তিনা
১৩৮০০ ফুট উঁচুতে এই রেলপথে সফর করা যায়। এত উঁচুতে হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।
উত্তর বরনেও রেলওয়ে, মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার অন্যতম ভয়ঙ্কর উত্তর বরনেও রেলওয়ে ১৮৯৬ সালে নির্মাণ শুরু হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তবে এখন মাত্র ৮৩ মাইল পথ অবশিষ্ট রয়েছে। যা দিয়ে মূলত তামাকজাত পণ্য পরিবহণ হয়।
কিংঘাই-তিব্বত রেলওয়ে, চিন
১২১৫ মাইল দীর্ঘ এই রেলপথ পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চিন ও তিব্বতকে সংযুক্ত করেছে। দুর্গম এই এলাকায় রেল যোগাযোগ অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল।