ভারতের কয়েকটি গুহামন্দির, যার ভিতরে কথা বলে রহস্য আর ইতিহাস
বেড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকেই পছন্দ করেন, ক'টাদিনের নিখাদ আরাম, খাওয়া দাওয়া, আর স্বস্থ্যোদ্ধার। আবার অনেকেই বেড়ানো বলতে বোঝেন নতুন নতুন জায়গা , সেখানের মানুষজন, ইতিহাস বা তার সংস্কৃতিকে আবিষ্কার করা।
বেড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকেই পছন্দ করেন, ক'টাদিনের নিখাদ আরাম, খাওয়া দাওয়া, আর স্বস্থ্যোদ্ধার। আবার অনেকেই বেড়ানো বলতে বোঝেন নতুন নতুন জায়গা , সেখানের মানুষজন, ইতিহাস বা তার সংস্কৃতিকে আবিষ্কার করা। নতুন জায়গা চিনতে বা ঘুরতে ভালো লাগে অনেকেরই।
[আরও পড়ুন:রঙবেরঙের বৌদ্ধ উৎসবে যোগ দিতে হলে বেড়াতে যেতে পারেন দেশের এই বৌদ্ধ-শহরগুলিতে]
যে ভ্রমণবিলাসীরা নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন বা জায়গার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী, তাঁদের জন্য় ভারতের কয়েকটি গুহা তথা গুহা মন্দিরের সন্ধান রইল।
[আরও পড়ুন:ভিড় থেকে অনেক দূরে পুজোয় বেড়াতে যেতে পারেন দেশের এই জায়গাগুলিতে, দেখুন ফোটো ফিচার]
বাদামি
কর্ণাটকের চালুক্য রাজাদের আমলে গড়ে ওঠা এই গুহাগুলিতে খোদাই করে যেভাবে মন্দির তৈরি করা হয়েছে, তাতে সেই যুগে বাস্তু নির্মাণ কাজের বিষয়ে চালুক্য় রাজাদের আকর্ষণ কতটা গাঢ় ছিল তা বোঝা যায়। এই গুহা দেখবার জন্য় বেশ ভিড় হয় বাদামিতে। প্রায় ষ্ষ্ঠ ও সপ্তম খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এই গুহা নির্মিত হয়েছে বলে দাবি ঐতিহাসিকদের। মোট ৪ টি গুহা রয়েছে এই জায়গায়। ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টার রাস্তা বাদামি। গাড়িতে না গেলে,যশবন্তপুর স্টেশন থেকে বীজাপুর এক্সপ্রেসে বাদামি যাওয়া যেতে পারে।
অজন্তা ইলোরা
সহ্যার্দ্রি পর্বতমালায় অজন্তা-ইলোরার গুহা সর্বজন বিদিত। মোট ২৯ টি গুহা সমৃদ্ধ এই জায়গায় খ্রীষ্টপূর্বাব্দ দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শতকে নির্মাণ করা হয় এই গুহাগুলির স্থাপত্যকার্য। এগুলিতে পাওয়া ছবি ও ভাস্কর্য তৎকালীন বৌদ্ধ ধর্মীয় শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। অজন্তার দেওয়ালের চিত্রগুলিতে বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
এলিফ্যান্টা
মুম্বই থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এলিফ্যান্টা গুহা। এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ ঘরপুরি দ্বীপের একেবারে প্রধান ভাগে অবস্থিত। পর্তুগিজরা মুম্বাই পোতাশ্রয়ে অবস্থিত এই দ্বীপের নামকরণ করেছিল এলিফ্যান্টা দ্বীপ। মূলত , শিবের নানা মূর্তির আদলে এই গুহায় স্থাপত্যকার্য গড়ে তোলা হয়।
টাবো
হিমাচল প্রদেশের লাহুল ও স্পিতি জেলার স্পিতি নদীর উপর একটি ছোট শহর । এই শহরটি রিকং পিও ও কাজা -র মাঝে অবস্থিত। একটি বৌদ্ধ মঠ শহর ঘিরে রয়েছে যা কিনা কিংবদন্তি অনুসারে হাজার বছরের বেশি পুরানো। তেনজ়িন গিয়াৎসো ,চতুর্দশ দলাই লামা এই টাবো বৌদ্ধমঠেই অবসর গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যেহেতু তিনি মনে করেন টাবো বৌদ্ধমঠটি অন্যতম পবিত্র বৌদ্ধমঠ । পাহাড়ের গুহা কেটে এই বৌদ্ধ মঠ তৈরি হয় বলে জানা যায়। গুহাগুলির মধ্য়ে এখনও বৌদ্ধ প্রার্থনা আয়োজিত হয়।
উদয়গিরি
মধ্যপ্রদেশের বিদিশার কাছাকাছি অবস্থিত এই গুহা। খ্রীষ্টপূর্বাব্দ চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে গুপ্ত বংশের রাজারা এই গুহার স্থাপত্যকলা নির্মাণে উদ্যোগি হন। মোট ১৪ টি গুহা রয়েছে এখানে। সবচেয়ে বিখ্যাত এখানের বিষ্ণু মূর্তি। যার খোদাই শিল্প অনবদ্য।
মাওয়াসমি
মেঘালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমনিতেই মন মাতানো। তার ওপর মাওসমি গুহা যেন আর রহস্যময়তা তৈরি করে দিয়েছে এই সৌন্দর্যে। প্রকৃতির নিয়মেই এই গুহা এমনভাবে তৈরি যে , তা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। স্ট্যালাকটাইট স্ট্যালাগমাইটের এই গুহা মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে গঠিত। যতটা রোমাঞ্চ রয়েছে এই গুহা বেড়াতে যাওয়ায়, ততটাই রহস্য জুড়ে রয়েছে গোটা এলাকায়।
ভিমবেটকা
মধ্যপ্রদেশের ভিমবেটকায় বিন্ধ্য পর্বতের ওপর অঙ্কিত প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছে। এটাই ভারতের সবচেয়ে পুরনো সভ্যতার নিদর্শন। এটি ২০০৩-এ অন্যতম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে নির্বাচিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের পদার্পণের প্রথম চিহ্ন উদ্ধার করা গেছে এখান থেকে, এবং সেই সূত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রস্তর যুগের সূচনার সময়কালও এই প্রস্তরক্ষেত্রে প্রাপ্ত নিদর্শন অনুযায়ীই নির্ণয় করা হয়। ভোপাল থেকে ৪৫ কিলোমাটারের দূরত্বে রয়েছে ভিমভেটকা গুহা।
দুঙ্গেশ্বরী গুহা মন্দির
বোধগয়া থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে দুঙ্গেশ্বরি গুহা। এখানে ৩ টি বৌদ্ধ গুহা মন্দির রয়েছে। মনে করা হয়, এখানে অনেক কাল সময় কাটিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধের একটি সোনালী মূর্তি এখানে প্রতিষ্ঠিত। যে মূর্তি নিজেই অমোঘ রহস্যময় সৌন্দর্যের প্রতীক।